• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
আবর্জনার ভাগারে মরতে বসেছে গলাচিপা পৌরসভার খাল

পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্রের খালটি পরিবেশ দূষণে মরছে। ময়লা আবর্জনার ভাগার ও দখলে প্রবাহমান খালটি এখন মৃত

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

আবর্জনার ভাগারে মরতে বসেছে গলাচিপা পৌরসভার খাল

  • বিনয় কর্মকার, গলাচিপা (পটুয়াখালী)
  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল ২০১৯

পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্রে প্রবহমান খালটি এখন অব্যাবস্থাপনায় মরা খালে পরিনত হয়েছে। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও শহরবাসীর ব্যবহার্য পানির প্রধান খালটি এখন ময়লা-আবর্জনায় বিষের খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন খনন না করায় ময়লা ও আবর্জনা ভরে গেছে খালটি। সেই সাথে দখলের কারণে দিনদিন এর আকার ছোট হয়ে আসছে।

পৌরবাসিরা জানান, শহরের পানি অপসারণের একমাত্র খালটি ময়লায় ভরে থাকার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি অপসারনে বাঁধার কারনে শহরে হাটু পানিতে অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। এছাড়া মশা-মাছিসহ ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের উপদ্রব দিন দিন বেড়ে চলেছে । বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া সহ নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীদের।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের পহেলা জানুয়ারী গলাচিপা পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হয়। গলাচিপা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড বাদে বাকি ৮টি ওয়ার্ডের সাথে খালটি সংযুক্ত। বর্ষার পানি এ খালের মাধ্যমে শান্তিবাগের স্লুইজ দিয়ে রামনাবাদ নদীতে যায়। এই খালের উপর থানা, হাফেজপুল ও জৈনপুরি খানকা সংলগ্ন তিনটি বাঁধ দেয়া হয়েছে। এ বাঁধে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার হয়েছে। এরই মধ্যে জৈনপুরি খানকা সংলগ্ন গার্ডার ব্রিজের কাজ শুরু করা হয়েছে। খালটি শহরের প্রানকেন্দ্রে হওয়ায় শহরের সকল আবর্জনা ফেলা হয় এই খালে। খালটি দুই পাশে অসংখ্য খোলা পায়খানা ও প্রসাবখানা রয়েছে। যার ফলে দিন দিন ভরাট হচ্ছে খালটি। খালের পানির রং কালো ও রক্তবর্ণ আকার ধারণ করেছে। খালের পানি এত দুর্গন্ধ যার ফলে এর পাশ দিয়ে মানুষ হাটতে পারছে না। ছাড়চ্ছে নানা ধরনের রোগ জীবানু এবং এতে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ খালে পানি এতই বিষাক্ত যা শরীরে লাগলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন কোনো না কোনো ভাবে প্রভাবশালীদের দ্বারা দখল হয়ে যাচ্ছে খালটি। ২০০৮ সালে খালটি দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করতে চালানো হয় অভিযান। কিন্তু এর পর থেকেই আর কোনো অভিযান না চালালে আবারও দখলদারদের কবলে পড়েছে খালটি। বর্তমানে খালটি তার নিজ বৈশিষ্ট্য, স্বকীয়তা ও যৌবনপূর্ণ রূপ-সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। ক্রমান্বয়ে এটি একটি মরা খালে পরিণত হতে চলেছে।

নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, খালটি খনন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে ৪০-৫০ ফুট চওড়া করে একটি সুন্দর লেকে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের। এ কারণে ২০১৫ সালে জাইকার অর্থায়নে ৩২শত মিটার দৈর্ঘ্যের খালটির খনন কাজ ও ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করার জন্য ২ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকার টেন্ডার হয়েছে। ওই খাল খননের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম.এন.মল্লিক এ্যান্ড মোনালিসা জেভি। বারবার সময় বৃদ্ধি করে ওই ঠিকাদার ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ সমাপ্ত করার সময় সীমা নির্ধারণ করা হলেও এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান তেমন কোন কাজ দেখা যায় নাই।

শহরের ব্যবসায়ীরা জানান, গলাচিপায় কোনো ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন নেই। যার কারণে কোনো দোকান বা ঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে এই খালের পানি দ্বারা তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হতো। বর্তমানে খালটি ময়লা আবর্জনা পূর্ন থাকার কারণে এর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে নানা ধরনের দুর্ঘটনায় ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে যায়।

খালের পাড়ের বাসিন্দা ও দোকানদাররা জানান, খালের পানি এত দুর্গন্ধ তাতে ঘরে থাকা এখন দায়। এক দিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে না অন্যদিকে শিশু থেকে বৃদ্ধরাও ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডায়েরিয়া, আমাশয় সহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মু. আমিনুল ইসলাম জানান, চলতি বর্ষা মৌসুম শেষে কাজটি শুরু করবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারবে বলে আশ্বস্ত করেন।

এ ব্যাপারে গলাচিপা পৌরসভার মেয়র আহসানুল হক তুহিন জানান, খাল খনন কাজের টেন্ডার অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার বারবার কাজের সময় বাড়িয়েছে। ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আশা করছি আসন্ন শীতের মৌসুমের মধ্যেই কাজটি শেষ হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads