• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
‘মানুষ বাঁচাতে পানির পাইপ চেপে ধরেছিলাম’

এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় একটি শিশু ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপের লিকেজ চেপে ধরে রেখে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা

ছবি : সংগৃহীত

বৈচিত্র

‘মানুষ বাঁচাতে পানির পাইপ চেপে ধরেছিলাম’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ মার্চ ২০১৯

রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় একটি শিশু ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপের লিকেজ চেপে ধরে রেখে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছিল। অধিকাংশ মানুষ যেখানে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিল, সেখানে যেন ব্যতিক্রম শিশুটি। এই ঘটনার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে ওঠে। অনেকে ফেসবুকে শিশুটির ছবি শেয়ার দিয়ে তার কাজের প্রশংসা করেছেন। উদ্ধারকর্মে তার অংশ নেওয়ার ঘটনাটি দেশবাসীর টনক নাড়িয়ে দিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে আগুন লাগা এফ আর টাওয়ারের পাশে এই শিশুটির সঙ্গে কথা হয়। শিশুটির নাম নাঈম ইসলাম। সে কড়াইল বস্তি এলাকার বৌ বাজারের রুহুল আমিনের ছেলে। কড়াইল বস্তির বৌ বাজারের আনন্দ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে সে। তার বাবা রুহুল আমিন ডাব বিক্রি করেন। আর মা নাজমা বেগম গৃহিণী। তার একটি ছোট বোন রয়েছে।

এফ আর টাওয়ারের সামনে কেন এসেছিল জানতে চাইলে নাঈম বলে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার আগে মা টিভি ছাড়তে বলেন তাকে। টিভিতে আগুনের ঘটনা দেখে দৌড়ে এফ আর টাওয়ারের সামনে ছুটে আসি। এসে দেখি পাইপ ফেটে পানি বের হচ্ছে। তখন নিজ তাগিদে পাইপ হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখি। এ সময় একজন একটি পলিথিন এনে দেয়। তখন পাইপের লিকেজে পলিথিন পেঁচিয়ে বসে থাকি। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম যেন আগুন তাড়াতাড়ি নিভে যায়।

নাঈম আরো জানায়, ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এর আগেও সাহায্য করেছিল সে। গুলশানে একটি বড় অগ্নিকাণ্ডের সময় (ঠিক মনে করতে পারেনি) পাইপ দিয়ে পানি ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছিল সে। সে সময় উদ্ধারকারীদের সঙ্গে কাজ করেছিল সে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর একজন তাকে টাকা দিতে চেয়েছিল কিন্তু সে টাকা নেয়নি। টাকা নিলে ঘুষ খাওয়া হয়ে যাবে। তাই টাকা নেয়নি সে।

আগুন থেকে মানুষ বাঁচাতে ছুটে আসা ছোট্ট নাঈমের নিজেরই রয়েছে দুঃসহ স্মৃতি। কড়াইল বস্তিতে চোখের সামনে নিজেদের ঘর পুড়ে যেতে দেখেছে সে।

নাঈম বলে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের অনেক ধন্যবাদ, তারা আগুন নেভাতে অনেক কষ্ট করেছে। আমার মনে হচ্ছিল, শত শত লোক মারা যাবে, যাতে না মারা যায়, এ জন্য আমি পাইপটা ধরে রেখেছিলাম, যাতে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আগুন নিভিয়ে মানুষকে বাঁচাতে পারবে। আমি বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হতে চাই। পুলিশরা অনেক সহযোগিতা করেছে ফায়ার সার্ভিসকে। আর তারা এখান থেকে অনেক লোককে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছে, যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি যায়। আর তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

পাইপ ধরে রাখতে কষ্ট হয়েছে কি না জানতে চাইলে নাঈম বলে, এটা কোনো কষ্টের না। কিন্তু এত মানুষ মারা গেল, এটা কষ্ট লাগছে।

ঘটনাস্থলে নাঈমের পাশেই ছিলেন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। নাঈম পুলিশ হতে চায় শুনে সাকিন নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অবশ্যই ভালো লাগছে। সে গতকাল (বৃহস্পতিবার) যা করেছে, যা দেখাইছে, তা সাহসের। আশা করি, তার আশা পূরণ হবে। আমাদের সহযোগিতা থাকবে।

উপপরিদর্শক (এসআই) আজিজ বলেন, ছোট বাচ্চা হলেও অনেক বুদ্ধিমান। ডিসিসিতে যখন আগুন লাগে, তখনো অনেক কাজ করেছে আমাদের সঙ্গে। নিজে থেকে কাজ করার মনোবৃত্তিটা বিরল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ছবি দিয়ে প্রশংসা করা হচ্ছে জানালে নাঈম লাজুক হাসি দিয়ে বলে, হ, আমি শুনছি। আমারে অনেকে কইছে।

শিশু নাঈমের এই মানবিক কাজে খুশি হয়ে তাকে উপহার স্বরূপ পাঁচ হাজার ডলার প্রদানের ঘোষণা দিলেন এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। পাশাপাশি তার যাবতীয় পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর ফারুক সামি জানান, আমি নাঈমের কাজে খুবই খুশি হয়েছি। নাঈম খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছে, সে পুলিশ অফিসার হতে চায়। তার ইচ্ছে পূরণ করতে আজ থেকে তার পড়ালেখার দায়িত্ব নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে তার উপহারের পাঁচ হাজার ডলারও প্রদান করব। এ বিষয়ে নাঈমের পরিবারের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলাপ হয়েছে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ২৩-তলা এফ আর টাওয়ারের ৯ তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নেভানো ও হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, রেড ক্রিসেন্টসহ ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত অনেক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা ৭টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads