• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
দিনাজপুরের লিচু এখন বাজারে

দিনাজপুরে লিচু বাজারে উঠতে শুরু করায় ব্যস্ত বিক্রেতারা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

দিনাজপুরের লিচু এখন বাজারে

  • দিনাজপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৭ মে ২০১৯

সারাদেশে মধুর জেলা হিসেবে অনেক আগে থেকে পরিচিতি রয়েছে দিনাজপুর জেলা। দিনাজপুর জেলার লিচুর কথা শুনলে সবারই মুখে জল আসবেই। দিনাজপুরের রসালো ও সুস্বাদু লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। লিচু বাজারে উঠতে শুরু করায় ব্যস্ত সময় পারছেন লিচু ব্যবসা ও পরিবহনের সাথে জড়িতরা। জেলা থেকে গড়ে প্রতিদিন ১৫টিরও বেশি নৈশ্য কোচের ছাদে লিচুর ঝুড়ি যাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে। জেলায় এবার ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৪ হাজার মেট্রিক টন লিচুর চাষ করা হয়েছে।

দেশে জৈষ্ঠ্য মাসকে মধুর মাস হিসেবে অনেকে জানেন। এটাও যানেন দিনাজপুরের রসালো লিচু শুধু দেশ নয় বিশ্বের অনেক দেশে চাহিদা রয়েছে। জেলার রসালো লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম থেকে দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার কালিতলা নিউমার্কেটে সুস্বাদু লিচু উঠতে শুরু করেছে। পবিত্র মাহে রমজান হওয়া ক্রেতাদের চাহিদা মেটানোর জন্য দিনাজপুরের স্থানীয় জাতের লিচু প্রথম দিক থেকে বাজারে উঠেছে। দেশের বিখ্যাত বেদেনা ও চায়না থ্রি, চায়না ফোর জাতের লিচু রমজান মাসের শেষে বাজারে উঠানোর চেষ্টা করছেন লিচু চাষের সাথে জড়িতরা। এবছর দিনাজপুর জেলার ৩ হাজার ২৬৭টি লিচুর বাগান ও বসতবাড়ী মিলে ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে।

দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার কালিতলা নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় জাতের লিচু বাজারে উঠেছে। তবে এরই মধ্যে লিচুর দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীড়। ভোর বেলায় লিচু বাগান থেকে পেরে বাজারে আনতে বেজে যায় সকাল ১১টায়। এরপর শুরু হয় ক্রেতাদের ভীড়। লিচু চাষ ও পরিবহনের সাথে জড়িতদের দম ফেরার ফুসরত নেই। কেউ লিচু বিক্রি করছেন, আবার কেউ লিচু ঝুড়িতে সাজাচ্ছেন বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। দিনাজপুর শহর থেকে ঢাকাগামী ১৫টির অধিক নৈশ্য কোচের ছাদে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয় ক্রেতারা দেশী জাতের ১০০টি লিচু ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। প্রতিদিন দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী দিবা ও নৈশ্যকালীন কোচগুলোতে লিচুর খাচায় বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

শহরের নাবিল পরিবহনের অফিস সহকারী দীনেশ চন্দ্র জানান, নাবিল পরিবহনের প্রতিদিন রাত্রীকালীন ৬টি কোচ ঢাকায় যায়। প্রতিদিনই প্রতিটি কোচের ছাদ বোঝাই করে লিচুর ঝুড়ি ঢাকায় যাচ্ছে। আগামী ১ সপ্তাহ পর লিচুর ঝুড়ি পাঠানো বৃদ্ধি পাবে।

দেশে বিখ্যাত বেদেনা, চায়না থ্রি ও চায়না ফোর লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত রয়েছে পুলহাট মাশিমপুর গ্রাম। মাশিমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, লিচু চাষী ও বাগান মালিকদের দম ফেলার ফুসরত নেই। লিচু গাছের পাহাড়াদার হিসেবে অসংখ্য লোক। লিচু গাছের আড়ালে লাগানো হয়েছে ছোট ছোট সাইজের তেলের ড্রাম। আর পাহাড়ারা তেলের ড্রামগুলোর দড়ি ধরে টান দিয়ে শব্দ সৃষ্টি করছেন। যাতে করে কাক, পাখি ও বাদুর লিচু নষ্ট করতে না পারে।

লিচু চাষী হাসান আলী জানান, তার ৩টি লিচু বাগানে ৭ একর ১০ শতক জমিতে প্রায় সাড়ে ৫শ লিচুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ চায়না থ্রি ও চায়না ফোর জাতের। অন্যান্য ১৫০ গাছ দেশি প্রজাতির মাদ্রাজী ও বোম্বাই লিচুর বাগান। ৩টি বাগান ২ বছরের জন্য ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ীর নিকট। তারা বাগান নেয়ার পর থেকে ভালো ফলনের আশায় পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এবারে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। অনেক চাষী দেশী ও স্থানীয় জাতের মাদ্রাজী লিচু ভাংতে শুরু করেছে। অন্য ভালো জাতের লিচুগুলো ঈদ-উল ফিতরের পরে বাজারজাত করতে পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা।

লিচু বাগানের মালিক শিমুল কর্মকার জানান, তার ৫ একর জায়গাতে ২টি লিচুর বাগান রয়েছে। ২টি বাগানে ঢাকা নরসিংদীর এক ব্যবসায়ীর কাছে ২ বছরের লীজ দিয়েছেন। ২ বছর পর পর ঢাকা বা অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে বাগানের লীজ নিয়ে লিচু চাষ করেন।

নরসিংদী সদর উপজেলার লিচু ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানান, তিনি এবছর পুলহাটের মাশিপুর এলাকার ২টি লিচু বাগান ২ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়েছেন। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লিচুর যে ফলন হয়েছে সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে শ্রমের মূল্য ভালোই পাওয়া যাবে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল জানান, এবারে জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫ হাজার ২ হেক্টর লিচু বাগানে লিচু চাষ করা হয়েছে। মোট ৩ হাজার ২৬৭টি লিচু বাগান রয়েছে। এছাড়া মানুষের বসতবাড়ী ও অন্যান্য স্থানে থাকা লিচু গাছে বাম্পার লিচু ফলন হয়েছে। এবারে জেলায় দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী বেদেনা, হাইব্রিড জাতের চায়না থ্রি ও চায়না ফোর জাতের লিচু ব্যাপকহারে চাষ করা হয়েছে। এছাড়া দেশী জাতের মাদ্রাজী, বোম্বাই ও কাঠালী লিচু রয়েছে। জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতেই মাদ্রাজী ও কাঠালী লিচু বাজারে উঠেছে। দেশী লিচু দাম একটু তুলনামূলক কম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads