• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
স্বপ্নের শিরোপ‍া ইংল্যান্ডের

ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট

স্বপ্নের শিরোপ‍া ইংল্যান্ডের

বাউন্ডারির সুক্ষ্ম বিচারে রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড

  • মাহমুদুন্নবী চঞ্চল
  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই ২০১৯

আর নয় স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। আর নয় বিষাদে নুইয়ে পড়া। বারবার হতাশার বৃত্তে আটকে পড়া চাপা দীর্ঘশ্বাস। ফাইনাল নামক জুজুর চোখ রাঙানি এবার উধাও। তিন ফাইনাল হারের তিক্ত স্মৃতি আড়ালে রেখে এবার লর্ডসে উড়ল নতুন বিজয় কেতন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের জয়গান। তিনবার খুব কাছে গিয়েও চুমু আঁকা হয়নি সোনালি ট্রফিতে। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ধরা দিল পরম কাঙ্ক্ষিত শিরোপা। তাও সুপার ওভারে কত নাটকীয়তা আর উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেল ইংল্যান্ড।

ফাইনাল হলো ফাইনালের মতোই। তুঙ্গস্পর্শী উত্তেজনার সঙ্গে ঠাসা রোমাঞ্চের আবহ। পেন্ডুলামের মতো দোলা ম্যাচে কত না রং পাল্টাল ক্ষণে ক্ষণে। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ হলো টাই। ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে। সেখানেও চরম নাটকীয়তায় সমতা, দুই দলের রান ১৫। শিরোপা নিশ্চিত হলো সর্বোচ্চ বাউন্ডারিতে। অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ জিতে শিরোপা-অতৃপ্তি  ঘুচল ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ড।

লর্ডসের ফাইনালে টসটা জিতেছিলেন নিউজিল্যান্ড ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসন। ঐতিহ্য আর পরিসংখ্যানের বিচারে চোখ বুজে নিয়েছিলেন ব্যাটিং। ইংলিশ পেস তোপে মাঝারি মানের স্কোরে আটকায় কিউইরা, ৮ উইকেটে ২৪১ রান। জিততে হলে ইংল্যান্ডকে করতে হবে ২৪২ রান। এমন মামুলি স্কোরও ইংল্যান্ডের জন্য ছিল কষ্টকর। আর তা নিউজিল্যান্ডের তুখোড় বোলিং-ফিল্ডিংয়ের কারণে। ৮৬ রানে চার উইকেট হারিয়ে দিকভ্রষ্ট ইংল্যান্ড। কিন্তু সেখান থেকে দলকে পথ দেখানোর দায়িত্বটা কাঁধে নেন অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। পঞ্চম উইকেটে তার সঙ্গী ছিলেন জস বাটলার। এই জুটিই বলতে গেলে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান। আসে ১১০ রানের কার্যকরী জুটি।

কিন্তু ৫৯ রানে বাটলারের বিদায়ের পর আবার শঙ্কার ওড়াউড়ি লর্ডসের আকাশে। স্টোকসকে তেমন সঙ্গ দিতে পারছিলেন কেউই। কিন্তু কিউই পেসারদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক স্টোকসই। টানটান উত্তেজনা ছড়ায় শেষের পাঁচ ওভারে। শেষ ওভারে সমীকরণটা ছিল বেশ কঠিনই। জিততে হলে ৬ বলে ইংল্যান্ডকে করতে হবে ১৫ রান। ইংলিশদের শেষ উইকেট জুটি। কিউইদের বোলার তখন বোল্ট। প্রথম দুই বলে রান নেই। তৃতীয় বলে স্টোকস হাঁকালেন ছক্কা। চতুর্থ বলে দুই রান, সঙ্গে কিউইদের ওভার থ্রো স্টোকসের ব্যাটে লেগে চার। ম্যাচটি যেন তখনই মুঠো থেকে বের হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের। তারপরও বাকি ছিল রোমাঞ্চ। ১ বলে জয়ের জন্য দরকার তখন ২ রান। ইংল্যান্ড নিতে পারল এক রান। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে মার্ক উড রানআউট। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে দেখা মিলল প্রথমবারের মতো টাই।

নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানেও চরম নাটকীয়তা। এক ওভারে স্টোকস ও বাটলার দুজনে মিলে তুললেন ১৫ রান। জিততে হলে নিউজিল্যান্ডকে করতে হবে ১৬ রান। ক্রিজে গাপটিল ও নিশাম। বোলার ইংলিশ পেসার জোফরা আর্চার। ওয়াইড দিয়ে তার শুরু। দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে কিউইদের স্বপ্ন জোরালো করলেন নিশাম। পরের দুই বলে এলো দুই রান করে। শেষ বলে দরকার দুই রান। প্রাণপণে দৌড়েও কাজ হলো না। এলো এক রান। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রানআউট গাপটিল। সর্বোচ্চ ২৪ বাউন্ডারির কল্যাণে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের বাউন্ডারি সংখ্যা ১৬টি।

ততক্ষণে কাঁপতে শুরু করেছে লর্ডস। সঙ্গে গোটা ইংল্যান্ড। লর্ডসের সবুজ চত্বরে ইংলিশদের রঙিন উৎসব। পাগলাটে উদ্যাপনে ওকস, আর্চাররা। বজ্রগতিতে দৌড়াতে থাকলেন ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন মরগান। শূন্যে ছুড়ে ঘুসি মারছেন বেয়ারস্টো। ফাইনালের নায়ক বেন স্টোকস চরম ক্লান্ত বলেই দৌড়ালেন না। তবে পরম আনন্দ রূপ নিল ক্ষোভে। মাথার টুপি আছড়ে ফেললেন এক ঝটকায়। এরপর স্মিত হাসিমুখে চার হাত পা ছড়িয়ে শরীরটা এলিয়ে দিলেন মাঠে। শিরোপা জয়ের প্রশান্তি তখন তার চোখে-মুখে।

৯৮ বলে ৮৪ রানে অপরাজিত স্টোকস। সুপার ওভারেও তার ব্যাট চলেছে বেশ। অনুমিতভাবে ম্যাচসেরার পুরস্কার গেছে তারই শোকেসে। একক বীরত্বে দলকে ফাইনালে এনে হেরে যাওয়া কিউই অধিনায়ক সান্ত্বনা পেতে পারেন ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কারে। তারপরও কি ফাইনালের হারের ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারবেন কেন উইলিয়ামসন? মাঝারি স্কোর নিয়ে দারুণ বোলিং ও ফিল্ডিং কৃতিত্বে জিততে পারতেন প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি। কিন্তু তা আর হলো না। উল্টো দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের মধ্যেও কাঁটা হয়ে থাকল কিছু তিক্ত মুহূর্ত। উইলিয়ামসন আফসোস করতেই পারেন, ইস ৪৯তম ওভারে স্টোকসের ছক্কাটা যদি ক্যাচ হতো। কেন ক্যাচ ধরেও বাউন্ডারি লাইনে পা লাগবে বোল্টের। কিংবা কেন শেষ ওভারে থ্রোয়ে স্টোকসে ব্যাটে বল লেগে হয়ে যাবে চার। এই দুটি চিত্র কিউইদের পক্ষে থাকলেই তো প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করত নিউজিল্যান্ডও।

তবে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। লর্ডসের ফাইনালে জিতেছে আসলে ক্রিকেটই। হয়তো ট্রফিটা নিয়ে উল্লাস করেছে ইংল্যান্ড। কিন্তু নিউজিল্যান্ড জিতেছে কোটি কোটি ভক্তের হূদয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads