• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধি জরুরি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৭ নভেম্বর ২০১৮

২০০৯ সালের পর দশমবারের মতো আগামীকাল দেশব্যাপী শুরু হতে যাচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা। এ বছর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি মিলিয়ে মোট ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ১২৩ শিশু শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে একধরনের তাড়না অনুভূত হয়েছে বিগত বছরগুলোতে। সঙ্গে রয়েছে উদ্বিগ্নতাও। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জ্ঞানার্জনের পথে এ-জাতীয় পরীক্ষা তাদের পড়ালেখার প্রতি একধরনের ভীতির সঞ্চার ঘটাচ্ছে। এ যেন তাদের ক্ষেত্রে এক অগ্নিপরীক্ষা। নানা সময়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বন্ধের কথা বলা হলেও আমাদের নীতিনির্ধারকদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে আজো এটি বহাল রয়েছে।

এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলস্বরূপ এবারই প্রথম প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন বা এমসিকিউ থাকছে না। ছোট ছোট এসব শিশু শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে কিছুদিন পরপর প্রশ্নপত্রের ধরন পাল্টানোও সুবিবেচনার কাজ নয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত। যদিও আমরা দেখছি, প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আশাতীত ভালো ফল করছে, যা সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটা সুখবর। কিন্তু এর খারাপ দিক হলো, পাস করা এসব শিক্ষার্থী বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা নিয়েই পরবর্তী ধাপের যাত্রা শুরু করছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, এতকিছুর পরও প্রাথমিক শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এর পেছনের কারণ হিসেবে  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো বুঝতে পারে না। শিক্ষকরা পাঠদান করেন নম্বরের উদ্দেশ্যে, শেখানোর জন্য নয়। এ ছাড়া পাঠদানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট শিক্ষাক্রম ও শিক্ষক সহায়িকা অনুসরণের কথা বলা হলেও অধিকাংশ শিক্ষকই তা অনুসরণ করেন না। সবার আগে এ পরিস্থিতির প্রতিকার করতে হবে। নতুবা এ দুর্বলতার কারণে পরবর্তীকালে অনেক শিক্ষার্থীই ঝরে পড়বে।

শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। দেশে মানসম্পন্ন ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এটি দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ বিষয়ভিত্তিক ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যবই সহজবোধ্য হয়ে উঠছে না। পাশাপাশি দক্ষ ও মেধাবীদের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক হিসেবে যুক্ত করা উচিত। একই সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে মানসম্পন্ন পাঠদান নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পরিদর্শন নিশ্চিত করার ওপর জোর দিতে হবে। আবার শিক্ষকদের উচিত শিক্ষা নির্দেশিকা সঠিকভাবে অনুসরণ করা। তবে নিয়মবহির্ভূতভাবে কোচিং বাণিজ্য, প্রাইভেট ইত্যাদিতে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ্যবস্থা নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের মানের বিষয়টির দিকেও নজর থাকা চাই। প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়ছে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে- এমনটাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads