• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে

  • প্রকাশিত ০৫ মার্চ ২০১৯

‘ভূমিকম্প ঝুঁকিতে ঢাকা’ শীর্ষক দৈনিক বাংলাদেশের খবরের তিন পর্বে সমাপ্ত বিশেষ গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন প্রমাণ করে এই বঙ্গীয় বদ্বীপের জনপদ কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে। বলা হয়েছে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ রয়েছে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়। উপরন্তু বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে মানচিত্র থেকে ঢাকা চিরতরে মুছে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫ নম্বরে। গবেষকদের মতে, এই ঝুঁকির কারণ ভূ-অভ্যন্তরে তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এই তিনটি গতিশীল আর এগুলোর মধ্যে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তের ভূ-অভ্যন্তরে যে শক্তি সঞ্চিত হয়েছে তা বড় মাত্রার ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। ফলে রাজধানীতে আঘাত হানতে পারে সাড়ে ৭ থেকে ৮ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প। এতে চোখের পলকে ধসে যাবে রাজধানীর ৮৮ শতাংশ ভবন, আর ৩৫ শতাংশ ভবন হবে ব্যবহারের অনুপযোগী।

এ ধরনের ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের অন্যান্য জেলাও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে। সুতরাং আমরা বলতেই পারি— শুধু ঢাকা নয়, এহেন পরিস্থিতিতে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে গোটা বাংলাদেশ। অধিক জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত আর ঝুঁকিপূর্ণ আবাসন নিয়ে ভূমিকম্প মোকাবেলায় আমরা কতটা প্রস্তুত রয়েছি। এই ভাবনা তাড়িত করছে দেশের সচেতন মানুষকে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে এই দুর্যোগের ঘটনা ঘটলে আমাদেরকেও ভাবিয়ে তোলে দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। নানা গবেষণায় ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের কথা উঠে এসেছে বার বার। যে কারণে আশঙ্কা আর দুর্ভাবনা আমাদের পিছু ছাড়ে না।

গত ৮০-৮১ বছরে কোনো বড় ভূমিকম্প হয়নি। তাই যে কোনো সময় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের ওপর আঘাত হানতে পারে। এখন আমাদের প্রয়োজন আগাম প্রস্তুতি নেওয়া। এ জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প রোধ করা সম্ভব নয়, তবে আমরা প্রকৃতির ওপর অবিচার করে নিজেরাই যেন ভূমিকম্প ডেকে না আনি, সে বিষয়েও সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। বিল্ডিং কোড মেনে না চলা, বন উজাড়, পাহাড় কেটে ধ্বংস করাসহ নানা উপায়ে আমরা যেন ভূমিকম্প নামক মহাবিপদকে ডেকে আনছি। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, সারা দেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা লক্ষাধিক। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ভূকম্পনেও বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা বলছেন। এক্ষেত্রে নতুন ভবন নির্মাণে সরকারি তদারকি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। বার বার ভূমিকম্প এ কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা আসলে কতটা প্রস্তুত। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বাংলাদেশে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।

রাজধানীতে দিন দিন বাড়ছে আকাশচুম্বী অট্টালিকার সংখ্যা। অল্প জায়গায় এত বড় বড় স্থাপনা ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা হচ্ছে ভবন। এতে স্বল্পমাত্রার কম্পনেই ভেঙে পড়তে পারে অনেক ভবন। তা ছাড়া ওয়াসা তার সরবরাহ করা পানির পুরোটাই তুলছে ভূগর্ভ থেকে। এতে ভূগর্ভস্থ মাটি, পলির প্রকৃতিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ফলে ঢাকা বিশ্বের অন্যান্য মেগাসিটির তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। উপরন্তু অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের ফলে হঠাৎ ভূমিকম্পের কারণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হবে না বিধায় গ্যাসলাইনে ফাটল ও শর্টসার্কিটের মতো ঘটনাও ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ভূমিধসের পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডও ভূমিকম্পের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলবে। এমতাবস্থায় ভূমিকম্প-পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায়ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। তৈরি করতে হবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। জনসচেতনতার জন্য চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা। আমরা প্রত্যাশা করি, সরকারের সংশ্লিষ্টরাও এই ভয়ঙ্কর দুর্যোগ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে সর্বদা সতর্ক থাকবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads