• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ঝুঁকি নিয়েও পাহাড়ে ২ লক্ষাধিক মানুষ

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

ঝুঁকি নিয়েও পাহাড়ে ২ লক্ষাধিক মানুষ

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৪ জুলাই ২০১৯

কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে পৌরসভার অভ্যন্তরে অতি ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৯৯৮টি পরিবার। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে জানমালের ব্যাপক ক্ষতির পরও এসব মানুষ বসবাস করছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বর্তমানে ১২টি পাহাড়ে ১২ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তৈরি করে বাস করছে দুই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে অন্তত ৮০ হাজার মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা।

এদিকে প্রতিবছর পাহাড়ধসে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়লেও সেদিকে কোনো খেয়াল নেই বসবাসকারী এসব মানুষের। তারা বলছে, স্থায়ী নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা না হলে পাহাড় ছাড়বে না।

প্রশাসন বলছে পাহাড় কারো ব্যক্তিমালিকানাধীন হতে পারে না। যারা দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর জনগণের জানমাল রক্ষার্থে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনকে সরিয়ে ফেলা হবে। প্রয়োজনে জোরপূর্বক সরানো হবে।

এদিকে গত চার দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে যেকোনো মুহূর্তে পাহাড়ধসে মানবিক বিপর্যয় ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। শহরসহ প্রতিটি উপজেলায় মাইকিং করে পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

সিপিভি ভলান্টিয়ার, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, এনজিওসহ বিভিন্ন গ্রুপ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গিয়ে লোকজনকে সরিয়ে নিতে প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীরা বলছেন তাদের কোনো থাকার স্থান না থাকায় পাহাড়ে ঝুঁকি জেনেও বসবাস করছেন। সরকারের প্রতি তাদের দাবি, বসবাসের জন্য নিরাপদ স্থায়ী স্থান দেওয়া হোক।

শহরের খাজা মঞ্জিলের পাহাড়ে অবস্থান করা রাবেয়া খাতুন জানান, গত ৯ বছর ধরে পাহাড়ে অবস্থান করছি। প্রতিবছর বর্ষায় বৃষ্টি হলেই ভয় লাগে। কখন জানি পাহাড় ধসে পড়ে। সরকার যদি আমাদের জন্য স্থায়ীভাবে নিরাপদ কোনো আশ্রয়ের ব্যবস্থা করত তাহলে আর এ আতঙ্কে থাকতে হতো না।

পাহাড়তলী এলাকার নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, ‘নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করলেও কিছু করার থাকছে না। ঝুঁকি থাকলেও পাহাড় ছাড়তে পারব না। বউ-বাচ্চা নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। সুতরাং কাপালে যা আছে তাই হবে।’

পাহাড় কেন দখল করে আছে এমন প্রশ্নে নুরুল ইসলাম জানান, এক প্রভাবশালীর কাছ থেকেই জায়গা কিনেছেন। তার থাকার কোনো জায়গা নেই তাই অল্প টাকায় পাহাড়ে উঁচুতে জায়গা কিনেছেন।

শহরের লাইটহাউস পাহাড়ের পেছনে ফাতেরঘোনা এলাকা। এলাকাটি ছোট-বড় চারটি পাহাড় নিয়ে গড়া। সব কটি পাহাড়েই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে হাজারো মানুষ। পাহাড় কেটে এসব ঘর তৈরি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরে যেতে বলা হলেও এসব ঘরের বাসিন্দারা তা কানেই তুলছেন না।

কথা হয় একটি ঘরের বাসিন্দা ছমুদা খাতুনের (৫৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ৩০ হাজার টাকায় একখণ্ড পাহাড়ি ভূমি কিনে একটি টিনের ঝুপড়িঘর তৈরি করেছি। স্বামী ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকি। এদিকে পাহাড় ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং হলেও তিনি বাড়ি ছাড়তে নারাজ। কারণ বাড়ি ছাড়লে অন্য কেউ তা দখল করে নেবে।

ফাতেরঘোনার পাশে বৈদ্যঘোনা, মোহাজেরপাড়া, লাইটহাউস, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, পাহাড়তলী, খাজামঞ্জিল পাহাড়েও পাদদেশ ও ঢালুতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন লোকজন। টানা ভারী বর্ষণে এসব পাহাড়ে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে কিছু ঘর হেলে পড়েছে।

বৈদ্যঘোনা পাহাড়ের ঢালুতে ঝুপরিঘর তৈরি করে বসতি করছেন অনিল দত্ত। কিন্তু তিনিও পাহাড় ছাড়তে নারাজ। তার ভাষ্য, ‘অনেক কষ্টে ঘরটি তৈরি করেছি। ঘরটি অন্যরা দখল করে নিলে তখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে না।’ একই কথা বলেন বৈদ্যঘোনা পাহাড়ের বিবি হাজেরা। তার প্রশ্ন বিভিন্ন পাহাড়ে হাজারো রোহিঙ্গা থাকলে পারলে আমরা কেন পারব না।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যেকোনো মুহূর্তে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে। কেউ যাতে মানবিক বিপর্যয় ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির শিকার না হন, সে জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানান, লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। লোকজনকে অনুরোধ করা হচ্ছে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে। পরিস্থিতি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলে প্রশাসন দিয়ে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রয়োজনে উচ্ছেদ করা হবে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা বসতি। পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড়ের চূড়ায় অতি ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করা পরিবারের জন্য একটি স্থানে অবকাঠামো তৈরি করে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে জীবন-জীবিকার একটি প্রস্তাবনা দাখিল করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads