• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
যেভাবে আয়কর দেবেন

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

যেভাবে আয়কর দেবেন

  • প্রকাশিত ২৭ নভেম্বর ২০১৮

সময় আর মাত্র কয়েকটি দিন। নভেম্বরের মধ্যেই দিতে হবে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন। সময় বাড়ালেও আপনি নিস্তার পাচ্ছেন না। তাই আজই প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে বছরে একবার আয়কর দিতে হয় বলে অনেকের কাছেই বিষয়টি জটিল বলে প্রতীয়মান হয় এবং শুধু এ কারণেই সাধারণ মানুষ উকিলের সাহায্য নিতে বাধ্য হন। আয়কর দাখিলের সময় এলে অনেকেই ছোটাছুটি শুরু করে দেন। কে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ তার দ্বারস্থ হন কেউ কেউ। তবে যাদের বেতন থেকেই আয়কর কেটে নেওয়া হয়, তারা অনেকটা ভালো অবস্থানে রয়েছেন। সমস্যায় আছেন বেসরকারি শিক্ষকরা। স্বল্প আয়ের এই পেশার মানুষদের বছরের এই সময়টিতে আয়কর দেওয়া নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতায় ভুগতে দেখা যায়। আয়কর বিবরণী দেওয়ার আগে জেনে নিন এর নানা দিক। জেনে নিন কী কী লাগবে আয়কর বিবরণী তৈরি করতে।

কোনো ব্যক্তি বা করদাতার আয় যদি বছরে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হয়, তবে তাকে রিটার্ন দিতে হবে। নারী এবং ৬৫ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সের পুরুষ করদাতার আয় যদি বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি, প্রতিবন্ধী করদাতার আয় যদি বছরে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকার বেশি হয়, তাহলে ওই করদাতাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

এর বাইরে আয়ের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, অবশ্যই তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে : (ক) যদি করদাতার বছরের মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করে;

(খ) আয় বছরে পূর্ববর্তী তিন বছরের যেকোনো বছর করদাতার কর নির্ধারণ হয়ে থাকে বা তার আয় করযোগ্য হয়ে থাকে; (গ) করদাতা যদি কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার কর্মচারী হন, কোনো ফার্মের অংশীদার হন, অথবা সরকার কিংবা সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, সত্তা বা ইউনিটের বা প্রচলিত কোনো আইন, আদেশ বা দলিলের মাধ্যমে গঠিত কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, সত্তা বা ইউনিটের কর্মচারী হয়ে যদি বছরের যেকোনো সময় ১৬ হাজার টাকা মূল বেতন পেয়ে থাকেন; (ঘ) করদাতার আয়কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত হারে যদি করযোগ্য হয়ে থাকে; এবং (ঙ) যদি আয় বছরের কোনো একসময়ে নিম্নবর্ণিত শর্তের যেকোনো করদাতার জন্য প্রযোজ্য হয়— মোটরগাড়ির মালিকানা থাকা (মোটরগাড়ির বলতে জিপ বা মাইক্রোবাসকেও বোঝাবে); মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১-এর অধীন নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ থাকা; কোনো সিটি করপোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ হতে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করে কোনো ব্যবসা বা পেশা পরিচালনা; চিকিৎসক, দন্তচিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার অথবা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার নিবন্ধন থাকা; আয়কর পেশাজীবী হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিবন্ধন থাকা; কোনো বণিক বা শিল্পবিষয়ক চেম্বার বা ব্যবসায়িক সংঘ বা সংস্থার সদস্যপদ থাকা; কোনো পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের কোনো পদে বা সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়া; কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কোনো স্থানীয় সরকারের কোনো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা; এবং কোনো কোম্পানির বা কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিজের পরিচালনা পর্ষদে থাকা।

কোনো করদাতা আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫ ধারা অনুসারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারা অনুযায়ী জরিমানা ও ৭৩ ধারা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সরল সুদ আরোপযোগ্য হবে। তবে করদাতা রিটার্ন দাখিলের জন্য সময়ের আবেদন করতে পারবেন উপকর কমিশনারের কাছে। এক্ষেত্রে যে-সময় দেওয়া হবে, তার মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে জরিমানা আরোপিত হবে না, তবে অতিরিক্ত সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ দিতে হবে।

২০১৬-১৭ সালের অর্থবছরের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশে ওই সময় কর প্রদানকারীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখের মতো। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে করদাতার সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১৫ লাখ। বিষয়টি হলো মোট জনসংখ্যার কত ভাগ এ করের আওতায় রয়েছে। হিসাব করলে দেখা যায়  .০০৮ শতাংশ মানুষ করের আওতায় আছে বা কর দেয়। এর ফলে প্রতীয়মান হয় যে, দেশের আয় বৈষম্য মারাত্মক।

বর্তমানে দেশের আয়কর নির্ধারণের যে ব্যবস্থা চালু রয়েছে তার সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। প্রত্যক্ষ কর আর পরোক্ষ করের খাতগুলো আরো সুনির্দিষ্ট করা দরকার। ভ্যাট নামে যে করটি আদায় হয় তা সম্পূর্ণ পরোক্ষ কর। এই কর আদায় করে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, ফলে এই আদায়কৃত অর্থ কতটা সরকারের কোষাগারে জমা হয় তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। বড় কোম্পানিগুলোর ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি আমরা মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে দেখে থাকি।

আয়কর দেওয়ার পদ্ধতিটা আরো সহজ করা উচিত। আয়কর যারা দেন তাদের অর্ধেকই বর্তমান পদ্ধতি বোঝেন না। আয়কর দেওয়ার সময়টা দুই মাস করা উচিত। আঞ্চলিক কর অফিসগুলোর সেবার মান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। তাই অধিকাংশ করদাতা আয়কর মেলায় আয়কর দেওয়াটাকে পছন্দ করেন। এজন্য আয়কর মেলার সময়টাও বৃদ্ধি করা দরকার। বৃদ্ধি করা দরকার সেবার মান।

আ.ব.ম. রবিউল ইসলাম

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads