• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
বাঘাইছড়ির ঘটনা ‘পরিকল্পিত হামলা’

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে গত সোমবার ব্রাশফায়ারে ৭ জনকে হত্যা করা হয়

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

বাঘাইছড়ির ঘটনা ‘পরিকল্পিত হামলা’

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০১৯

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী কর্মীদের ওপর হামলা পরিকল্পিত। কাছ থেকে টার্গেট করেই গুলি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহের তীর ইউপিডিএফের দিকে। কারণ, ঘটনাটি ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঘটেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বাঘাইছড়ির সেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক গঠিত সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে কথা বলে যেটা আমরা বুঝতে পেরেছি এটা ‘প্ল্যানড অ্যামবুশ’ (পরিকল্পিত হামলা)। কাছ থেকে টার্গেট করেই গুলি করা হয়েছে। তবে আমরা সব তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

গত সোমবার পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কাজ শেষ করে বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদরে ফেরার পথে নয়মাইল এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন সাতজন। এ সময় আহত হন ১৬ জন। ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার বিভাগীয় কমিশনার সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এ ঘটনায় আহত এক পুলিশ সদস্য বাদী হয়ে গত বুধবার রাতে বাঘাইছড়ি থানায় অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনের নামে মামলা করেছেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত কমিটি সেদিন গাড়িবহরে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের (আনসার ও বিজিবি) সঙ্গে কথা বলেন। সেদিনের পুরো ঘটনা জানার চেষ্টা করেন। ঘটনার আগে ও পরের অবস্থা এবং সাজেকের ভোট কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হয়েছিল কি না, তাও জানার চেষ্টা করেন তারা।

এরপর তদন্ত কমিটির সদস্যরা বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সেই ঘটনায় আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি ঘটনার আদ্যোপান্ত শোনেন। চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। পরিদর্শনকালে কমিটির প্রধান দীপক চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, তারা ঘটনার সবদিকের খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন। কী ঘটেছিল, কীভাবে ঘটল, কারা এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, তাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যেই তদন্ত রিপোর্ট উপস্থাপন করা হবে। প্রয়োজন হলে আরো সময় চাওয়া হতে পারে বলেও জানান তদন্ত কমিটির প্রধান।

স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন, রাঙামাটি জেলা পরিষদ এবং আনসার-ভিডিপির প্রতিনিধি।

এদিকে বাঘাইছড়িতে এই হত্যাকাণ্ডের পর রাঙামাটি ও আশপাশের পাহাড়ি এলাকা জুড়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। কিন্তু অভিযানে দৃশ্যমান কোনো সাফল্য আসেনি। ব্রাশফায়ারে হতাহতের ঘটনায় ‘কিলার গ্রুপটিকে’ এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলটি পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ইউপিডিএফ এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে সন্দেহ নিয়েই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তবে পাহাড়ের আরেকটি বড় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সম্পৃক্ততা আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত বুধবার ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে রেঞ্জের বিশেষ অপরাধ সভায়ও উঠে এসেছে রাঙামাটিতে এই হত্যাকাণ্ডসহ সার্বিক পরিস্থিতি।

এ বিষয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা রেকর্ড হয়েছে। সেই মামলা তদন্তাধীন আছে। তদন্তের ক্ষেত্রে এখনো বলার মতো কোনো রেজাল্ট আসেনি। কিলার গ্রুপ যেটা আছে সেটাকে আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তবে যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে, সেটা ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা। সুতরাং ইউপিডিএফের এই ঘটনা ঘটানোর সম্ভাবনা বেশি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads