• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

নির্বাচন

সব নির্বাচন কমিশনারের অপসারণ চায় টিআইবি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান যেভাবে একের পর এক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছে তা অভূতপূর্ব ও গোটা জাতির জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের হাতে এমন রাষ্ট্রীয় অমর্যাদা বন্ধ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) সব কমিশনারকে আশু অপসারণ ও ইসিকে ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করে সংস্থাটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশন সচিবালয় এবং অন্য কমিশনারদের ন্যক্কারজনক কাদা ছোড়াছুড়ির যে খবর দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা অভূতপূর্ব ও গোটা জাতির জন্য বিব্রতকর। অন্তত একজন কমিশনার একজন নিরাপত্তারক্ষীর নিয়োগের জন্য কমিশন সচিবালয়কে সুপারিশ করেছিলেন বলে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়। সেই সুপারিশ রক্ষা করা হয়নি বলে কমিশনাররা তোলপাড় করেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘সাংবিধানিক পদে থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ যে সরাসরি নৈতিক স্খলন সেটা অনুধাবন করার মতো অবস্থাতেও নির্বাচন কমিশনাররা নেই। অন্যদিকে কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে কমিশনারদের অনাকাঙ্ক্ষিত দ্বন্দ্বের সংবাদ প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদাকে পদদলিত করেছে। সাংবিধানিক পদাধিকারীরা যখন নিজেদের সচিবালয়ের বিরুদ্ধেই অনিয়মের অভিযোগ করেন, তখন তার গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছি।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ইসি ও এর ব্যবস্থাপনায় পচন ধরেছে। আর এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের মতো সুবিবেচনা ও সক্ষমতা আমরা সিইসিসহ অন্যান্য কমিশনার বা কমিশন সচিবালয়ের কাছে আশা করার মতো সাহস পাচ্ছি না। কারণ একের পর এক কেলেঙ্কারির পর তারা যেভাবে স্বপদ আঁকড়ে ধরে আছেন, তাতে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে সংশ্লিষ্ট সবাই নিজেদের জবাবদিহিতা ও ন্যূনতম আত্মসমালোচনার ঊর্ধ্বে বলে ধরে নিয়েছেন।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এই ইসি দেশকে এক অভূতপূর্ব নির্বাচনের দায় চাপিয়ে দিয়েছে, যার পরতে পরতে অনিয়মের অভিযোগ সত্ত্বেও কোনো তদন্ত হয়নি। সিইসিসহ অন্যান্য কমিশনার এবং সচিবালয়ের কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের নামে জনগণের করের টাকা হরিলুট করেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। তারপরও ছিল অস্বস্তিকর নীরবতা। এরপর ধরা পড়ল বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা জাতীয় পরিচয়পত্র নিচ্ছেন অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে, যাতে জড়িত কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এভাবে দেশবাসীর সঙ্গে ভয়াবহ প্রতারণা ও দেশের নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকি সৃষ্টি করা হলো। এখন সবাই মিলে লড়াই করছেন নিম্নপদস্থ কর্মচারী নিয়োগের তদবির আর অনিয়ম নিয়ে।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ইসি যে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সেই সত্যটাও কমিশন সংশ্লিষ্টরা সম্ভবত ভুলে গেছেন। তাদের অধীনে ভবিষ্যৎ যে কোনো কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। গণতন্ত্রের স্বার্থেই এহেন অবমাননাকর অধ্যায়ের শেষ হওয়া দরকার। ব্যর্থতা এবং নৈতিক স্খলনের দায় নিয়ে সিইসি বা অন্য কমিশনাররা যে সরে যাবেন না সেটা এতদিনে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তারা তাদের শপথের অবমাননা করছেন, সংবিধান অবমাননা করছেন এবং নিয়োগকর্তা হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অসম্মানের ঝুঁকি সৃষ্টি করছেন।’

তিনি বলেন, আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতি সশ্রদ্ধ আবেদন করছি, এই বিতর্কিত ব্যক্তিদের দ্রুত অপসারণের পাশাপাশি ইসি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। পাশাপাশি এ পর্যন্ত যত অনিয়ম হয়েছে দুদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তার তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads