• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত হোক

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

কলেজে ভর্তি

মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত হোক

  • প্রকাশিত ২০ মে ২০১৯

সাহাদাৎ রানা

 

 

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার ফল। এ বছর প্রায় ২১ লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ শিক্ষার্থী। সেই হিসেবে পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। গতবার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০১৮ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখের বেশি। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। গতবার এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। এখানে একটি ইতিবাচক দিক হলো, প্রায় প্রতি বছরই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে পাস করা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও। এটা আমাদের জন্য সত্যিই খুব আনন্দের খবর। তবে পাশাপাশি এর সঙ্গে একটি শঙ্কাও কাজ করছে সবার মধ্যে। বিশেষ করে অভিভাবকদের মধ্যে। পাস করা সব শিক্ষার্থী ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবে তো? সারা দেশে ইতোমধ্যে ১২ মে থেকে শুরু হয়েছে ভর্তির ফরম বিক্রি। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই ভর্তি কার্যক্রমে পাস করা ছাত্রছাত্রীরা এবার ভর্তির লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন। কারণ পাস করা শিক্ষার্থীর তুলনায় উচ্চ মাধ্যমিকে অপ্রতুল আসনসংখ্যাই এই দুশ্চিন্তার অন্যতম প্রধান কারণ। তবে একমাত্র কারণ নয়। বাস্তবতা হলো, ভালো ফল করেও অনেক শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না। এটার বড় একটা কারণ আসনসংখ্যা। আবার অনেক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েও সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ পাবেন না। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বাড়ছে না সরকারি কলেজের সংখ্যা। অথচ দিন দিন বাড়ছে ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

এবার একটু পরিসংখ্যানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে একাদশ শ্রেণির আসন রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে মানসম্মত কলেজে আসন রয়েছে প্রায় ২০ হাজারের মতো। অথচ এবার ঢাকা বোর্ডেই জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ৬৮৭ জন। আর ঢাকার বাইরে জিপিএ-৫ পেয়েছে প্রায় ৭০ হাজারের বেশি। সবারই টার্গেট থাকে ঢাকার নামিদামি কলেজে ভর্তি হওয়ার। এক্ষেত্রে কতজনের ভাগ্যে সেসব নামিদামি কলেজে ভর্তির সুযোগ মিলবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। রাজধানীর ছাত্রছাত্রীরা তো আছেই, মফস্বলের ভালো শিক্ষার্থীরাও আশা করে উচ্চ মাধ্যমিকটা ঢাকায় এসে পড়তে। কারণ শহরের স্কুলগুলোয় সুযোগ-সুবিধা আর পড়ার মান শ্রেয়তর। ফলে ভালো ফল করা যায়। পাশাপাশি এটা তাদের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জও। মফস্বল থেকে উঠে এসে ঢাকায় ভালো করার চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সে ভাগ্যও সবার হয় না। অন্যদিকে, গ্রামের কলেজগুলোতে নানান সীমাবদ্ধতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হয়। সেখানে যে পরিমাণ আসন রয়েছে, সেগুলোও পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কোনোটাই খালি থাকে না। এটা একদিক দিয়ে স্বস্তির। কিন্তু এর মধ্যে অসংখ্য শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যাবে কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে, যা সত্যিই ভাবনার বিষয়।

অন্যদিকে এর বিপরীতে রয়েছে অসংখ্য বেসরকারি কলেজ। কিন্তু সে তুলনায় বেসরকারি ভালো কলেজের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। ফলে জিপিএ-৫ পেয়েও যারা সরকারি ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না, তারা চলে যাবেন বেসরকারি কলেজে। তবে সবাই সেখানে ভর্তি হতে পারবেন এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেননা যারা বেসরকারি নামিদামি কলেজে পড়ার সুযোগ পাবেন তাদের গুনতে হবে মোটা অঙ্কের টাকা। যারা সামর্থ্যবান পিতা-মাতা তারাই শুধু তাদের সন্তানদের সেখানে ভর্তি করাতে পারবেন। আর যাদের পক্ষে সম্ভব হবে না তাদের সন্তানদের থেমে যেতে হবে এখানেই। কারণ নামিদামি বেসরকারি কলেজের ব্যয়ভার বহন করা বেশিরভাগ অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা। কারণ তারা কোনো কারণে সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেলে তাদের আর ভালো কলেজে পড়ার সুযোগই থাকে না। দরিদ্রতাই এর প্রধান কারণ। এই পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দীনতাকেই প্রতীয়মান করে।

বাস্তবতা হলো, শুধু দারিদ্র্য ও প্রত্যাশিত ফলাফল করতে না পারায় মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েও উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারবে না প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এর একটি অংশ অবশ্য বিকল্প শিক্ষা কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত করতে চেষ্টা করবে। সবাই অবশ্য সফল হবে না। কারণ সেভাবে বিকল্প শিক্ষা কার্যক্রমে সমৃদ্ধ নই আমরা। তবে এ বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট অগ্রগতি রয়েছে। সেটা ভিন্ন আলোচনা। মূল বিষয়, অর্থাৎ এসএসসি পাস করা একটি অংশ ঝরে পড়বে উচ্চশিক্ষা থেকে। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে এদের বড় একটি অংশ চলে যাবে কর্মসংস্থানে, বিশেষ করে বিদেশে। এটা শুধু যে এ বছর হবে তা কিন্তু নয়। এমনটা প্রায় প্রতি বছরই নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে শঙ্কার খবর হলো, এর সংখ্যাটা দিন দিন শুধুই বাড়ছে। কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এখন প্রশ্ন হলো এর সঠিক সমাধান কী? বাস্তবতা হলো, সঠিক ও কার্যকর সমাধান এখানে একদিনে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সবার আগে দেশে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে কলেজের সংখ্যা বাড়াতে হবে। অবশ্য শুধু কলেজের সংখ্যা বাড়ালেই হবে না, মনোযোগ দিতে হবে কলেজে শিক্ষার গুণগত মানের দিকে। কেননা শহরে অনেক কলেজে প্রত্যাশিত মান থাকলেও মফস্বলে সেভাবে সেই মান ধরে রাখা সম্ভব হয় না নানান কারণে। সবশেষ ২০১৮ সালের একটি পরিসংখ্যান সবার জন্যই অস্বস্তির। ২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় সারা দেশে ৫৩টি কলেজে কেউ পাস করতে পারেনি। ২০১৭ সালে সেই সংখ্যাটি ছিল ৭১। এটার প্রধান কারণ, সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব। এছাড়া রয়েছে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের সঠিকভাবে পাঠদান করতে না পারার কারণ।

আমরা সবাই অবগত রয়েছি, প্রতি বছর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী উঠে আসছে। তাদের জন্য ঢাকায় বিশেষ করে ভালো কলেজগুলোতে পড়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। কেননা তাদের যদি যথাযথ পরিচর্যা করা সম্ভব হয়, তাহলে উপকৃত হবে দেশ। তাই এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এমতাবস্থায় সরকারকে যেমন দেশব্যাপী মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দিকে যেমন নজর দিতে হবে, তেমনি সুদৃষ্টি দিতে হবে মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে। ভালো শিক্ষক নিয়োগেও মনোযোগী হতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি করে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। এতে সবদিক দিয়েই লাভবান হওয়া যাবে। এর ফলে একদিকে শিক্ষার্থীরা যেমন রাজধানীমুখী হবে না, অন্যদিকে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির দুশ্চিন্তার বিষয়টিও অনেকটা কমে আসবে।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads