• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
খালেদাকে কারাগারে রেখে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না : মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করার প্রতিবাদে ও তার মুক্তির দাবিতে সোমবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে প্রতীকী অনশনে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরূল ইসলাম আলমগীর

ছবি : বাংলাদেশের খবর

নির্বাচন

খালেদাকে কারাগারে রেখে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না : মির্জা ফখরুল

ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির প্রতীকী অনশন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ জুলাই ২০১৮

কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের প্রতিবাদ এবং তার মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সাত ঘণ্টার প্রতীকী অনশন কর্মসূচি শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের পানি খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এর আগে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে একাদশ নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এ পরিবেশ হলে এদেশে নির্বাচন হবে, অন্যথায় হবে না।

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না, তার ন্যূনতম যে প্রাপ্য তাকে দেওয়া হচ্ছে না। এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তার সবকিছু রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এর উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হচ্ছে তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা এবং বিএনপিকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।

অনশন কর্মসূচি থেকে সব রাজনৈতিক ও পেশাজীবীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার জন্য নয়, দেশের মুক্তি, ১৬ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য, মানুষকে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সকাল ৯টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী মহানগর নাট্যমঞ্চে হাজির হন। সেখানে মাদুর বিছিয়ে তারা অনশনে বসেন পড়েন। সকাল ৯টায় দলের মহাসচিবের নির্দেশে যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলেও গণঅনশনে আগত নেতাকর্মীরা বৃষ্টির মধ্যেই স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, যতই বৃষ্টি হোক কর্মসূচি চলবে। তবে ১০ মিনিট পর বৃষ্টি থেমে যায়। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন, ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি থাকতে দেব না।’ ‘জিয়া-খালেদা, খালেদা-জিয়া’। অনশনস্থলের পেছনে খালেদা জিয়ার ছবি ও তার মুক্তির দাবিতে ব্যানার টাঙানো হয়। বিএনপির কর্মসূচি উপলক্ষে মহানগর নাট্যমঞ্চের চারপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতীকী অনশনে বসেছিল বিএনপি।

অনশন কর্মসূচি চলাকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারকে জনসম্মুখে আনার দাবি জানিয়ে বলেন, দেশের সংবিধান অনুযায়ী, আইন অনুযায়ী কাউকে গ্রেফতার করতে হলে জানাতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করতে হবে। কিন্তু গত রোববার রাতে ইসহাক সরকারকে গ্রেফতার করার পর দুপুর পর্যন্ত তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। তার অবস্থান সম্পর্কে পরিবারকেও কোনো কিছু জানানো হয়নি। এ কারণে ইসহাক সরকারকে নিয়ে বিএনপি চিন্তিত। বিএনপি অবিলম্বে তার খোঁজখবর জানতে চায়। তার পরিবারকে জানানো হোক, সে কোথায় আছে, কেমন আছে।

উপস্থিত ইসহাক সরকারের স্ত্রী এ সময় বলেন, গত রোববার রাত সোয়া ১১টার দিকে বনানী থেকে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার কোনো তথ্য তারা জানতে পারেননি। তিনি তার স্বামীকে একনজর দেখতে চান। অবিলম্বে তাকে সবার সামনে হাজির করা হোক।

প্রতীকী অনশনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরো উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, নিতাই রায় চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, কবির মুরাদ, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ। কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্য জোটের মাওলানা আবদুল করীম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক আখতার হোসেন খান ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। জোটের বাইরে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রতীকী অনশনে সংহতি প্রকাশ করে কিছু সময় অবস্থান করেন। তবে তিনি বক্তব্য রাখেননি।

আন্দোলনের বিকল্প নেই : অনশন কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, খালেদা জিয়াকে সরকার অন্যায়ভাবে জেলখানায় বন্দি করে রেখেছে। তিনি অমানবিক জীবনযাপন করছেন। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি ।

এ সময় অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মুবারক হোসাইন এবং শ্রমিক নেতা লস্কর মুহাম্মাদ তসলিম।

যেকোনো সময় ডাক আসবে : অনশনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, যেকোনো সময় ডাক আসতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে যথেষ্ট যোগ্য ব্যক্তি আছেন। তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। হঠাৎ হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগ তিন তিনবার দেশের গণতন্ত্রকে বিধ্বস্ত করেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads