• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী!

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী!

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কক্সবাজার পৌর এলাকার রোহিঙ্গা প্রধান এলাকা ৭ নং ওয়ার্ডের ৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা বেশিভাগই ২০ থেকে ২৫ বছর আগে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ছেলে মেয়ে।  যারা বর্তমানে বেশিরভাগই বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন বা চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট পেয়ে গেছে।

কক্সবাজারবাসীদের দাবি, জেলায় কি পরিমাণ রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে তার একটি জরিপ করা দরকার এবং তাদের বিষয়ে সরকারের একটি দ্রুত সিদ্ধান্ত আসা জরুরি। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের শনাক্ত করে তাদের শিক্ষা সনদে মিয়ানমারের নাগরিক লেখা থাকার বিশেষ ব্যবস্থা রাখারও দাবী জানিয়েছে সুশীল সমাজ।

ওই পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমপক্ষে ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা শিশু লেখাপড়া করছে। তবে তাদের রোহিঙ্গা হিসাবে শনাক্ত করার কোনো উপায় নাই। কারণ প্রত্যেকের জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং মা বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। তবে এলাকার মানুষ জানে তারা সবাই আগে আসা রোহিঙ্গা।   

বৈইল্লা পাড়া ডিওয়ার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ বড়ুয়া জানান,এই স্কুলে মোট শিক্ষার্থী ৬৫০ জন। এর মধ্যে প্রায় ১০০ জনের মত রোহিঙ্গা শিশু থাকতে পারে।

তিনি জানান, জন্ম নিবন্ধন দেখে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা হয়।  তবে পাশাপাশি আমরা সবাই এখানকার বাসিন্দা সবাইকে চিনি। বা এলাকার মানুষও জানে তাদের বাবা অথবা মা অনেক আগে আসা রোহিঙ্গা। তবে কাগজপত্র দিলে আমাদের কিছুই করার থাকে না।

এ সময় সহকারী শিক্ষক ডেজিনা ইয়াছমিন বলেন, আমরা যখন ভোটার তালিকা করতে মাঠ পর্যায়ে যাই সে সময় রোহিঙ্গা হিসাবে জেনে যাদের বাদ দিয়ে আসি পরবর্তীদের দেখা গেছে তাদের ছেলে মেয়েরা জন্ম নিবন্ধন সনদ, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট এবং অন্য জায়গা থেকে মা বাবার আইডি কার্ড করে নিয়ে এসেছে তখন বাধ্য হয়ে ভর্তি করাতে হয়। আবার দেখা গেছে, প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় থাকলেও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এরা রোহিঙ্গা তাই এখান থেকে অন্য জায়গা চলে গেছে।

পরে পাহাড়তলীর ভেতরে হুসনা হক কেজি স্কুলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে মোট শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই আগে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশু। জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হুমায়রা বেগম বলেন, আমাদের স্কুলে মোট শিক্ষার্থী ৩৭৫ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা শিশু থাকতে পারে প্রায় ৫০ জনের মতো। আমার এখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয় না। আর তারা কাগজ এনে দিলে ওই শিশুদের ভর্তি করাতে হয়।

তবে এলাকাবাসীর দাবী সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা শিশু পড়ে ওয়ামী একাডেমিতে। যাদের বেশিরভাগ শিক্ষক ও পরিচালকও রোহিঙ্গা। তারা রোহিঙ্গাদের অনুদানেই চলে। এখানে অন্তত ২০০ এর বেশি শিশু লেখাপাড়া করছে এখান থেকে নিয়মিত জেএসসি, পিএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এবং এটা রোহিঙ্গাদের প্রতিষ্ঠান হিসাবেই সবাই চিনে। এখানে রোহিঙ্গা শিশুদের উল্টো টাকা দেওয়া হয় বলেও জানান এলাকাবাসী। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হাবিব উল্লাহর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকার এবিসিঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেহেনা বেগম জানান, এই স্কুলের মোট শিক্ষার্থী ৩৫৩ জন। এর মধ্যে ৭০-৮০ জন আগে আসা রোহিঙ্গাদের ছেলেমেয়ে থাকতে পারে।

পাহাড়তলী আদর্শ কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাস্টার জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের স্কুলে সর্বোচ্চ ১০-১৫ জন থাকতে পারে। তবে আমাদের এখানে বেশিরভাগই স্থানীয় ছেলেমেয়েরাই পড়ে। যেহেতু এখন কে রোহিঙ্গা সেটা শনাক্ত করা কঠিন। তাই অনেক সময় তারা প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দিলে ভর্তি করাতে হয়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মায়মুনা (রাঃ) মাদ্রাসা,বাচাঁ মিয়ার ঘোনা দাখিল মাদ্রাসা, মোজাহেরুল উলুম নুরানী মাদ্রাসা, নজির ঘোনার হুমায়রা(রাঃ) মাদ্রাসায়ও অসংখ্য রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।

এ বিষয়ে উখিয়া ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক অজিত দাশ বলেন,এখনই সময় একটি বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার। যাতে কক্সবাজারে ঠিক কি পরিমাণ রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে তাদের একটি খসড়া তালিকা করা। প্রতিবেশি দেশে যদি ৬৫ বছর পরে নাগরিকত্ব তালিকা করতে পারে আমরা কেন পারবো না। তাহলে রোহিঙ্গা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরো সুবিধা হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন কক্সবাজারের সভাপতি প্রফেসর এম এ বারী বলেন, যদি একটি ওয়ার্ডে ৫ শতাধিক থাকে তাহলে পুরো জেলায় কত থাকবে? এদের মধ্যে প্রতি বছর কতজন পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি,এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে? যদি তাদের শিক্ষা সনদে বিশেষ ব্যবস্থায় মিয়ানমারের নাগরিক লেখা থাকে তাহলে তারা আর দেশের সরকারি চাকরি বা সুযোগ সুবিধা পাবে না।

এপিপি অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিত বলেন, এখনই সময় আগে আসা রোহিঙ্গাদের সঠিক তালিকা তৈরি করা। কারণ যত দিন যাচ্ছে পরিবেশ তত খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর দ্রুত রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে তাদের শিক্ষা সনদে মিয়ানমারের নাগরিক লেখার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে তারা শিক্ষার সুযোগ পেলেও যেন রাষ্ট্রের সুবিধা পেতে না পারে সে ব্যবস্থা হবে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয় তা সঠিক কিনা সেটাও ভালমত যাচাই বাছাই করা দরকার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads