• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
চলচ্চিত্রে সুদিন কি আদৌ ফিরবে?

এদেশের চলচ্চিত্রে সুদিন কি আদৌ ফিরে আসবে?

সংরক্ষিত ছবি

ঢালিউড

চলচ্চিত্রে সুদিন কি আদৌ ফিরবে?

  • প্রকাশিত ২৪ মে ২০১৮

রাফিউজ্জামান রাফি

কয়েক বছর ধরে কিছুদিন পরপর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ব্যাপারে একটি বাক্য শুনে আসছি। তা হলো, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসছে।’ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর পরিবর্তন হলেও এই এক দশকে এই বাক্যটির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বাক্যটি আজো ঘটমান বর্তমান কালেই আবদ্ধ রয়ে গেল। অর্থাৎ ‘বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে এসেছে’ কথাটি বলার মতো অবস্থা আজো আমাদের হলো না। অথচ আমাদেরই চলচ্চিত্র নকল করা এবং ছোট বৌ, বড় বৌ, মেজো বৌতে আবদ্ধ থাকা কলকাতার চলচ্চিত্রে কীভাবে টুক করে সুদিন ফিরে এলো!

ওরা এখন দেদারসে কত রকমের মুভি বানাচ্ছে। কেউ মেইন স্ট্রিমের মুভি বানাচ্ছে, কেউ আর্ট ফিল্ম বানাচ্ছে। ওরা যখন বছরে কয়েকটি করে প্রশংসার দাবিদার চলচ্চিত্র বানাচ্ছে, সেখানে গত এক দশকের চলচ্চিত্র নিয়ে জরিপে বসে দেখতে হচ্ছে দশ বছরে কয়টা ভালো চলচ্চিত্র আমাদের কপালে জুটেছে। অবশ্যই হাতেগোনার মতো তা। তাও আবার নিয়মিত নয়। দীর্ঘ সময় দুর্ভিক্ষে কাটিয়ে আমরা পাচ্ছি বলার মতো একটা চলচ্চিত্র। অতঃপর আবার দুর্ভিক্ষ, সে দুর্ভিক্ষ কাটিয়ে পেয়েছি আরেকটি  চলচ্চিত্র। নিয়মিত ভালো চলচ্চিত্র পাওয়াটা এদেশের মানুষের কাছে যেন অধরাই হয়ে আছে। আর এমন দীর্ঘ কালক্ষেপণের পর যখন একটি চলচ্চিত্রের আগমন হয়, তখন আমাদের চলচ্চিত্র বোদ্ধারা সেই পুরনো কথা নতুন করে লেখেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রে সুদিন আসছে’। সুদিন ফিরে এসেছে কথাটা আর বলা হলো না তাদের। সুদিন আসছে তো শুনছি সেই কবে থেকেই। আজো তো এলো না!

এক গিয়াস উদ্দিন সেলিম ‘মনপুরা’ নির্মাণের নয় বছর পর বানালেন ‘স্বপ্নজাল’। এক অমিতাভ রেজা ‘আয়নাবাজি’ বানালেন, কাঁপালেন সারা দেশ; কিন্তু তার দ্বিতীয় মুভি কবে আসবে আমরা কেউ জানি না। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ বানানোর পর দীপংকর দীপন দ্বিতীয় চলচ্চিত্রের কথা বললেন। জানি না তা কবে আসবে। এই হাতেগোনা ক’জন চলচ্চিত্রকার, যারা আমাদের আশার আলো দেখিয়েছেন, তারাও তো আসছেন দীর্ঘ বিরতির পর। ওপারে ঋতুপর্ণ ঘোষদের অনুপস্থিতিতে নতুনরা হাল ধরলেও এপারে সেলিম, ফারুকী, অমিতাভ রেজা, দীপনের বিরতিতে অন্যান্য যারা আছেন, তাদের কেউই হাল ধরতে পারছেন না। তারা নাকি সবাই আবার হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা টাইপের বৃহদাকারের নির্মাতা একেকজন! অথচ তাদের কাজের দিকে একটু নজর দিলেই দেখা যায় তারা সবাই এখনো সেই পুরনো ছকে বাঁধা যত অমুক এলাকার মেয়ে তমুক এলাকার ছেলে, অমুক ভাই জিন্দাবাদ, মারছক্কা ধর তক্তা টাইপের ছবি বানিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে ফারুকীদের বিরতিতে এদেশের দর্শকরাও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন ওপারের চলচ্চিত্রের ওপর। শুধু দর্শকরাই  নন, ইতোমধ্যে আমাদের এক গুণী অভিনেত্রী শুধু ভালো চলচ্চিত্রের জন্য থিতু হয়েছেন কলকাতায়। শোনা যাচ্ছে, এদেশের আরো এক নির্ভরযোগ্য নায়কও নাকি বাজার পাততে চাচ্ছেন কলকাতায়। এই যখন অবস্থা তখন আমার সন্দেহ হয়, এদেশের চলচ্চিত্রে সুদিন কি আদৌ ফিরে আসবে?

ফারুকী, তৌকীরের কাছেই বা আমরা কত দাবি করব? তারা আর কয়টি চলচ্চিত্রেরই জন্ম দেবেন? মেইন স্ট্রিমের মুভিতে জাজ যাওবা একটু হাল ধরেছিল, তাও আর হলো কই? জাজ তো সওদাগর সেজে অন্য দেশে বাণিজ্যে ব্যস্ত। যৌথ প্রযোজনায় তারা ঢাকা, কলকাতায় ব্যস্ত। যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে তো আর জোরসে গর্ব করার মতো বিশেষ কিছু থাকে না।

এই যখন অবস্থা তখন আমার মনে হয়, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসছে’ বাক্যটি এখনো ঘটমান বর্তমানেই রয়েছে। এটা যে এখনো অতীতকালে (বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসতে চেয়েছিল) ট্রান্সফার হয়নি, এটাই তো আমাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads