• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

আত্মহনন বেড়েই চলেছে

প্রজন্মের মননে আশাবাদ জাগাতে হবে

  • প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

দেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ২০১৭ সালে দেশে আত্মহননকারীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজারে। বাংলাদেশ পুলিশ এবং ইউনিসেফের জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি করা হয়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ধনী দেশগুলোতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি বয়সী লোকদের মধ্যে এবং দরিদ্র দেশগুলোয় অল্প বয়সের মানুষের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ২ কোটি নারী-পুরুষ আত্মহননের চেষ্টা করে। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ নারী-পুরুষ আত্মহননের মাধ্যমে মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা আত্মহত্যা করেন তাদের তিনজনের মধ্যে একজন মাদকাসক্ত। আবার মাদকাসক্তদের ৭৫ শতাংশেরই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, আত্মহত্যার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যাই বেশি, যাদের বয়স ১৪ থেকে ৩০ বছর। বাংলাদেশ পুলিশ এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যানও প্রায় কাছাকাছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের যত মানুষ আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করে, তার মধ্যে ২.০৬ শতাংশ বাংলাদেশি। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ১২৮.০৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতিবছর এই সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮ জন আত্মহত্যা করে। বিশ্বে বর্তমানে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের একটি হলো আত্মহত্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চাপ, হতাশা, অবসাদ ও হেনস্তার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আবার আর্থ-সামাজিক সমস্যা ও পারিবারিক সঙ্কটের কারণেও অনেকে আত্মহত্যা করে। আমাদের দেশে কী কী কারণে আত্মহনন বাড়ছে, সেগুলো আগে চিহ্নিত করা দরকার। তারপর  সে আলোকে প্রজন্মের মননে এমন সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে তাদের জীবনবোধ সম্পর্কে ধারণা পাল্টে যাবে। তাদের মননে জীবনের সুন্দর দিকগুলো এবং দেশ ও পরিবারের প্রয়োজনে তার শারীরিক উপস্থিতির গুরুত্ব সম্পর্কে আশাবাদ জাগাতে হবে।

সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আত্মহত্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে এমন মানুষকে যদি চিহ্নিত করা যায় তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কথা বলার সুযোগ থাকে। পরবর্তী সময়ে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাকে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাদের মতে, বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রতিরোধে অসংখ্য হটলাইন চালু করা জরুরি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ব্যক্তি পর্যায়ে ‘কান পেতে রই’ নামে এ ধরনের একটি হেল্প লাইন চালু হয়েছে। যারা মানসিক বিষাদগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা সমাধানের নানা পথ বলে দেয়।

শুধু চিকিৎসক নয়, পাশাপাশি আত্মহত্যা প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব পরিবার এবং সমাজ থেকেই। আত্মহত্যাকে অনেক ধর্মেই পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানুষ কেন আত্মহত্যা করে, নানান দৃষ্টিকোণ থেকে তার বিশ্লেষণ আছে। বিভিন্ন বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, মানুষ তখনই আত্মহত্যা করে যখন তার জ্ঞান, বুদ্ধি, উপলব্ধি এমনকি অনুধাবন শক্তি লোপ পায়। সে তখন নিজেকে অসহায় এবং ভরসাহীন মনে করে। আমাদের তরুণ সমাজের মন ও মনন থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা দূরীকরণে সম্মিলিতভাবে কাজ শুরু করার এখনই সময়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads