• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
মাননিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিন

একুশে বইমেলার সফল সমাপ্তি

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

একুশে বইমেলার সফল সমাপ্তি

মাননিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিন

  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০১৯

শেষ হলো বাঙালির প্রাণের মেলা, অমর একুশে বইমেলা। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এবারের মেলা ১ মাস ২ দিন সময় পেয়েছে। মেলার শেষদিন পর্যন্ত সর্বমোট ৪ হাজার ৮৩৪টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর নতুন বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর এক মাস দুই দিনে ৮০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ কোটি বেশি। দিন যতই যাচ্ছে একুশের বইমেলার জনপ্রিয়তা, কলেবর, আঙ্গিকে আধুনিকায়ন সবকিছুই নতুনভাবে আশা জাগাচ্ছে। বইমেলায় বই বিক্রি, বইয়ের মান, প্রচ্ছদে শৈল্পিকতার নান্দনিকতা, লেখক এবং নতুন নতুন প্রকাশনা সংস্থা বাড়ছে। বাড়ছে ক্রেতা-দর্শকের সমাগম। বাড়ছে শিশু, কিশোর, তরুণদের মেলাকেন্দ্রিক আকর্ষণ। বাড়ছে বই কেনার প্রবণতা। বইমেলাকে কেন্দ্র করে লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের মেলবন্ধনে এক মহাসম্মিলনীতে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের সৃজনশীল বই প্রকাশনা শিল্পটি। আবার এরই মধ্যে কিছু প্রকাশনা সংস্থার অপেশাদারিত্বের ছাপও লক্ষণীয়। মানহীন বইও প্রকাশিত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। এসবের কারণ, প্রকাশনা সংস্থাগুলোর পাণ্ডুলিপি সম্পাদনায় অনাগ্রহ। আর এসবের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে বলে মনে হয় না।

বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। কিন্তু প্রকাশনা সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমির কোনো ভূমিকা কি আছে? আমাদের কাছে মনে হয় শুধু বই মেলা আর গবেষণা ও প্রকাশনার মধ্যে বাংলা একাডেমির কার্যক্রম সীমিত থাকতে পারে না। প্রকাশনাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকাও নিতে হবে বাংলা একাডেমিকে। আর সম্ভব না হলে প্রকাশনা কোনোদিনই শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে না। সেজন্য সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বাংলা একাডেমির তদারকি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমরা জানি বাংলা একাডেমির বেশ কয়েকটি প্রত্রিকা আছে। কিন্তু পত্রিকাগুলো সর্বত্র পাওয়া যায় না। বিশেষত প্রান্তিক পর্যায় থেকে এই পত্রিকাগুলো নবীন, উদীয়মান লেখকদের জন্য প্ল্যাটফরম হতে পারত। একসময়ের ব্যাপক সাড়া জাগানো তরুণ লেখক প্রকল্পটি পরবর্তী সময়ে কী কারণে কালের গর্ভে হারিয়ে গেল, তা বোধগম্য নয়। অথচ এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি বছর অন্তত বিশজন নবীন লেখকের বই প্রকাশ করে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ দিতে পারত। আমাদের শিশু একাডেমি ও গণগ্রন্থাগারেরও একটি পত্রিকা আছে। চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদফতরেরও দুটি প্রকাশনা রয়েছে। আমরা মনে করি, আমাদের সাহিত্যচর্চা ও বিকাশে এসব প্রকাশনার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। একই সঙ্গে এসব প্রকাশনার ব্যাপ্তি আরো বাড়ানো হলে তরুণ, উদীয়মান লেখকদের ব্যাপক সমাবেশ ঘটানো সম্ভব। যার সুফল পাওয়া যাবে সৃজন ও মননশীল বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের সমন্বয় দরকার। এ-বিষয়ে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তবে সৃজনশীল বই শিল্পের বিকাশে সরকারের বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত আবশ্যক। কেননা প্রকাশনাকে শুধু একটি নান্দনিক মেধা বিকাশক শিল্পই নয়, বরং জাতি গঠনে এবং সৃজনশীল সংস্কৃতির সম্প্রীতি ঘটাতে এ শিল্পের ভূমিকা অগ্রগণ্য। এমন একটি শিল্পের প্রতি সরকার উদাসীন হতে পারে না। তাই আমরা মনে করি, সৃজনশীল প্রকাশনার প্রথম ক্রেতা হতে হবে সরকারকে। তাহলে সামাজিক অসঙ্গতি ও সংঘাত কমবে। এ কাজে সরকারেরই লাভ বেশি। সরকার তার পাঁচ বছর ক্ষমতার মেয়াদে ২০ কোটি করে ১০০ কোটি টাকার বই কিনলে পাল্টে যাবে প্রকাশনা শিল্পের অবয়ব। লেখক, পাঠক তৈরি হবে। এগিয়ে যাবে দেশ ও জাতি। তবে সরকারের ক্রয়নীতিতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে হবে। তা না হলে প্রকাশনার মান ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads