সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকলেও নির্বাচনে সহিংসতায় আহতদের খবর রাখছেন না কেউ। নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণের সময় কক্সবাজারে বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় আহতদের বেশিরভাগই জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে অনেকের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও তা পাচ্ছেন না। এমনকি তাদের কোনো প্রার্থী বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কেউ দেখতে আসেননি।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আহতরা অনেকে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ সময় আলাপকালে রামু উপজেলার খুনিয়া পালং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শামসুল আলমের ছেলে দুদুমিয়া বলেন, নির্বাচনের দিন আমি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সহিংসতার শিকার হই। সেখানে কতিপয় সন্ত্রাসীরা আমাকে মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে এবং পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধর করে। এতে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে আত্মীয়স্বজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনলে আমি প্রাণে রক্ষা পাই। এখনো চিকিৎসাধীন আছি। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রার্থী বা প্রশাসনের কেউ আমাদের খোঁজখবর রাখেননি।
একই সময় চিকিৎসাধীন রামু কচ্ছপিয়া এলাকার মমতাজুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো দল করি না। সাধারণ ভোটার হিসেবে ভোট দিতে গিয়েছি কেন্দ্রে। তবে সেখানেই হামলার শিকার হয়েছি। এতে আমিসহ এলাকার অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। আমার অবস্থা বেশি খারাপ হওয়াতে আত্মীয়স্বজন আমাকে হাসপাতালে এনেছেন। আমার মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছি। ডাক্তার বলেছেন ভালো হতে সময় লাগবে। আরো উন্নত চিকিৎসা করা দরকার। কিন্তু হঠাৎ করে টাকার জোগাড় না থাকায় পারছি না। এ সময় চিকিৎসাধীন নুরুল হুদা, হোসেন আহামদ, এনামুল কবিরসহ অনেকে বলেন- আমরা ভোট দিতে গিয়ে সহিংসতার শিকার হয়েছি। ঘটনা যাই হোক এখন আমাদের উন্নত চিকিৎসা করা খুব জরুরি।
এ সময় আহত একজনের মা নাজমা বেগম বলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য সবাই পাগল, কিন্তু মাঝখানে বলি হচ্ছে আমাদের মতো গরিব মানুষের ছেলেমেয়েরা। ছেলে পায়ে, কোমরে আঘাত পেয়েছে। সবাই বলছে ঢাকা-চট্টগ্রামে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। জানি না টাকা কোথায় পাব।
পাশের সিটে চিকিৎসাধীন রামু গর্জনিয়া মাঝিরকাটা এলাকার ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. হানিফ বলেন, আমাদের কেন্দ্রে বিএনপি-জামায়াত ভোট ডাকাতি করতে চাইলে আমরা বাধা দিলে তারা আমাদের ওপর হামলা করে। পরে লোকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনেন। এ সময় তার পাশে চিকিৎসাধীন রামু উপজেলার খুনিয়া পালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী বদিউজ্জামানের ছেলে মমতাজ আহামদ বলেন, নির্বাচনের দুই দিন আগে ২৮ ডিসেম্বর তার ওপর হামলা করে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে তার মাথায় ২২টি সেলাই দিতে হয়েছে এবং পায়ে মারাত্মক আঘাতের ফলে এখনো পা মাটিতে বসাতে পারছে না। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেন।
এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনী ঘটনায় আহত হয়ে ১৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। আর ৮ জন ভর্তি আছে। তাদের যথানিয়মে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহীন আবদুর রহমান। জানা গেছে, নির্বাচনের দিন কক্সবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু ছিদ্দিক ওসমানী গুরুতর আহত হয়েছেন।