• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
শিক্ষাকে কালিমামুক্ত করুন

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

মতিঝিল আইডিয়ালে ভর্তি কেলেঙ্কারি

শিক্ষাকে কালিমামুক্ত করুন

  • প্রকাশিত ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শিশুর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক ও নান্দনিক বিকাশ সাধন এবং তাকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করাই প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য। আবার বাংলাদেশের সংবিধানেও শিক্ষাকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এসব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। সেই প্রাথমিক স্তরে ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি জাতিকে হতাশ করেছে। গত বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাদেশের খবরে প্রকাশিত ‘মতিঝিল আইডিয়ালে ভর্তি কেলেঙ্কারি’ প্রতিবেদনটিতে শিক্ষাগুরু হিসেবে আমাদের শিক্ষকদের দৈন্যদশা ফুটে উঠেছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তিনি, তার সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম খান এবং কয়েক সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে অকৃতকার্যদের কৃতকার্য দেখিয়ে ভর্তি করে নিয়েছেন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের মতিঝিল, বনশ্রী ও মুগদা শাখার চলতি বছরের ওই দুই শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের ঘষামাজা করা উত্তরপত্র পাওয়া গেছে। যেখানে ভুল উত্তর শুদ্ধ করে পরীক্ষার্থীকে পাস দেখিয়ে ভর্তি করা হয়েছে এবং এর বিনিময়ে মাথাপিছু তিন লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। এ রকম ৬৯টি উত্তরপত্র জব্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলা ভার্সনের ভর্তির দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন ইংরেজি ভার্সনের দুর্নীতির সত্যতা জানতে তদন্ত চলছে।

কিন্তু এই অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমের বিরুদ্ধে অতীতেও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। এই একই ব্যক্তি ২০০৭ সালেও ভর্তিতে দুর্নীতি করে বরখাস্ত হন এবং ২০১২ সালে তার এমপিও স্থগিত করা হয়। অথচ কোন অদৃশ্য শক্তিবলে অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমের বরখাস্ত এবং এমপিও স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং তিনি ভর্তির দুর্নীতি সপাটে চালিয়ে যাচ্ছেন- তা আমাদের বোধগম্য নয়। আজ দেশব্যাপী শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের প্রশ্নে সাধারণ মানুষকে কথা বলতে শোনা যায়। যখন শিক্ষা কারিকুলাম, সৃজনশীল প্রশ্ন, পিএসসি-জেএসসি, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে ভুল ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক হিমশিম খাচ্ছেন, তখন রাজধানী ঢাকার নামিদামি স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতি সাধারণ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে বাধ্য।

এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট ব্যাপকভাবে সক্রিয় এবং তারা দেশ ও জাতির চরম ক্ষতির বিনিময়ে নিজেদের লাভালাভের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে চলেছে, তা কারো বোঝার বাকি থাকে না। এর নেতিবাচক প্রভাব বহুমুখী হতে বাধ্য। এমতাবস্থায় কে শিক্ষক, কে ক্ষমতাবান তা দেখার সুযোগ নেই। দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের অবশ্যই কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, অপরাধীর শাস্তির বিধান এবার তারা করবেন। গোটা জাতি তার এই আশ্বাসের দিকে চেয়ে আছে।

‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’— এটি বহুল প্রচলিত একটি কথা। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে দেশ ও জাতির বর্তমান-ভবিষ্যৎ। কিন্তু সেই শিক্ষা ক্ষেত্রে খোদ শিক্ষকের হাতেই দুর্নীতি— শিক্ষাব্যবস্থায় কালিমা লেপে দিয়েছে। সুতরাং আমরা আশা করি, এ ব্যাপারে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারের সব বিভাগ সমন্বিতভাবে একটি অভিন্ন সিদ্ধান্তের ভেতর দিয়ে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে রাখবে কালিমামুক্ত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads