• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা জরুরি

নির্বাচন কমিশন

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

সাত নির্বাচনকর্মী হত্যা

নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা জরুরি

  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০১৯

উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ির সাজেক এলাকার নয় মাইল নামক স্থানে বিক্ষুব্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছেন ৭ জন নির্বাচনকর্মী। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আমাদের বিস্মিত, ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া হতে পারে না। যদিও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, এটি ভোট বর্জন আর বিরোধের জের। কিন্তু ভোট বর্জন, বিরোধিতা নির্বাচনী রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। আজ বলতে দ্বিধা নেই, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা এবং ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণ না থাকাই এ ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা জাতিকে দেখতে হলো।

আদর্শভিত্তিক রাজনীতি, সুশাসন ও দেশের উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে চলে। কিন্তু আদর্শচ্যুত রাজনীতির কাছ থেকে সমাজ ও দেশ কিছু আশা করতে পারে না। আর তাই স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকে দেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বার বার বাধাগ্রস্ত হতে দেখি। সাধারণ মানুষ আজ তাই আদর্শের রাজনৈতিক শক্তির উত্থান দেখতে চায়, যে রাজনীতি উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখবে। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কাল থেকে শুরু হওয়া সংঘাত-সহিংসতা, বিরোধীদের নির্বাচনী মাঠে থাকতে না দেওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে বিরোধীদের বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতা করা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের ভেতরের দ্বন্দ্ব ও একপেশে সিদ্ধান্তসমূহ জনগণকে নির্বাচন সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রদান করে এবং নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করেছে, যার প্রমাণ আমরা দেখছি অনেকটাই ভোটারবিহীন উপজেলা নির্বাচন।

মূলত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। এ-সময় প্রশাসনের সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মানতে বাধ্য। সরকার তথা নির্বাহী বিভাগের নির্বাচন প্রশ্নে কোনো কর্তৃত্ব থাকে না। এটাই প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রীতি। বস্তুত পুরো বিষয়টি নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের নৈতিকতা ও সদিচ্ছার ওপর। প্রচলিত কথায় রয়েছে- নৈতিকতা ও সদিচ্ছার রূপক মেরুদণ্ড। তাই নিকট অতীতের প্রশ্নবিদ্ধ সিটি নির্বাচনের মতো কোনো নির্বাচন জাতি দেখতে চায় না। অথচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নির্বাচন কমিশন কতটা দেখাতে পেরেছে, তা কমবেশি সবাই জানে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের শক্তি-সদিচ্ছা ও নৈতিকতার উদ্বোধন নির্ভর করছে তাদের মানসিকতার ওপর। তাই জনগণ এখনো নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে বদ্ধপরিকর।

আবার অন্যদিকে যত আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়ে থাকে তা কোনো না কোনো প্রার্থীর সমর্থনে অথবা অন্য কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়ে থাকে। প্রার্থীরা যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেকে ও কর্মী-সমর্থকদের এই আচরণবিধি লঙ্ঘন থেকে বিরত না রাখেন তবে প্রশাসনের পক্ষে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে। নির্বাচন ঘিরে যে কোনো সংঘর্ষ ও সংঘাতের ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসনকে শূন্য-সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করতে হবে। উত্তেজনা সৃষ্টিকারীর রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। বিশ্বাস করি, রাঙামাটিতে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা অচিরেই ধরা পড়বে এবং রাষ্ট্র তাদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি প্রদানে পিছপা হবে না।

আমরা আশা করব, উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করা তথা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে সব প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলবেন, বজায় রাখবেন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ। ভোটাররাও সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে ইসির কঠোর ভূমিকাও এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।

জয় হোক উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের, জয় হোক মানবতার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads