• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

মরণনেশার আগ্রাসন!

গডফাদারদের বিচার হোক

  • প্রকাশিত ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দেশজুড়ে মরণনেশা ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন। ভয়ঙ্কর খবরটি হচ্ছে শহর থেকে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা। ফলে অবুঝ, সরল, তরুণ, কিশোররাও ইয়াবা আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবা আসক্তির কারণে ভাঙছে ঘর, পরিবারে অশান্তি বাড়ছে। আশার খবরটি হচ্ছে, দেশ থেকে মাদক নির্মূলে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুশিয়ারি আরো আশাবাদী করেছে দেশবাসীকে। এখন জিরো টলারেন্সের প্রতিফলন দেখতে চায় দেশের জনগণ। খবরে প্রকাশ, কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী, যার মধ্যে ইয়াবার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ৩৪ জনই বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধি! দুঃখজনক এবং লজ্জার ব্যাপারটি হলো, যারা ইয়াবা প্রতিরোধে কাজ করবেন সেই জনপ্রতিনিধিরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ সদস্যের অনেকেই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনও খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, আত্মীয়স্বজনরা জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতার অপব্যবহার করার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের ভয়ে অস্থির। এই বাস্তবতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের তৈরি সমন্বিত তালিকা অনুযায়ী সারা দেশে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের তালিকা অনুযায়ী এদের আইনের আওতায় বিচার হওয়া দরকার।

ইয়াবা মাদকটি একাধারে মস্তিষ্ক ও হূদযন্ত্রে আক্রমণ করে। এটি আলোকিত জীবনের সম্ভাবনাকে ধীরে ধীরে অন্ধকারের অতল থেকে ক্রমশ মৃত্যুর কাছে নিয়ে যায়। ইয়াবা এমনই এক ভয়ঙ্কর মাদক, যার প্রভাবে মানুষ চরম হিংস্র হয়ে খুন পর্যন্ত করতে পারে। মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সময়ের রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। আর ইয়াবা সেবনকারীদের বেশিরভাগের বয়স ১৪-৩০ বছরের মধ্যে। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন কৌশল পাল্টে পাচারকারীদের দিয়ে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের গ্রাম পর্যায়ে। ফলে ইয়াবা আসক্ত হচ্ছে দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সব শ্রেণি-পেশার মানুষসহ যুবসমাজ।

খবরে জানা যায়, নাফ নদীর ১৪ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা ব্যবহার হচ্ছে ইয়াবা পাচারের প্রধান রুট। তাহলে তো প্রশ্ন উঠতেই পারে এই ১৪ কিলোমিটার নজরদারিতে রাখতে পারছি না আমরা! র্যাব-পুলিশ সূত্র বলছে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গাড়ির ইঞ্জিনের মধ্যে, কম্পিউটারের সিপিইউর ভেতর, মাছের পেটে, বাচ্চাদের প্যাম্পার্সে, জুতার তলায়, কাঁঠাল, তরমুজ, মিষ্টিকুমড়ার ভেতরে এমনকি মানব পাকস্থলীতেও! অবাক করা খবরটি হচ্ছে,  ইয়াবা বহনকারীরা নিজেই জানে না তারা কার ইয়াবা বহন করছে। ৭-৮ জনের হাত বদলে ইয়াবা পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কঠোর এবং কঠিনভাবে কার্যকরণের মাধ্যমে এমন নজির সৃষ্টি হোক যাতে আর কেউ দেশ ও জাতির বিধ্বংসী এই ব্যবসায় নিজেকে না জড়ায়। সেই সঙ্গে  সবার আগে ইয়াবাসহ সবধরনের মাদক প্রবেশের সব পথ বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, সে যত বড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন, তাকে শিগগির বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর এই অভিযান সারা বছর চলমান রাখতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads