• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ছানোয়ারের আবিষ্কার কাজে লাগুক

নেশাগ্রস্ত চালকে চলবে না গাড়ি

  • প্রকাশিত ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

সড়কে দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেতে অভাবনীয় এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দহিলা বড়হাট পাড়ার ছানোয়ার হোসেন। কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছানোয়ার হোসেন দুর্ঘটনা রোধে ‘ড্রাইভার অ্যান্টি স্লিপ অ্যান্ড অ্যালকোহল অ্যালার্ম ডিটেক্ট’ নামের এই নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করে দেশবাসীর মনে আশার সঞ্চার করেছেন। যখন দেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়— এই সময়ে এ আবিষ্কার নিশ্চয়ই দেশবাসীকে সড়কে মৃত্যুরোধে অনেক আশাবাদী করে তুলেছে। তার এ প্রযুক্তি প্রথমে কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত স্কিল কম্পিটিশনে এবং পরে রংপুর বিভাগীয় স্কিল কম্পিটিশনে প্রথম স্থান অধিকার করে।

দৈনিক বাংলাদেশের খবরে প্রকাশিত সংবাদের বিবরণে ছানোয়ারের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার সম্পর্কে জানা যায়, যে কোনো গাড়ির ড্যাশবোর্ডের সঙ্গে কনস্যুলিং করে সম্পৃক্ত করা থাকবে আইবিলিং ও অ্যালকোহল সেন্সর। চালকের সামনে এ আইবিলিং সেন্সর ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে চালককে ডিটেক্ট করবে। পাশাপাশি গাড়ির সেলফের সঙ্গে সংযুক্ত করা থাকবে গন্ধ সংবেদনশীল ম্যাগনেটিক রিলে। চালক অ্যালকোহলজাতীয় কোনো কিছু গ্রহণ করলে গাড়ির সার্কিট অন হবে না। ফলে গাড়িও স্টার্ট হবে না। এই সেন্সরে সর্বোচ্চ তিনটি মোবাইল ফোনের সঙ্গে ডাটা সেট করা থাকবে। গাড়ি চলন্ত অবস্থায় চালক ঘুমিয়ে পড়লে বা নেশা করলে তিন সেকেন্ডের মধ্যে সতর্কবার্তা মোবাইলে বেজে উঠবে। এই তিনটি মোবাইলের মাধ্যমে গাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও সুপারভাইজার চালককে সতর্ক করতে পারবেন। এই অ্যালার্ম সিস্টেম দূরপাল্লার গাড়িতেও সংযোজন করা যাবে। দীর্ঘ এক বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সফল এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে এখন উচ্ছ্বসিত ছানোয়ার।

দেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিসহ আরো নানান বিষয়ে গবেষণা করে তরুণ প্রজন্ম নতুন নতুন অনেক কিছুই আবিষ্কার করছেন। তবে এসব আবিষ্কারের অধিকাংশগুলোতেই সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন না। ছানোয়ারের সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধকারী এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে ভাবনা ও পরিশ্রমের এক যুগান্তকারী ফসল। এই আবিষ্কারকে পরিপূর্ণতা দিতে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। ‘ড্রাইভার অ্যান্টি স্লিপ অ্যান্ড অ্যালকোহল অ্যালার্ম ডিটেক্ট’ প্রযুক্তিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া এবং বাজারজাত করা পরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত কাজ। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদেরই সবার আগে এ কাজে এগিয়ে আসা উচিত।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা ধরনের আন্দোলন, প্রতিবাদ, নতুন নতুন আইন হলেও কার্যত কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন সড়কে মানুষ মরছে পাখির মতো। সংবাদপত্রের পাতায় সড়ক দুর্ঘটনায় অকাতরে মৃত্যুসংবাদ যেন নিত্যকার ঘটনা। দেশের মহাসড়ক থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংযোগ সড়কেও দুর্ঘটনায় প্রতিদিন অকালে মারা যাচ্ছে মানুষ। কোনোভাবেই এর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা জানি, শুধু চালকের অসতর্কতাতেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে না; চালকদের অসতর্কতা এবং ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের অসতর্কতা দুইয়ে মিলেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। ছানোয়ারের এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে যেসব চালক নেশাগ্রস্ত আর ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন, অন্তত সেসব দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads