• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
৫১ বছরে পদ্মায় বিলীন ২৫৬ বর্গমাইল

পদ্মায় সর্বস্ব হারানো হতভাগা এক ব্যাক্তি

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

৫১ বছরে পদ্মায় বিলীন ২৫৬ বর্গমাইল

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নদীর স্বভাবই বয়ে চলা। বহমান স্রোতধারা কখনো যায় সোজা পথে, কখনো আঁকাবাঁকা। খরস্রোতা নদী চলার পথে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তীরবর্তী ভূমি। নদীগর্ভে বিলীন হয় কতশত জনপদ। দেশের অন্যতম প্রধান নদী পদ্মার স্রোতধারাও এমনি। গত ৫১ বছরে পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ২৫৬ বর্গমাইল জমি (প্রায় ৬৬ হাজার হেক্টর)। সম্প্রতি স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) আর্থ অবজারভেটরির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ভারতের গঙ্গা ও যমুনার সংযোগস্থল থেকে উৎপত্তি হয়ে পদ্মা বাংলাদেশ অংশের চাঁদপুরে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। গত ২১ আগস্ট প্রকাশিত নাসার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নদীটি আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হওয়ায় বিভিন্ন মোড়ে গতিপ্রবাহ বেড়ে নিয়মিত ভূমিধস ও ভাঙনের ঘটনা ঘটছে। এভাবে প্রতি বছর ভাঙতে ভাঙতে ১৯৬৭ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৬৬ হাজার হেক্টর বা ২৫৬ বর্গমাইলের বেশি এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হওয়া এই এলাকা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের সমান। স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে নাসার গবেষকরা বলছেন, গত তিন দশকে পদ্মার আকৃতি বেড়েছে; পরিবর্তন এসেছে গঠন ও অবস্থানে। পলিমাটির প্রভাবে যেমন নদীপাড়ের কৃষিজীবী লোকজনের উপকার হয়েছে তেমনি ভিটেমাটিও হারিয়েছেন অনেকে। বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইটের ছবিতে পদ্মা নদীর প্রস্থ, গভীরতা, গঠন ও আকারের পার্থক্য থেকে ভাঙনের পরিমাপ করেন। সব ছবি জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির শুষ্ক মৌসুমে তোলা।

নদীভাঙনের প্রধান দুটি কারণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রথমত, পদ্মা প্রাকৃতিক ও মুক্ত প্রবাহের নদী। এর তীরবর্তী এলাকায় বাঁধ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। ভাঙন প্রতিরোধে বিভিন্ন স্থানে বালির বাঁধ দেওয়া হলেও তা টেকসই নয়। দ্বিতীয়ত, পদ্মার দুই তীরে রয়েছে বিস্তৃত বালিভূমি, যা সহজেই ক্ষয়যোগ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, নদীর বাঁকের বাইরের দিকে সবচেয়ে বেশি ভাঙন হয়েছে। পানির প্রবাহে পরিবর্তন, জমাট মাটির নিচের দিকে ধাবিত হওয়া এবং নদী ও ভূমির সঙ্গমস্থলে গাছপালা ধুয়ে নিয়ে যাওয়া প্রভৃতি ঘটনা এর কারণ। পদ্মার মধ্যবর্তী অংশে তুলনামূলক কম ভাঙন হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা।

বিগত দশকগুলোতে পদ্মার ভাঙনের অন্যতম কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের ঘটনাও তুলে ধরেছেন। ১৯৫০ সালে ভূমিকম্পে ব্যাপক ভূমিধস হয়। নদীতে ড্রেজিং না করায় ওই বালুমাটি প্রায় ৫০ বছর ধরে পদ্মা দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে এই সময়ে পদ্মার বিভিন্ন অংশে পলি জমা ও আরেক অংশে বন্যা দেখা দেয়। ১৯৯৮ সালে ব্যাপক ভাঙন ও ভয়াবহ বন্যার কারণ হিসেবে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়াকে তুলে ধরা হয়েছে। বাঁধটি খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে স্মরণকালের অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়।

১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে ভাঙনের হার প্রতি বছর ১২ বর্গমাইলে পৌঁছে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আরো নিম্নগামী প্রবাহ ও বক্রগতির ফলে চর জানাজাত এলাকার কাছের জমি ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে নদীর রেখাচিত্র তীব্রভাবে বেঁকে যায়। বক্ররেখাটি ১৯৯২ সাল থেকে বিকশিত হতে শুরু করে, ২০০২ সালে এর পতন শুরু হয় এবং এর পর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

পদ্মা সেতু নির্মাণের পর নদীর পরিস্থিতি কেমন হবে- তারও একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা, নদীভাঙন সেতু নির্মাণে কিছুটা হুমকির সৃষ্টি করলেও এর ফলে ভূমি প্রকৃতপক্ষে স্থির হবে ও ভাঙন হ্রাস পাবে। প্রতিবেদনে অনেকাংশে পদ্মার ভাঙন কিছুটা কমার লক্ষ্মণ দেখা দিলেও তা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি বলে হুশিয়ার করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পদ্মার সর্বগ্রাসী রূপ দেখা যাচ্ছে। গত দুই মাসে অন্তত দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ভাঙন এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে উপজেলাটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads