• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
তবুও থেমে নেই ইয়াবা পাচার!

উপরের সারিতে ইয়াবা ব্যবসায়ি আনোয়াব ও মুজিব, ইনসেটে গড ফাদার চিকুইন্না ও ইয়াবা ব্যবসায়িদের বিলাসবহুল বাড়ি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

তবুও থেমে নেই ইয়াবা পাচার!

  • উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৩ আগস্ট ২০১৯

উখিয়া সদর হাজিরপাড়া গ্রামের মৃত ফকির আহম্মদের ছেলে নুরুল আলম নুরু প্রকাশ দাড়ী নুরু। ৪৫ বছর বয়সী এ ব্যাক্তি পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, সদা হাস্যজ্জলমুখ, সকাল সন্ধা থানার সামনে, ষ্টেশনে তার বিচরন। এমনকি বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের পাশাপাশি পুলিশের সাথেও তার উঠাবসা। অথচ পুলিশ বিন্ধুমাত্র টেরপাইনি নুরু যে একজন পেশাদার ইয়াবাকারবারী ছিল। ঢাকায় কোন মামলা নেই, তবুও মামলার একটি কোর্টফাইল নিয়ে সম্প্রতি ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা হওয়ার জন্য বিমানের জন্য অপেক্ষা করছিল কক্সবাজার বিমান বন্দরে। সুচতুর র‌্যাব সদস্যরা তাকে আটক করে তল্লাশি চালালে বেরিয়ে আসে কোর্ট ফাইলের আসল রহস্য। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, কোর্ট ফাইলের ভিতর থেকে প্রায় ৪ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় একটি মাদক নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা হয়েছে।

অল্প পুজিতে প্রচুর লাভবান, স্বল্প সময়ে কোটিপতি, গাড়ী বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে শতশত নতুন মুখ ইয়াবা বানিজ্যের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে নিয়মিত আটক হচ্ছে ইয়াবাকারবারী। উদ্ধার করা হচ্ছে ইয়াবা। পরবর্তীতে এদের অনেকেই বন্ধুকযুদ্ধে মারাও পড়ছে। তবুও থেমে নেই দেশ জাতি ও সমাজ ধ্বংসকারী ইয়াবার আগ্রাসন। পালংখালীর শীর্ষ ইয়াবা কারবারী আনোয়ার প্রকাশ সোনা মিয়া (৩৩) ও তার বড় ভাই মুজিব দুই ভাই পেশায় শ্রমিক ছিলেন। মিয়ানমার ভিত্তিক শীর্ষ ইয়াবা ডুৃনার নামে খ্যাত চিকুৃইন্যা ও টেকনাফের শীর্ষ ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারী পাটনার এই দুই ভাই রাতারাতি কোটিপতি, গাড়ীবাড়ি ও জমিজমার মালিক হয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি দুই ভাই গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে গেলেও সুৃচতুৃর আনোয়ার প্রকাশ সোনা মিয়া কৌশলে জামিনে বের হয়ে ফের চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা ইয়াবা বানিজ্য। কিন্তু দেখার কেউ নেই। সাধারন গ্রামবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রশ্ন এতটাকা তারা পেল কোথাই থেকে।

উখিয়ার জাদিমোরা খালকাছা পাড়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রধান সড়ক সংলগ্ন, কারুকার্যে গড়ে উঠা বিশাল একটি ভবন। যে ভবনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবুও মানুষ এই ভবন মালিক নিয়ে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করছে। হাছুৃ মিয়া নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী, জিনি তার পারিবারিক বৈশিষ্টতা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তিনি জানান, এ গ্রামের এক সময়ের হতদরিদ্র ও খিলি পান বিক্রেতা কবির আহম্মদ বাড়ীটি নির্মান করছে। থানা সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা রয়েছে। এরকম ইয়াবাকারবারীর সংখ্যা নির্ণয় করা অনেকের সম্ভব হবেনা। মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্ছার সমাজকর্মী লিয়াকত আলী, উসমান গণিসহ আরো অনেকেই বলেন, ইয়াবাকারবারীদের অতীত আর বর্তমান সহায় সম্পক্তির ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। পূর্বাঞ্চলীয় মাদক বিরোধী সংগঠনের নেতা এড. এটি এম রশিদ আহম্মদ বলেন, ইয়াবার মাধ্যমে গজে উঠা অঢেল সহায় সম্পক্তি সরকারি কোষাঘারে নিয়ে যাওয়া হলে ইয়াবাকারবারীদের এ পেশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলনা। যেহেতু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাদক নিয়ন্ত্রনে এক পায়ে খাড়া। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো ইয়াবার বাজারে পরিনত হয়েছে। এদের মাধ্যমে ইয়াবার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে স্থানীয় যুবসমাজ, স্কুল কলেজ পড়–য়া ছাত্রÑ ছাত্রী। ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে ইয়াবা সেবনে অভ্যস্থ হচ্ছে ৮০ শতাংশ পরিবারের কোন না কোন সদস্য। এদের কারনে পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিভাবকদের অভিমত।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল মনসুর জানান, প্রতিনিয়ত আটক করা হচ্ছে ইয়াবার সাথে জড়িতদের। মামলা করা হচ্ছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে। তিনি বলেন, মাদক পাচার বিস্তৃত না হয়ে যেন নির্মুল হয় সে ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads