• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
তীব্র রোদ ও ভেপসা গরমে কদর বেড়েছে হাতপাখার

তালপাতার তৈরী হাতপাখার কদর ও বিক্রি বাড়ার কারণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পাখার কারিগররা।

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

তালপাতার হাতপাখায়  ৫শতাধিক মানুষের জীবন জীবিকা

তীব্র রোদ ও ভেপসা গরমে কদর বেড়েছে হাতপাখার

  • মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৬ মে ২০১৯

এম.সাখাওয়াত হোসেন
বৈশাখের তীব্র রোদ ও ভেপসা গরমে নওগাঁর মহাদেবপুরের তালপাতার তৈরী হাতপাখা স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে পাইকারদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এখানকার তৈরী পাখার কদর ও বিক্রি বাড়ার কারণে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পাখার কারিগররা।

মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিঃ মিঃ দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত ভালাইন গ্রাম। এ গ্রামটিকেই এখন সবাই চেনে পাখা গ্রাম হিসাবে। এ গ্রামের প্রবেশ মুখেই বসবাস করে প্রায় ৬০ টি পরিবার। এ ৬০ টি পরিবারের সবাই তালপাতার হাতপাখা তৈরি ও বিক্রির সাথে জড়িত। এক কথায় এই ৬০টি পরিবারের ৫শতাধিক সদস্যের জীবন জীবিকা বাঁধা পড়েছে তালপাতার হাতপাখায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি বাড়িতেই চলছে পাখা তৈরির কাজ। বাড়ির মেয়েরা ব্যস্ত পাখা তৈরির কাজে। পাখা তৈরি ও সুতা দিয়ে বাঁধার কাজটি মূলত বাড়ির মেয়েরাই করে থাকেন। পাখা তৈরির জন্য তালের পাতা সংগ্রহ, পাতা ছাঁটাই ও তৈরি পাখা বিক্রির দায়িত্ব পালন করে থাকেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। গ্রামে ঢুকতেই দেখা যায় পাখার কারিগর আছমা, মনিরা, সীমাসহ কয়েকজন নিবিষ্ট চিত্রে পাখা তৈরি করছেন। এমন নিপুন ভাবে পাখা তৈরির কাজ শিখলেন কিভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে গৃহবধু আছমা জানান, তার বাবার বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার কির্ত্তীপুর গ্রামে। প্রায় ১৩ বছর আগে বিয়ে হয় এই গ্রামের যুবক সামছুর রহমানের সাথে। বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়ির সবাইকে পাখা তৈরি করতে দেখে তাদের কাছ থেকেই শিখেছেন পাখা তৈরির কাজ। তালের পাতা কাটা ও ছাটাই থেকে শুরুকরে কয়েক ধাপে শেষ হয় পাখা তৈরির কাজ। পাখা তৈরির শেষ ধাপে রয়েছে সুতা দিয়ে বাঁধাই।

আছমা এখন প্রতিদিন একাই ১০০ থেকে ১২০ টি পাখা বাঁধাই করতে পারেন। এ থেকে প্রতিদিন তার প্রায় ২৫০ টাকা আয় হয়। পাখা তৈরির আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি একমাত্র ছেলেকে লেখা পড়া করানোর স্বপ্ন দেখছেন গৃহবধূ আছমা। শুধু আছমাই নয় এখানকার গৃহবধু সুমী, খোরশেদা, সায়রা, শেফালী, কহিনুর, মালা, শিউলিসহ অনেকের পরিবারই পাখা তৈরি ও বিক্রির উপর নির্ভরশীল। পাখার কারিগর সুমী জানান, গরম কালে পাখার চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়ে। পাখার কারিগররা জানান, একটি পাখা তৈরি করতে ১২/১৪ টাকা খরচ হয়। সেই পাখা ৩ থেকে ৫ টাকা লাভে ১৫/১৯ টাকায় তারা মহাজনদের কাছে বিক্রি করে দেন। মহাজনরা রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ২২ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করেন। এতে পাখার মহাজনরা শুধুমাত্র পুঁজি খাঁটিয়ে বেশি লাভবান হলেও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পাখা তৈরি করেও অধিক লাভ থেকে বঞ্চিত হন পাখার কারিগররা। স্থানীয় যুবক গেলাম রসুল ও উত্তরগ্রম ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবিদ সরকার জানান, এখানকার কারিগররা শীত মৌসুমে মহাজনদের কাছ থেকে পাখার দাম ধরে আগাম টাকা নেয়। গরমকালে পাখার দাম বাড়লেও কারিগরদের লাভ হয়না। লাভের অংশ চলে যায় মহাজনদের ঘরে। সরকারী বে-সরকারী ভাবে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দিতে পারলে মহাজনদের খপ্পর থেকে রক্ষা পাবেন হাত পাখায় জীবন জীবিকা বাঁধা এই মানুষগুলো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads