• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
দুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমানোর আশ্বাস ব্যবসায়ীদের

ছবি : সংগৃহীত

পণ্যবাজার

প্রশাসনের হস্তক্ষেপ

দুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম কমানোর আশ্বাস ব্যবসায়ীদের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০১৯

দেশের সবচেয়ে বড় নিত্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কেনা দামের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়। এর পেছনে জড়িত কক্সবাজারের টেকনাফ ও চট্টগ্রামের ১৫ জন ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। গত সোমবার এমন খবর প্রকাশের পরের দিন গতকাল মঙ্গলবারে পেঁয়াজের দাম দুদিনের মধ্যে কমিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। 

গতকাল খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানিয়েছেন, খুচরা পর্যায়ে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে নেমে আসবে। পাশাপাশি কাগজ ছাড়া আমদানিকারকদের কাছ থেকে আর পেঁয়াজ না কেনার অঙ্গীকারও করেছেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আড়তদারদের সঙ্গে সভাশেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তার আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের যৌথ অনুসন্ধানে ওই বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে। এসব ব্যক্তি পেঁয়াজ আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আড়তদার।

এদিকে পেঁয়াজের বাজার তদারক করতে আরো একটি মনিটরিং টিম গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গতকালের সভায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সেলিম হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম সভায় অংশ নেন।

সভা শেষে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ বলেন, ২-৩ দিন পরই ক্রেতারা খুচরা পর্যায়ে ১০০ টাকার ভেতরে পেঁয়াজ কিনতে পারবে। আড়তদাররা যাতে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করতে পারে এবং কাগজের মাধ্যমে পেঁয়াজ কিনতে পারে সেজন্য আমরা আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে উদ্যোগ নেব।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সেলিম হোসেন বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে যেন দাম ১০০ টাকার নিচে থাকে সে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও কাগজ ছাড়া ব্যবসা করবেন না এ কমিটমেন্ট দিয়েছেন তারা। এখন এসব মনিটর করা হবে। যদি ব্যতিক্রম হয় তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে তিনি জানান, কারসাজি করা টেকনাফের আমদানিকারক ও এজেন্টদের তালিকা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। সেখানকার ইউএনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এরপরেও এখন নিয়মিত বাজারে মোবাইল টিম যাবে। বিশেষ মনিটরিং টিম করা হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে।

অন্যদিকে শিগগিরই পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ উঠবে আর ভারতের পেঁয়াজও চলে আসবে। তখন দাম ৪০ টাকার নিচে নেমে যাবে। এ সময়ের মধ্যে যারা বড় ব্যবসা করতে চাইবে তারা ক্ষতির মুখে পড়বে। সেটা বুঝতে পেরে সিন্ডিকেটকারীরাও এখন দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এদিকে মিয়ানমারের পেঁয়াজে ২০০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে জানিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে বলে ধারণা করছি। ৪২ টাকায় কিনে যদি ৯৫ টাকায় বিক্রি করে তাহলে কেজিতে ৫৩ টাকা বেশি। শুধু আমদানিকারকরাই এভাবে ১৫৯ কোটি নিয়ে যাচ্ছে। এরপর খুচরায় আসতে আসতে এ অঙ্ক প্রায় ২১০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।

অন্যদিকে সারা দেশের পেঁয়াজের সিন্ডিকেট গত চার মাসে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে প্রায় তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি এমন তথ্য দিয়েছিল ভোক্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটির (সিসিএস)। তাদের তথ্যে ১২২ দিনে মোট ২৪ বার পণ্যটির দাম ওঠানামা করেছে। চার মাসে পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ৪০০ গুণ। আর গত এক মাসে দৈনিক ৫০০ কোটি টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ভারত রপ্তানি বন্ধের পর থেকে পেঁয়াজের দারুণ কদর। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আগাম পেঁয়াজ তুলছেন চাষিরা। তবে ওইসব মুড়িকাটা পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামেই। অন্যদিকে মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বড় তিনটি চালান শিগগিরই দেশে আসছে না। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কমপক্ষে দেড় থেকে দুই সপ্তাহ। ফলে শিগগিরই নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি মানুষের ক্রয় সাধ্যের মধ্যে ফিরছে না।

দেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ওই বছর আমদানি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার টন। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, দেশে এবার পেঁয়াজের মোট সরবরাহ হয়েছে ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার টন। বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। সেই হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ৬৬ হাজার টন। এতে দাম কম থাকারই কথা, যদিও তা হয়নি। মৌসুমের শেষে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দেশে পেঁয়াজ নিয়ে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads