• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না দ্রব্যমূল্য

প্রতীকী ছবি

পণ্যবাজার

বাজারে অরাজকতা

অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না দ্রব্যমূল্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০২০

পণ্যসংকট না থাকলেও করোনা ভাইরাস আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বাজারে। এ পরিস্থিতিতে সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বাজারে শুরু হয়েছে ভয়াবহ অরাজকতা। গতকালও (শনিবার) পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

তবে রাজধানীসহ সারা দেশের বাজারগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কিছু অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এতে জরিমানার পাশাপাশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, এমনকি কারাদণ্ডও হয়েছে বেশ কয়েকজন বিক্রেতার। আর অভিযান চলাকালে ওই সব বাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। করোনা ভাইরাস আতঙ্ককে পুঁজি করে পণ্য মজুত করেছেন এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন আড়তে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় পেঁয়াজ ও আলু বেশি দামে বিক্রি করার অপরাধে ৪৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানাসহ পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

অভিযান পরিচালনাকারী র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘গতকাল ভোর থেকে যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন আড়তে অভিযান চলে। এ সময় পাইকারি ২০-৩৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৬৫-৭০ টাকায়। অভিযানের খবর পেয়ে সেটা আবার ৪০ টাকায় নেমে আসে। এ ছাড়া ওই সব আড়তে ১২-১৪ টাকার আলুর দাম উঠেছিল ২২-২৫ টাকায়। এ সময় পেঁয়াজ ও আলুর ৩১টি আড়তে অভিযান চালিয়ে ৪৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।’

সারোয়ার আলম বলেন, ‘এ ছাড়া মজুত ও দরবৃদ্ধিতে জড়িত পাঁচজনকে ৬ মাস থেকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযান চলবে।’

অন্যদিকে গতকাল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) পাঁচটি টিম রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছে। এ ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল মিরপুর ও শাহআলী এলাকায় অভিযান চালান গতকাল। অভিযানে দেখা যায়, শাহআলী এলাকার মাহিম রাইস এজেন্সি ও তাইয়্যেবা রাইস এজেন্সিতে বস্তাপ্রতি ৮০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে চাল বিক্রি হচ্ছিল। এ ছাড়া ওই এলাকায় জিসান বাণিজ্যালয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকায় কিনে বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকা। পরে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। এ ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করার অপরাধে এলাকার সাতটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ৪৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অপর একটি অভিযানে অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার পুরান ঢাকার লালবাগে এক অসাধু পাইকারি চাল ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় ওই ব্যবসায়ীর দোকান সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বাস ব্র্যান্ডের এক বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চাল ২ হাজার ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন ওই ব্যবসায়ী। তিনি ২ হাজার ৫৫০ টাকা দরে ওই চাল কিনেছিলেন বলে দাবি করলেও কোনো ভাউচার দেখাতে পারেননি।

অন্যদিকে অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহমুদা আক্তার অভিযানে ঢাকা মহানগরীর শান্তিনগর কাঁচাবাজার, খিলগাঁও তালতলা কাঁচাবাজার, এজিবি কলোনি কাঁচাবাজার এলাকায় চাল, ডাল ও পেঁয়াজের মূল্য বেশি রাখা এবং মূল্যতালিকা না রাখার অপরাধে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছেন। ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মাসুম আরেফিন ও বিকাশ চন্দ্র দাস কাওরান বাজার, বনশ্রী ও গুলশান এলাকায় বাজার তদারকিমূলক অভিযান পরিচালিত করেন। এ সময় বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।

প্রসঙ্গত, বাজারে এখন প্রতি কেজি চাল কিনতে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ৫ থেকে ৮ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। সম্ভবত দেশে এর আগে এত অল্প সময়ে চালের দাম কখনো এতটা বাড়েনি। এ ছাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে প্রতি ডজন ডিম ২০ থেকে ২৫ টাকা, ডাল প্রতি কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা, আলু ৯ থেকে ১০ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, রসুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আদা ৪০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে এমন পণ্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে চিনি, তেল, লবণ, ছোলা ও আটা।

অন্যদিকে মাছ, মুরগি, সবজির দামও আগের তুলনায় বেশ বেশি। সঙ্গে বিদেশি শিশুখাদ্য ও ডায়াপারের দামও বাড়তি। সব ধরনের জীবাণুনাশকের দাম তো আগেই বেড়ে গেছে। করোনার কারণে ওই সব পণ্যও এখন বেশ প্রয়োজনীয়। বাজারের এই অরাজক পরিস্থিতিতেও হুজুগে অতিরিক্ত দাম দিয়ে এসব পণ্য কিনতে দেখা গেছে অনেককে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads