• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

বাল্যবিয়েমুক্ত খুলনার পৌর এলাকা

সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি

  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এ দেশের মেয়েদের পশ্চাৎপদতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বাল্যবিয়েকে দায়ী করা হয়। বর্তমানে সেই বাল্যবিয়েকে রুখে দিচ্ছে আমাদের কিশোরী মেয়েরা। সাম্প্রতিক সময়ে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার নবম শ্রেণির ছাত্রী আসমা আক্তার নিজেই নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছে। আবার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে খুলনার পৌর এলাকা বাল্যবিয়েমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার। এসব উদ্যোগই আমাদের নারী শিক্ষা, জাগরণ ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে নিঃসন্দেহে। তবে বাল্যবিয়ে যে নারীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় এবং সে বিষয়ে যে নাগরিক সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা উপরোক্ত ঘটনাবলি থেকে বোঝা যায়। 

ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার সব থেকে বেশি এবং ১৮ বছরের আগেই বাংলাদেশে শতকরা ৬৬ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। তবে ইদানীং বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি যে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে কিশোরীরাই তাদের বাল্যবিয়েকে প্রতিরোধ করছে। তেমনি একটি ঘটনা ছিল গত বছরে সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার ২৯৯ স্থানে ১ লাখ ১৪ হাজার ৩২৩টি লাল কার্ড নিয়ে লাখো মানুষের ‘না’ বলার মাধ্যমে বাল্যবিয়েকে বর্জন করা। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে এই সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রমে যোগ দিয়েছিলেন বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং এতদাঞ্চলের এলাকাবাসী। এ ধরনের সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু বাল্যবিয়েকে না বলা হয়নি, বরং শিশু বয়স থেকেই ছেলেমেয়েরা বাল্যবিয়ের মানসিক এবং শারীরিক বিভ্রান্তি ও কুফল সম্পর্কে জানতে পারবে। প্রতি বছর ৯ অক্টোবর বাল্যবিয়ে নিরোধ দিবস পালনের মাধ্যমেও এর কুফল সম্পর্কে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে জানিয়ে দিতে হবে। এবারের ৯ অক্টোবর বাল্যবিয়ে নিরোধ দিবস পালনের ক্ষেত্রে দেশের জেলা-উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সম্পৃক্ততা এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করি।

কিন্তু বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে নিরোধ সংক্রান্ত নতুন আইনের ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’-এ বলা হয়েছে, বিশেষ বিবেচনায় ১৮ বছরের নিচেও বিয়ে বৈধ হবে। এর ফলে বাংলাদেশের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে বাল্যবিয়ের আধিক্য দেখা দিতে পারে। এমতাবস্থায় বাল্যবিয়েকে নিরুৎসাহিত করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভূমিকা আরো জোরালো হতে হবে। আর এর মাধ্যমে পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর মেয়েদের অভিভাবকরা সচেতন হবেন এবং সামগ্রিকভাবে মেয়েদের পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ক্ষমতায়নের বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে। এ ধরনের সামাজিক উদ্যোগের ফলে সমগ্র বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বাল্যবিয়ের অভিশাপ সম্পর্কে অবহিত হবে এবং এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ও সচেতনতা সৃষ্টিতে সক্ষম হবে বলে আশা করি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads