• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
জয়ের খোঁজে তামিমরা

সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট

জয়ের খোঁজে তামিমরা

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ জুলাই ২০১৯

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়নি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। বৃষ্টির কারণে তাদের ম্যাচ হয় পরিত্যক্ত। ফলে পারস্পরিক শক্তি পরীক্ষাটা হয়নি বিশ্বকাপে। সেই শক্তি পরীক্ষা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার মাটিতে। ইতোমধ্যে তাতে আসল কাজটা করে ফেলেছে স্বাগতিকরা। প্রথমটিতে ৯১ রানে ও দ্বিতীয়টিতে ৭ উইকেটে জিতে এক ম্যাচ আগেই ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে। আজ বুধবার তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল। লঙ্কানরা চাইবে জিতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করতে আর তামিমদের আশা জয় দিয়ে সফর শেষ করা।  

সিরিজ হারিয়ে এখন শ্রীলঙ্কার কাছে হোয়াইটওয়াশ লজ্জার সম্মুখীন টাইগাররা। তাই এবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশন তামিমের দলের। অপরদিকে জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিতে চায় শ্রীলঙ্কা। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি।

বিশ্বকাপের ব্যর্থতা মুছে নতুনভাবে পথ চলার লক্ষ্য নিয়ে এবারের শ্রীলঙ্কা সফর শুরু করে বাংলাদেশ। দ্বাদশ বিশ্বকাপে দশ দলের মধ্যে অষ্টম হয় টাইগাররা। ঐ দুঃখ ভুলতে তিন ম্যাচের সিরিজে ভালো খেলার লক্ষ্যই ছিল তামিমের নেতৃত্বাধীন দলটির। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে পুরোপুরি নিষ্প্রভ বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান বাদে দলের সকল খেলোয়াড়ই ফ্লপ। দু’ম্যাচের কোনো বিভাগেই একসঙ্গে জ্বলে উঠতে পারেনি দল। তাই টানা দু’ম্যাচ হেরে শেষ ওয়ানডে বাকি থাকতেই সিরিজ খুইয়ে বসে বাংলাদেশ।

অনুশীলন ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছিল তারা। ২৮৩ রানের টার্গেট ১১ বল বাকি রেখেই স্পর্শ করে ফেলে বাংলাদেশ। তাই আত্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে টগবগেই ছিল টাইগাররা। কিন্তু মূল লড়াইয়ে এসে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশ।

প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার পেসার লাসিথ মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচে ৯১ রানে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে কুশল পেরেরার সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৩১৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। পেরেরা মারমুখী মেজাজে ৯৯ বলে ১১১ রান করেন। জবাবে ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে লড়াইয়ে ফেরান মুশফিকুর-সাব্বির। পঞ্চম উইকেটে দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন তারা। ৯৯ বলে ১১১ রানের জুটি গড়েন মুশফিক-সাব্বির। এতে খেলায় ফিরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৭টি চারে ৫৬ বলে ৬০ রান করে থেমে যান সাব্বির। এরপর উইকেটে সেট হওয়া মুশফিককে কেউই সঙ্গ দিতে না পারায় ২২৩ রানে গুটিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশকে। মুশফিক করেন ৮৬ বলে ৬৭ রান।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপদেই পড়ে বাংলাদেশ। আবারো ব্যর্থ হন টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। স্কোরবোর্ডে ৮৮ রান যোগ হতেই পাঁচ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে। এ অবস্থায় আবারো বাংলাদেশের ত্রাণকর্তার ভূমিকা নেন মুশফিক। এবার আর সাব্বিরের সহায়তা পাননি তিনি। পেয়েছেন লোয়ার-অর্ডারের মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গ। তাই সপ্তম উইকেটে ৮৪ রান শ্রীলঙ্কার বোলারদের কাছ থেকে আদায় করে নেন মুশফিক-মিরাজ। এতে ২০০ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশের স্কোর।

মিরাজ ৪৩ রানে থামলেও এক প্রান্ত আগলে বাংলাদেশকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন মুশফিক। তার চেষ্টা পুরোপুরি সফল না হলেও, ৮ উইকেটে ২৩৮ রানের সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছাতে পারে বাংলাদেশ। কারণ শতরানের আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিল টাইগাররা। দলকে লড়াই করার পুিঁজ এনে দিতে না পারার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত আক্ষেপও ছিল মুশফিকের। কারণ মাত্র ২ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মুশফিক। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১০ বলে অপরাজিত ৯৮ রান করেন মুশফিক।

তবে বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ২৩৯ রান টপকাতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি শ্রীলঙ্কার। ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দোর ৮২ ও সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩২ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলে শ্রীলঙ্কা। ৪৪ মাস পর দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ নিল করুনারত্নের দল।

সিরিজ হারের পর হতাশা ঝরেছে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিমের। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ইনজুরির কারণে ও দলের সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান বিশ্রামের জন্য শ্রীলঙ্কা সফরে আসেননি। তাই দলের নেতৃত্ব ভার বাঁ-হাতি ওপেনার তামিমের কাঁধে। সিরিজ হার নিশ্চিত হওয়ার পর তামিম বলেন, ‘আমাদের ভালো শুরু দরকার ছিল। কিন্তু একশর আগেই ৫ উইকেট হারানোয় সবকিছুই কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও ২৩৮ রানের পুিঁজতে আমরা যেভাবে বোলিং করেছি তাতে ৩০০ রানও যথেষ্ট হতো না। আমরা কঠোর পরিশ্রমের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা ভালো করতে সহজ উপায় খুঁজেছি।’

প্রথম দুই ম্যাচে দলের টপ-অর্ডারের ব্যর্থতা বেশ চোখে পড়েছে। টপ-অর্ডারদের এই ব্যর্থতায় অনেক বেশি চাপে পড়ে যান মুশফিক, দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে তা স্বীকার করেন তিনি। মুশফিক বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করা আমার জন্যও অনেক কঠিন। অনেক সময় ঝুঁকি নিতে চাইলেও ব্যাক অফ মাইন্ডে থাকে যে, উইকেট পড়ে গেলে হয়তো-বা রানটাও হবে না। পরের দিকে বা শেষের দিকে কেউ তো নেই। তখন কঠিন হয়ে যায়।’

ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থতার বৃত্তে থাকলেও বাংলাদেশের বোলাররা নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। দুই ম্যাচে কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান নিয়েছেন ৪ উইকেট। প্রথম ম্যাচে ৬২ রানে ৩ উইকেট নিলেও, পরেরটিতে উইকেটশূন্যই ছিলেন ডান-হাতি পেসার শফিউল ইসলাম। এছাড়া মিরাজ ২টি, সৌম্য-রুবেল ১টি করে উইকেট নেন। প্রথম দুই ম্যাচে যখন দলের খেলোয়াড়দের এই হাল, সেক্ষেত্রে তৃতীয় ম্যাচে একাদশে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনাই অনেক বেশি। এখনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তাসকিন আহমেদ, ফরহাদ রেজা এবং এনামুল হক বিজয়ের। তাই হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে এই তিনজনের যে কারো একাদশে সুযোগ সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads