• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

রাজধানীতে গ্যাস সঙ্কট

শীত মৌসুমের আগেই ব্যবস্থা নিন

  • প্রকাশিত ০৭ নভেম্বর ২০১৮

রাজধানী ঢাকার অধিবাসীরা প্রায়ই রান্নার গ্যাস সঙ্কটে ভুগে থাকে। শীত মৌসুমে এটি আরো তীব্র আকার ধারণ করে। এবার শীত আসার প্রাক্কালেই গত রোববার থেকে হঠাৎ গ্যাস সঙ্কটে ভুগছে রাজধানীবাসী। কোথাও কোথাও গ্যাস সরবরাহ নেই বললেই চলে। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়াসহ মোহাম্মদপুর, রিং রোড, শ্যামলী ও রামপুরার বাসিন্দারা এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভুক্তভোগী। বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বৈদ্যুতিক চুলা, এলপি গ্যাস, এমনকি কোথাও কোথাও জ্বালানি কাঠ দিয়ে রান্নার কাজ সারা হয়। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস সঙ্কটের উত্তরণে কোনো নির্দিষ্ট সময় বা তারিখ জানাতে পারেনি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।

বরং আমরা জানতে পারি, মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে ওই ভাসমান টার্মিনাল ও সমুদ্র তলদেশের পাইপলাইনের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলের হাইড্রোলিক ভালভটি অকার্যকর হয়ে পড়ায় এখন ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। কিন্তু সেখানে গ্যাস একেবারে যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে রাজধানীতে গ্যাসের সঙ্কট তীব্র হয়েছে। আর এ কারণেই শিল্পকারখানা, সিএনজি স্টেশন, বাসাবাড়ি— সর্বত্র নতুন করে গ্যাসের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। 

কিন্তু ভাসমান টার্মিনাল ও সমুদ্র তলদেশের পাইপলাইনের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলে যে হাইড্রোলিক ভালভের ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে তা দেশের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা মেরামত করতে না পারলে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী আনার প্রয়োজন পড়বে। সে ক্ষেত্রে এটি চালু হতে কতদিন সময় লাগবে তা বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, যে দেশে শিল্পকারখানা, বাসাবাড়িসহ যানবাহনেও গ্যাসের ব্যবহারের আধিক্য রয়েছে, সেখানে এ ধরনের কারিগরি ত্রুটি মেরামতে নিজস্ব বিশেষজ্ঞ প্রকৌশল দল কেন গড়ে তোলা হবে না? আর তা না করেই বা কেন আমরা পাইপলাইনে এলএনজির বাণিজ্যিক সরবরাহ শুরু করেছি? এসব প্রশ্নেরও যথাযথ উত্তর খোঁজা জরুরি।

রাজধানীর বাসাবাড়িতে গ্যাস সঙ্কট দীর্ঘদিনের। ক্রমান্বয়ে এ সঙ্কট আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার উত্তরণ না ঘটিয়ে বরং নতুন জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় জাতীয়ভাবে গ্যাসের সঙ্কট ঘনীভূত হলো। আসছে শীতে বিভিন্ন লাইনে গ্যাস জমে গিয়ে স্বাভাবিক সরবরাহ আরো বিঘ্নিত হবে। উপরন্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, তিতাসের এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তির যোগসাজশে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দেখা যায়। এই সব বিষয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের অজানা নয়। নিশ্চয়ই এর সমাধানও তাদের জানা। আমরা আশা করব, শীত মৌসুমের আগেই ত্রুটিপূর্ণ হাইড্রোলিক ভালভটির সংস্কার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সঙ্গে করবে এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে উদ্যোগী হবে। একটি দেশে গ্যাসের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধানও মিলছে। সুতরাং একে কাজে লাগিয়ে শিল্পক্ষেত্রের পাশাপাশি বাসাবাড়িতেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে গ্রাহক চাহিদা পূরণ করা বাঞ্ছনীয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads