• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
সস্তা বিনোদনে অন্ধকার চারদিক

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

সস্তা বিনোদনে অন্ধকার চারদিক

  • প্রকাশিত ৩০ নভেম্বর ২০১৮

অবসাদ আর ক্লান্তি দূর করতে আমরা অনেক সময় আশ্রয় নিই বিনোদনের। সুস্থ বিনোদনই আমাদের প্রশান্তি দিতে পারে। এই বিনোদনের ওপর ভিত্তি করেই আমরা আবার নতুনত্বের সূচনা করতে পারি, জীবনকে আরো একটু নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি। কিন্তু বিনোদন কি শুধুই আমাদের প্রশান্তি দিচ্ছে, নাকি সঙ্গে আরো নতুন কিছুও? সুস্থ মানসিকতার বিনোদন আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে যায় খেলার ছলে, আমাদের একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শেখায়। মননে প্রশান্তির পাশাপাশি জীবনকে দেয় আরো নতুন কিছু।

তবে বর্তমান প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের বিনোদনের দিক পাল্টে গেছে। মানসিক বিকৃতমূলক কিছু জিনিসকে আমরা বিনোদন হিসেবে নিচ্ছি। তরুণ সমাজকে একধরনের মোহর দিকে নিয়ে যাচ্ছে বিকৃত, কুরুচিপূর্ণ এসব বিনোদন। মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা অনেক কিছুই আমাদের চিন্তার জগৎকে সীমাবদ্ধ করে ফেলছে। হাসি-ঠাট্টার আড়ালে তরুণ উদ্দীপ্ত মননকে সৃজনশীলতাবিমুখ করা হচ্ছে। গ্র্যাজুয়েশন করা ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত ভাইরাল হওয়া কোনো সস্তা কটূ জিনিসকে বিনোদন হিসেবে নিচ্ছে। আমরা বিনোদন বলতে এখন শুধু গুটিকয়েক সস্তা ফানি ভিডিও ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি না। তাহলে আমরা ছুটে চলছি চটুল কোনো কিছুর দিকে, যা আমাদের সৃজনশীল চিন্তাচেতনা ও মননশীলতাকে জাগ্রত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকস্বরূপ। 

সমাজের অনেক কিছুকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে এই সস্তা বিনোদন। সমাজের কোনো একটা শ্রেণিকে আঘাত করে কোনো ফ্যান্টাসি কিছু করলে আমরা সেটাকে বিনোদন হিসেবেই নিচ্ছি। কিন্তু ভাবছি না আসলে এখানে সমাজের একটা শ্রেণিকে খাটো করে কথাটা বলা হয়েছে। এভাবে নাটক-সিনেমার অনেক জায়গায় কিছু প্রশ্নবিদ্ধ ডায়ালগ ঢুকিয়ে সস্তা বিনোদন বানানো হয়। আমরাও এতে কিছু মনে করি না, শুধু বিনোদন হিসেবে হেসে যাই।

আমাদের এ জায়গাগুলোতে আরো সচেতন হওয়া উচিত। সামাজিক মূল্যবোধের যাতে অবক্ষয় না হয়, এমন বিনোদন গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিনোদন শুধু হাসি-ঠাট্টাই নয়, এতে জড়িয়ে থাকে জীবন প্রশান্তি আর হূদয়াঙ্গম করার অনেক উপাদান। এমন কিছুকে আমাদের বিনোদন হিসেবে গ্রহণ করা উচিত, যা আমাদের হাসির পাশাপাশি ভাবনার জগতে আনে পরিবর্তন। দেশ, সমাজ আর মিডিয়াকেও সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে, যাতে বিনোদন হিসেবে সস্তা কোনো কিছু আমাদের মননে না ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। 

বিনোদনের ফলে যাতে আমরা কিছু না কিছু শিখতে পারি, আবেগ যাতে সুশৃঙ্খলভাবে প্রসারিত হয়; নতুবা বিকৃত মানসিকতার প্রজন্ম তৈরি হতে বেশি সময় লাগবে না। এর অনেকটাই বর্তমানে আমরা লক্ষ করছি তরুণ সমাজের কথাবার্তায় আর আচরণে। এখনই সময় লাগাম টেনে ধরার। সমাজচিন্তকদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসার এবং ভূমিকা রাখার সময় এসেছে।

সোহাগ মনি

লেখক : গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads