• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

পুলিশের গৌরব ফেরাতে হবে

জনবান্ধব করার উদ্যোগ প্রশংসনীয়

  • প্রকাশিত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পুলিশ নিয়ে কথা বললেই যেন দেশের সব দোষ, অব্যবস্থা আর অপরাধের জন্য পুলিশের অবহেলা অনিয়মকে দায়ী করা হয়। জনমনে বদ্ধমূল এই ধারণাটি পুরোমাত্রায় সঠিক নয়। কেননা, বাংলাদেশ পুলিশেরও রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর রয়েছে অসামান্য অবদান। পুলিশ বাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রম, সীমাহীন ত্যাগের সেবায় আমরা নিরাপদ থাকতে পাচ্ছি। তারপরও পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক প্রচারণা বা ধারণা রয়েছে তারও যথেষ্ট বাস্তবতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই বাস্তবতার মূলে রয়েছে পুলিশের কাছে জাতির প্রত্যাশা। তার মানে আমাদের পুলিশ বাহিনী জাতির কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পুরোমাত্রায় পূরণ করতে পারছে না। তবে এই ব্যর্থতার একমাত্র দায় আমরা পুলিশ বাহিনীকে দিতে পারি না। কারণ, পুলিশ বাহিনী চাইলেই তাদের নিজেদের ইচ্ছা বা সাংগঠনিক স্বাধীনতা মোতাবেক পরিচালিত হতে পারছে না। এসবের পেছনে রয়েছে আমাদের স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অপতৎপরতা। সাথে আছে জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশ বাহিনীতে সদস্যসংখ্যার অপ্রতুলতা, প্রযুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষিত পুলিশের অভাব, দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে আধুনিক উন্নত সরঞ্জামের সীমাবদ্ধতা।

তবে বলতে দ্বিধা নেই পুলিশ বাহিনীর নীতিবিবর্জিত কিছু সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ পদ্ধতির অস্বচ্ছতা, সঠিক সুপারভিশন ও মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সম্পর্কে সঠিক গোয়েন্দা তথ্য না থাকার সুযোগে কিছু সদস্য অপরাধে জড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। এসব বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের পরামর্শ, পুলিশের স্পেশাল পুলিশ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী অপরাধের বিচার হলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আমরা মনে করি এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ, যারা অপরাধ দমন করবে তারা নিজেরাই অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ার বিষয়টি কোনোভাবেই হেলাফেলার হতে পারে না।

তবে এই খবরটি খুবই আশাবাদ জাগায়, পুলিশ বাহিনীকে আরো জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে জনগণকে নিরাপত্তা সেবা প্রদানের মোক্ষম বাহিনী হিসেবে পুলিশকে অবশ্যই জনবান্ধব হতে হবে। পুলিশ জনগণের যত কাছে যাবে অপরাধীর তথ্য এবং অপরাধ দমনের পদ্ধতি উদ্ভাবনে ততই সফলতা অর্জন করবে। কেননা, জনগণের মাঝেই অপরাধীরা বিচরণ করে এবং জনগণকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয় তাদের অপরাধ বাণিজ্য। তাই সামাজিক আচার অনুষ্ঠান, ক্যাম্পেইন, এলাকাবাসীকে নিয়ে অপরাধদমন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বৈঠকি আলোচনার মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততায় জনবান্ধব হওয়ার একটি মাধ্যম হতে পারে। সাধারণ জনগণের মাঝে নির্যাতনের শিকার বা কোনো নিরাপত্তার হুমকি ছাড়া থানায় যাওয়ার প্রবণতা নেই। এ কারণে প্রতিটি থানার উদ্যোগে বিভিন্ন দিবস পালনসহ কিছু সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে থানামুখী করা যেতে পারে। এভাবে সহজে, নির্ভয়ে, অপরাধ বা নিরাপত্তার বিষয় ছাড়াও থানার সাথে সংযোগ স্থাপন করলে পুলিশের সাথে জনগণের নিরাপত্তা বিধানে ভাবনা বিনিময়ের সুযোগ ঘটবে। 

পাশাপাশি দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশ সদস্য বাড়ানো এবং প্রযুক্তি দক্ষতায় আধুনিক পুলিশ ইউনিট গঠন করাটাও জরুরি। আর গ্রাম পুলিশকে নাম পুলিশ পর্যায়ে না রেখে জনবল বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়াটাও কম জরুরি নয়। একই সাথে দুর্নীতিবাজ, অসৎ ও অপরাধপ্রবণ পুলিশের শাস্তি দ্রুত কার্যকরণের পাশাপাশি সৎ ও সাহসী পুলিশদের পুরস্কৃত করতে হবে।  সেই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর সর্বস্তরে  কর্মকর্তাদের কর্মঘণ্টা কমানোর বিষয়টিও মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করা দরকার। কেননা, উত্তম সেবা প্রদানে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার বিকল্প নেই।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads