• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

সীমান্তে হত্যা

নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ চাই

  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০১৯

ঠিক দুই বছর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছিল তার মধ্যে তিস্তা চুক্তি, গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ, সীমান্ত সমস্যা অন্যতম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব তিস্তা চুক্তিকে প্রলম্বিত করেছে। একইভাবে দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যার যৌক্তিক কোনো সমাধান উভয় দেশই খুঁজে পায়নি। তারই জের আমরা বহন করছি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশি হত্যার ঘটনার মধ্য দিয়ে।

এই সীমান্তে হত্যা মূলত ঘটে দুই দেশের মধ্য দিয়ে চোরাচালানি কার্যক্রম সংঘটিত হওয়ার কারণে। কিন্তু বাংলাদেশের বিজিবি কর্তৃক ভারতীয় নাগরকি হত্যার ঘটনা নেই বললেই চলে। বিপরীতে ভারতের বিএসএফ প্রায়ই নানা অজুহাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর পাশবিক অত্যাচারসহ গুলি করে হত্যা করতেও পিছপা হয়নি। অথচ আমরা এসব প্রতিকারে কার্যত কী পদক্ষেপ নিয়েছি তা সাধারণ মানুষের কাছে আজ প্রশ্নবিদ্ধ। কুড়িগ্রামের অনন্তপুর-দিনহাটা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত আলোচিত ফেলানি হত্যাকাণ্ডের বিচার আজো আমরা পাইনি। এসব না হওয়া বিচারের ফলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মানুষেরা এখনো ভোগ করে চলেছে। এর সবশেষ নজির হচ্ছে গত শনিবার নওগাঁ জেলার পুনর্ভবা নদীর জিরো পয়েন্ট থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধারকৃত আজিম উদ্দীন। একদল গরু চোরাচালানির সঙ্গে সেও গিয়েছিল রাখাল হিসেবে। কিন্তু বিএসএফের হাতে সে ধরা পড়ে গেলে তাকে ক্যাম্পে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে তার হাতের দশ আঙুলের নখই উপড়ে ফেলা হয়। একপর্যায়ে আজিম উদ্দীন জ্ঞান হারালে তাকে সীমান্তবর্তী পুনর্ভবা নদীর জিরো পয়েন্টে ফেলে রেখে যায় বিএসএফ। পড়ে টহলরত বিজিবির দল তাকে উদ্ধার করে।

কিন্তু এ ধরনের নির্যাতন তখনই সম্ভব যখন দুই দেশের সম্পর্ক শত্রুভাবাপন্ন হয়। একটি বন্ধুপ্রতিম দেশের কাছ থেকে এমনটি আশা করা যায় না। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আজিম উদ্দীনকে মুচলেকার মাধ্যমে ফিরিয়ে দেওয়া যেত। অথচ সীমান্তে এ পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার সমাধানে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ আমাদের সামনে পরিলক্ষিত হয়নি। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব মতে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই বিভিন্ন এলাকায় বিএসএফের গুলিতে ১১ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। অথচ গত বছর এ সংখ্যাটি ছিল ৮। সীমান্তে হত্যার পেছনে মূলত গরু চোরাচালানকেই দায়ী করে আসছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তবে কোনো ধরনের অনুসন্ধান ছাড়া নির্বিচার এই হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করছেন উভয় দেশের মানবাধিকার কর্মীরা।     

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত দুই বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের মধ্যে সড়ক, রেল ও জলপথে দ্বার উন্মোচনের ভেতর দিয়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ দিনগুলোতে সীমান্তের শূন্যরেখায় দুই দেশের জনগণের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। সীমান্ত হাট এখন দুই বাংলার মানুষের চাহিদা পূরণসহ উভয় দেশের বাণিজ্যকেও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় সীমান্তে হত্যা বন্ধে উভয় দেশের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কোনো কারণে যদি হত্যাকাণ্ড হয়, সেই কারণগুলো নিবারণ করার উদ্যোগ নিতে হবে দুই দেশকেই। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আমাদের মানুষ মারা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই এখানে কোনো জানা ও বোঝার গ্যাপ রয়ে গেছে। আমাদের এই গ্যাপটা জানতে হবে এবং নিরীহ মানুষের মৃত্যু বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।  

আমরা মনে করি, ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যুর সমাধানে সময়োচিত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে আগ্রহী হবে। বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষ মনে করে, অতীতের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের বাস্তবভিত্তিক সমাধানে সক্ষম হবেন। দেশপ্রেমিক সব নাগরিক এখন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads