• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
 আখাউড়ায় পৌর বিএনপিতে পদত্যাগের হিড়িক!

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

আহবায়ক কমিটি নিয়ে চরম অসন্তোষ

আখাউড়ায় পৌর বিএনপিতে পদত্যাগের হিড়িক!

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৯ জানুয়ারি ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। পৌর এলাকার বাসিন্দা নয় ও দলের ত্যাগী যোগ্য নেতাদের বঞ্চিত করে বহিরাগত, অপরিচিত, অদক্ষ, অযোগ্য, আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকাহীন লোকজনকে আহবায়ক কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে বলে এমন অভিযোগ নেতাকর্মীদের। ফলে ওইসব লোকজন দিয়ে কমিটি করায় দ্বিধা-বিভক্ত স্পষ্ট হয়ে দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ দলটি। পাশাপাশি দলের জন্য নিবেদিত ত্যাগী নেতাদের মূল্যালয়ন না করায় নব গঠিত আহবায়ক কমিটির সদস্যদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। ইতিমধ্যে ওই কমিটি থেকে ৬ জন সদস্য তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আর অন্যরাও পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ অবস্থার ফলে বিএনপিতে দলীয় কোন্দল আরও বাড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি আখাউড়া পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. জিল্লুর রহমান। ওই কমিটিতে আহবায়ক করা হয় সদর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ওই ইউনিয়নের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম ভূইয়া এবং আখাউড়া পৌর শ্রমিক দলের নেতা মো. আক্তার খানকে সদস্য সচিব করে পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়।

জিল্লুর রহমানের একক সিদ্ধান্তে গত ১৩ জানুয়ারি ভূইয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবির আহমদ ভূইয়া ও তার ছোট ভাই লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানের ব্যাক্তিগত সহকারী মো. আব্দুর রহমান সানীর পরামর্শে প্রথম দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এর ৩ দিন পর ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কমিটির তালিকা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

দলের একাধিক ত্যাগী নেতা জানায়, স্বজন প্রীতির মাধ্যমে বহিরাগত, অদক্ষ, অযোগ্য লোক দিয়ে পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে বেশীভাগ লোকজনই রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের সাথে তাদের কোন পরিচিতি নেই। যারা শহীদ জিয়ার আদর্শ ধারণ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে হামলা মামলার শিকার হয়ে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে আজ তাদের মূল্যায়ন যেন শেষ হয়ে গেছে। যাদেরকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে দু’একজন ছাড়া বাকীদের রাজপথে তাদের পায়ের কোন ছাপ নেই। যাদের ইশারায় এই কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা আসলে দলকে ভালো চাই না দলকে ধ্বংস করতে চাই। অবশ্য সদ্য ঘোষিত হওয়া আহবায়ক কমিটির লোকজনরা জানায়, নীতিনির্ধারকরা যাচাই বাচাই করে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে দক্ষ ও ত্যাগী নেতাদের সমন্বনয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে। এজন্য সকলকেই তারা স্বাধুবাদ জানায়।

এদিকে নব গঠিত আহবায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ পত্র জেলা আহবায়ক কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন বর্তমান কমিটির ৬ সদস্য। তারা হলেন পৌর বিএনপি সাবেক সভাপতি বাহার মিয়া( সাবেক কাউন্সিলর) সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান (কাউন্সিলর),সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মন্তাজ মিয়া(কাউন্সিলর) ,উপজেলা যুবদলের সাবেক ১নং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম রানা,পৌর বিএনপি সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃদুলাল ভূঁইয়া ,সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃআব্দুল লতিফ মালদার।

পৌর বিএনপি সাবেক সভাপতি মো. বাহার মিয়া তার পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ করেন, আমি রাজনৈতিক কারণে অনেক ত্যাগ শিকার ও কারা নির্যাতিত হয়েছি। ২০১৩ সালে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন কালে বিজিবির গুলিতে আমার ছোট ভাই নিহত হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে পৌর বিএনপির সভাপতি হিসাবে সফল ভাবে দায়িত্ব পালন করছি। গতকাল ফেসবুকের মাধ্যমে পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন জানতে পেরেছি। যাকে আহবায়ক করা হয়েছে সে পৌর সভার নাগরিক নয়। সে আখাউড়া পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ড ও ভালো করে চেনেন না। এমন লোকের পেছনে রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকা ভালো। তাই আমি পদত্যাগ করলাম।

জাহাঙ্গীর আলম রানা উল্লেক করেন, দীর্ঘ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। সদ্য বিলুপ্ত হওয়া পৌর বিএনপির ১০১সদস্য কমিটি থেকে ৭ জন সদস্যকে রাখা হয়েছে। ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহবায়কসহ বেশী ভাগ লোকজনই রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। তাদের পেছনে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় তাই পদত্যাগ করলাম।

আখাউড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন লিটন বলেন, দলের জন্য যারা নিবেদিত দুর্দিনের সাথী ও সাংগঠনিক কাজে দক্ষ নীতিনির্ধারকরা ওইসব ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদেরকে মূল্যায়ন করে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করলে দলের জন্য ভালো হতো। এই কমিটির দু’একজন ছাড়া বেশীভাগ লোকজনই রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে তাদের কোন ভূমিকা নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে দক্ষ ও ত্যাগী নেতারা রাজনীতি থেকে দুরে চলে আসবে। যাদেরকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার মতো তাদের উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান আছে কি না তা দেখার দরকার ছিল।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুসলেম উদ্দিন বলেন, পদপদবীতে যারা রয়েছেন তারা সকলেই জিয়ার সৈনিক। দক্ষ নেতাদের সমন্বয়ে যোগ্যতাকে বিবেচনা করে জেলা কমিটি পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি তারা দক্ষতার পরিচয় দিবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads