• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
‘বাংলাদেশে এমন হামলা হলে বিদেশি দল কিছুই শুনত না’

‘বাংলাদেশে এমন হামলা হলে বিদেশি দল কিছুই শুনত না’

সংরক্ষিত ছবি

ক্রিকেট

‘বাংলাদেশে এমন হামলা হলে বিদেশি দল কিছুই শুনত না’

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ১৭ মার্চ ২০১৯

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী-জঙ্গি হামলা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটাররা। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য। কেউই মেনে নিতে পারছেন না নিউজিল্যান্ডের মতো শান্তিপ্রিয় একটি দেশে এমন সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। এ হামলা কেবল জনগণের ওপর হয়নি, হয়েছে ক্রিকেটের ওপরও। নিরাপত্তার অজুহাতে কোনো দল নিউজিল্যান্ডে সফর করতে না চাইলে ক্ষতিটা ক্রিকেটেরই হবে। বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটলে অন্য দলগুলো কি তাই করত? সাবেক ক্রিকেটাররা মনে করেন, বাংলাদেশের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও বিদেশি দলগুলো বাংলাদেশকে কোনো সুযোগ না দিয়েই দেশে ফিরে যেত।

তবে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা কিন্তু তেমনটা করেননি। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের পরামর্শ মতোই তারা ঘণ্টা দুয়েক ক্রাইস্টচার্চ স্টেডিয়ামে অবস্থান করেছেন। এরপর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় হোটেলে ফিরে গেছেন। পরে দুই বোর্ডের আলোচনার মাধ্যমে টেস্টটি বাতিল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। যদিও ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা ভীত-সন্ত্রস্ত। এমন অবস্থায় শনিবার মাঠে নামা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না মুশফিকদের। এর সঙ্গে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষেও খেলা শুরু করা সম্ভব ছিল না। কেননা, ক্রাইস্টচার্চের নাজুক পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তাই সবকিছু মিলিয়ে ম্যাচটি বাতিল হয়ে গেছে।

সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু মনে করেন, বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটলে বিদেশি দলগুলো বাংলাদেশকে কোনো সুযোগই দিত না- ‘বিদেশি দলগুলো আমাদের কোনো সুযোগই দিত না। নির্দিষ্ট বোর্ড তাদের ফিরিয়ে নিত দ্রুততার সঙ্গে। আমার মনে হয় ওরা যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে পারেনি। তাই বাংলাদেশ সঠিক কাজটাই করেছে।’

সাবেক এই অধিনায়ক মনে করেন, বাংলাদেশের অভিজ্ঞ নিরাপত্তা বাহিনী দক্ষতার সঙ্গেই এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতেন- ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাতে করে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনা নেই। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বকাপসহ অনেক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে করতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠছে। আমাদের দেশে এই মুহূর্তে এমন ঘটনা ঘটলেও আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সেটা সামাল দিতে পারত।’

বেশ কয়েকবার নিউজিল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা আছে বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাকের। এমন একটি দেশে এই ঘটনা ঘটেছে দেখে বেশ হতাশ তিনি, ‘আমি কয়েকবার নিউজিল্যান্ড সফর করেছি। ওদের ওখানে এমন ঘটনা ঘটা খুবই দুঃখজনক। যদিও সবাইকেই সচেতন থাকতে হয়। শুধু ওদের (নিউজিল্যান্ড) নয়, বাইরের সবগুলো দেশই আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে। আমাদের দেশে কোনো দল খেলতে এলে তিন স্তরের নিরাপত্তা পায়, বাইরের দেশে আমরা খেলতে গেলে তার দশভাগও পাই না।’

কিছুটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের দেশে এমন হামলা হলে কোনো কথাই শুনত না বিদেশি দলগুলো। সবাই দাবি তুলত ক্রিকেটারদের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। আমি তো আজকে চাইলেই দাবি করতে পারি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে টার্গেট করে এই হামলা চালানো হয়েছে। স্রেফ কয়েক মিনিটের জন্য ওরা বেঁচে গেছে। আমরা এত এত নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েও অস্ট্রেলিয়াকে দুইবার আনতে পারিনি। সত্যি কথা হচ্ছে, এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ দল সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।’ রাজ্জাক আরো বলেন, ‘নিরাপত্তার অজুহাতে ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাওয়াটা কোনোভাবেই উচিত নয়। কিন্তু আমাদের ক্রিকেটারদের কথাও চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশ তো ওদের (নিউজিল্যান্ড) সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমার ধারণা, আমাদের দেশে এমনটা হলে কেউই আলোচনা করত না। নিজেদের সিদ্ধান্তটা নিজেরাই নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশ ছাড়ত।’

সাবেক স্পিনার মোহাম্মদ রফিক অবশ্য মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কখনোই পড়বে না- ‘যারা এগুলো ঘটায় তারা ক্রিকেটের শত্রু। এমন ঘটনা বাংলাদেশে হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ক্রিকেটপ্রেমী জাতি। কেউই এমন করবে না। নিউজিল্যান্ডকে যতখানি জানি সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত। তারপরও ঘটে গেছে। ছেলেরা সবাই ভীত হয়ে পড়েছে। তাদের ফিরিয়ে আনাই ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘ছেলেদের জন্য যেটা ভালো হয়েছে আমরা দ্রুততার সঙ্গেই সেটা করেছি। এমন মুহূর্তে কেউই চাইবে না ঘটনাস্থলে থাকতে। সবাই তো চায় নিজ দেশে খেলা হোক। নিউজিল্যান্ডে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’

জাতীয় দলের সাবেক পেসার হাসিবুল হোসেন শান্তর মতে, এমন হামলা হলে ক্রিকেট খেলা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, ‘পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর যে হামলা হয়েছিল, সেটা কিন্তু নিউজিল্যান্ডের হামলার মতো নয়। সুতরাং এটা ক্রিকেটকে আক্রান্ত করেছে তা বলব না। খেলার মাঠে কিংবা ক্রিকেটারকে টার্গেট বানিয়ে এমন ঘটনা হলে সব দেশের জন্য কঠিন হবে ক্রিকেট খেলা।’ তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের মতো শান্ত একটি দেশে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যা মেনে নেওয়ার মতো নয়। সামনে থেকে এমন দৃশ্য দেখে ক্রিকেট খেলা মোটেও সম্ভব নয়। ছেলেদের ফিরিয়ে নিয়ে আসাই বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads