• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সুজানগরে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি

খন্দকার আজিজুল হক আরজু, আহমেদ ফিরোজ কবির, সেলিম রেজা হাবিব, মুকবুল হোসেন সল্টু

ছবি : বাংলাদেশের খবর

নির্বাচন

পাবনা-২ আসন

সুজানগরে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি

কে পাচ্ছেন ধানের শীষ

  • কানু সান্যাল, পাবনা  
  • প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়া আংশিক) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ, শোডাউনসহ ব্যাপক কার্যক্রম করছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দল থাকলেও গত নির্বাচনের ফলাফল এবং নির্বাচনী মাঠের বাস্তবতায় এই আসনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে। সে কারণে আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে কে নৌকার মাঝি ও কে ধানের শীষ প্রতীক পাচ্ছেন- এ নিয়ে নির্বাচনী এলাকা এখন সরগরম।

পাবনা-২ আসন সুজানগর উপজেলার একটি পৌরসভা ও দশটি ইউনিয়ন এবং বেড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩২৪। স্বাধীনতার পর থেকে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার বিএনপি ও একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আসনের ৮ নির্বাচনের বাস্তবতায় ভোটের শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এলাকার সচেতন জনগণ মনে করছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যেই হবে ভোটের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গত কয়েক মাস ধরে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।

সুজানগর উপজেলা নির্বাচন অফিস জানায়, গত ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে তিনবার আওয়ামী লীগ ও দুইবার বিএনপির প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ওসমান গনি ওজি খান, ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আহমেদ তফিজ উদ্দিন মাস্টার নির্বাচিত হন। তবে আহমেদ তফিজ উদ্দিন মাস্টার নির্বাচিত হওয়ার দুই বছরের মাথায় মারা গেলে ১৯৯৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী একেএম সেলিম রেজা হাবিব নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী একে খন্দকার দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলে আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী খন্দকার আজিজুল হক আরজু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিগত সময়ের নির্বাচনে ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের অবস্থান বেশ শক্ত।

আসন্ন নির্বাচনে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। তাদের মতে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুর সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি দলের বাইরে বিএনপি, জামায়াত ও হাইব্রিড লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে চলছেন বলে দাবি দলীয় নেতাকর্মীদের।

এ পরিস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশায় নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার ও বিলবোর্ড টানিয়ে তাদের প্রার্থিতা জানান দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল ভোটার এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে যেসব প্রার্থীর নাম বেশি আলোচনা হচ্ছে তারা হলেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক তথ্য ও গ্রন্থাগারবিষয়ক সম্পাদক একেএম কামরুজ্জামান উজ্জ্বল, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মির্জা এমএ জলিল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকবিষয়ক সদস্য আশিকুর রহমান খান সবুজ, ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ ফিরোজ কবির, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইমরাজ সিরাজ সম্রাট। এদের মধ্যে নবীন প্রার্থীরা মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী। আওয়ামী লীগের তৃণমূল ভোটাররা মনে করেন, নতুনদের মধ্য থেকে কেউ মনোনয়ন পেলে আসনটি সহজে দখলে নেওয়া সম্ভব হবে।

এদিকে এবারো প্রার্থী হতে চান বর্তমান সংসদ সদস্য আজিজুল হক আরজু। এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ হতে পারেননি। কর্মীদের অভিযোগ, তিনি ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। এছাড়া তিনি এলাকায় কম থাকেন।

তরুণ নেতা কামরুজ্জামান উজ্জ্বল গত দশ বছরে এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলকে সুসংগঠিত করেছেন বলে দাবি করেন সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহিন। তাই তিনি এই আসনে নৌকার অন্যতম যোগ্য মাঝি বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি রাজনীতিক মহল মনে করে।

আহমেদ ফিরোজ কবির ঢাকায় অবস্থান করলেও উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে এলাকায় সৎ, আদর্শ এবং সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকবিষয়ক সদস্য আশিকুর রহমান খান সবুজ রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হওয়ায় এবং নিজের কাজকর্মে এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইমরাজ সিরাজ সম্রাট তরুণ। তরুণ এই নেতাও নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে তুলেছেন।

অপরদিকে বিএনপি থেকে মনোয়ন প্রত্যাশীরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও সাবেক এমপি আলহাজ অ্যাডভোকেট একেএম সেলিম রেজা হাবিব, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও বিজিএমইএ সদস্য শিল্পপতি আবদুল হালিম সাজ্জাদ, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ।

নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিদলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। অবশ্য নির্বাচনী মাঠে পোস্টার ও বিলবোর্ড টানিয়ে তাদের প্রার্থিতা জানান দিলেও দলীয় নেতাকর্মী এবং সচেতন মহলে কেবল সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম সেলিম রেজা হাবিব, পাবনা জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শিল্পপতি আবদুল হালিম সাজ্জাদ এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনকে নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এই আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে দাবি বিএনপির নেতাকর্মীদের।

এছাড়া জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি, সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মুকবুল হোসেন সন্টু।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads