• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সিটি নির্বাচনে অনাগ্রহ বিএনপির তৃণমূলের

সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে অনাগ্রহী বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা

প্রতীকী ছবি

নির্বাচন

সিটি নির্বাচনে অনাগ্রহ বিএনপির তৃণমূলের

কেন্দ্রীয় নেতাদের ভিন্নমত

  • রেজাউল করিম লাবলু
  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই ২০১৮

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, নির্বাচনের কারণে মাসের পর মাস তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের যা করতে হয় না। তাছাড়া সিটি নির্বাচনের বাড়তি বোনাস ১০-১৫টি করে নতুন মামলা। তারা আরো বলছেন, খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনে এরই মধ্যে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এরপর আর তাদেরকে বিতর্কিত করার জন্য অন্য কোনো সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রয়োজন তারা দেখছেন না।

তবে তৃণমূল নেতাদের এমন মনোভাবের সঙ্গে একমত নন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তৃণমূল নেতাদের মতোই কষ্ট সয়ে রাজনীতির এই অবস্থানে এসেছেন তিনিও। অল্পতে হতাশ হলে চলবে না। আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে।

তিনি আরো বলেন, সিটি নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় না। তাই এই নির্বাচনে বিএনপি বার বার যাবে। সামনের তিন সিটি নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেব। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।

উল্লেখ্য, আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সিটি নির্বাচনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের এই অনীহার পাশাপাশি খোদ প্রার্থীদেরও কেউ কেউ এ বিষয়ে তাদের অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন। খুলনা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেওয়া মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, বোনাস হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ১০-১৫টি করে নতুন মামলার আসামি হয়েছেন।

তিনি বলেন, বিএনপির সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য এরই মধ্যে পূরণ হয়েছে। জনগণ দেখেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার নয়। তারা বিতর্কিত হয়ে পড়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এখানে নিজের মত প্রকাশের সুযোগ নেই। আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত তারা থাকার চেষ্টা করবেন। প্রশাসনের সহযোগিতায় বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হলে কী আর করার আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক নেতা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ন্যাড়া বেলতলায় একবার গেলেও বিএনপি বার বার যাচ্ছে। খুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়েছে। সেখানে ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। বিষয়টি সারা দেশের মানুষ দেখেছে। এরপরও বিএনপি গাজীপুর সিটি নির্বাচনে গেছে। সেখানেও একই ঘটনা ঘটেছে। এত কিছুর পর সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতে আর কোনো সিটি নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না।

তিনি বলেন, কারচুপি ঠেকাতে না পারলে এ ধরনের নির্বাচনে না যাওয়াই ভালো। এতে করে বরং সরকারদলীয় প্রার্থীদেরই বৈধতা দেওয়া হয়।

ছাত্রদলের সাবেক নেতা রয়েল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রথমত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন তো দূরের কথা স্থানীয় নির্বাচনও যে সুষ্ঠু হবে না, তা প্রমাণ হয়েছে খুলনা ও গাজীপুরে। এখন আর তাদের স্বরূপ নতুন করে জনগণকে চেনানোর কিছু নেই। দ্বিতীয়ত স্থানীয় নির্বাচনে গেলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১০-২০টা করে মামলা হয়, তাদের পালিয়ে বেড়াতে হয়। এতে তারা আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তৃণমূলের এমন মনোভাবের বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগ যে কারচুপি করে তা প্রমাণ করার জন্য বার বার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যাবে বিএনপি। তবে কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনে যাবে না তার দল। স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে শুধু সরকার নয়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকাও জনগণের সামনে স্পষ্ট করা হচ্ছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারছে’। প্রথমত আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় নির্বাচন তো দূরের কথা স্থানীয় নির্বাচনও যে সুষ্ঠু হয় না, তা প্রমাণ করা। দ্বিতীয়ত কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলন চালিয়ে আসছে তার যৌক্তিকতা প্রমাণ করা।

তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট এই সিটি নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে তা তুলে ধরেছেন। এটাই বিএনপির অর্জন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads