• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কাম্য

অগ্নিদগ্ধ মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

অগ্নিদগ্ধ মাদরাসা ছাত্রী

অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কাম্য

  • প্রকাশিত ০৯ এপ্রিল ২০১৯

গত শনিবার ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া গ্রামের আলিম পরীক্ষার্থী অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহানের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দেশের মানুষ সৌভাগ্যবান এ কারণে যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের দুর্যোগময় মুহূর্তে সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। তখন দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষই আশায় বুক বাঁধে।

কিন্তু খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং অগ্নিদগ্ধের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি গোটা জাতিকে হতাশার অতলে নিমজ্জিত করে। জাতি হিসেবে আমরা আমাদের বিবেক, বোধ সব যেন হারিয়ে ফেলেছি। কী অপরাধ ছিল নুসরাত জাহানের! মাদরাসা অধ্যক্ষের ঘৃণিত যৌন লালসার সঙ্গী হয়নি ওই ছাত্রীটি— তাই? কী নির্মমভাবে তার শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই নৃশংসতম ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি কী হতে পারে তা আজ বিবেকবান মানুষকেই ভেবে দেখতে হবে।

কু-প্রবৃত্তির ওই অধ্যক্ষ এখন পুলিশের হেফাজতে। তার শাস্তি শুধু জেল-জরিমানায় সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এটি একটি ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ছিল। সুতরাং ওই পাষণ্ড অধ্যক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমাদের কাম্য এবং তা হতে হবে জনসমক্ষে, যা দেখে অন্যান্য দুর্বৃত্তের আত্মাও কেঁপে উঠবে। ভবিষ্যতে এহেন অপকর্ম করতে গেলে যেন তারা ভয়ে নীল হয়ে যায়।

বর্তমানে প্রতিনিয়ত খবরের কাগজের পাতা খুললেই দেখা যায় খুন, ধর্ষণ-নিপীড়ন, নারী ও শিশু নির্যাতনের রোমহর্ষক প্রতিবেদন। বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় বৈঠকেও এর আভাস মেলে। সেখানে বলা হয়েছিল, অন্যান্য অপরাধের তুলনায় দেশে ধর্ষণসহ যৌন নিপীড়ন বেড়ে গেছে যা উদ্বেগের বিষয়।

এমনকি আমাদের কোনো বোধ বা চেতনা কাজ করে না যখন দেখি কিছু অভিভাবক খোদ সন্তানের অপকর্মের সহায়ক ও সঙ্গী হচ্ছেন। তার জ্বলন্ত উদাহরণও গত বছর দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। যা ছিল বনানীর রেইনট্রি হোটেল ও পরীবাগের ধর্ষক-নিপীড়কদের জন্মদাতা পিতা কর্তৃক তাদের অপকর্মে সহায়তা করার মতো গুরুতর অভিযোগ। এই যে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, তার পেছনে কাজ করেছে বর্তমান চাকচিক্যময় উচ্চাভিলাষী সভ্যতার যান্ত্রিক জীবন, বেপরোয়া ভোগবিলাস, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব। আর এই নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে সমাজে সংঘটিত নানা অপকর্ম অতীত নিকটেও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।

তারই উদাহরণ বুঝি কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া টাঙ্গাইলে ধর্ষণের বিহিত না করে উল্টো ধর্ষণের শিকার নারীকে শারীরিক নির্যাতনসহ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা। আবার চুয়াডাঙ্গায় মা-মেয়েকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর এবং সালিশের নামে নিরীহ নারীদের অকথ্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। আর এর সঙ্গে জড়িত আমাদের সমাজের কিছু উচ্চবিত্ত প্রভাবশালীও। এসব প্রভাবশালীর স্বার্থরক্ষায় জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় মাতব্বরদের আইন হাতে তুলে নেওয়ার সাহসও আমাদের সামনে পরিলক্ষিত হয়েছে। তারা এ ধরনের সাহস কোথা থেকে পান তা আমাদের বোধগম্য নয়।

সামাজিক শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার একটি জাতির উন্নতির অন্যতম পূর্বশর্ত। আর এক্ষেত্রে সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষার প্রতি বিশেষ মনোযোগের বিকল্প নেই। এজন্য অভিভাবকদের সন্তানের প্রতি মনোযোগ ও সময় দেওয়ার পাশাপাশি তার সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

পাশাপাশি বিদ্যমান সমাজে সংঘটিত এসব জঘন্যতম যৌন নিপীড়নসহ সব ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে রাষ্ট্রকেও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। আমাদের এখন সেদিকেই মনোনিবেশ করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads