• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
তথ্য অধিকার আইন এবং কিছু কথা

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

তথ্য অধিকার আইন এবং কিছু কথা

  • সোহাগ মনি
  • প্রকাশিত ২৪ মে ২০১৯

আমরা অনেকেই জানি না আমাদের কী কী জানার অধিকার আছে, আমরা কী করতে পারি দেশের নাগরিক হিসেবে অথবা কোন জায়গায় রাষ্ট্রকে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারি। জনগণের ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে তুলতেই ২৯ মার্চ ২০০৯ জাতীয় সংসদে তথ্য অধিকার আইন পাস হয়। আর সেই আইনকে আরো গতিশীলতা এনে দেয় তথ্যপ্রাপ্তির অনুরোধ, আপিল ও তথ্য কমিশনে অভিযোগ করার বিষয়টি যা কার্যকর হয় ১ জুলাই ২০০৯। রাষ্ট্রের সব আইন জনগণকে নিয়ন্ত্রিত করার ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়; কিন্তু রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জনগণের হাতে একটি ক্ষমতা রয়েছে, আর সেই ক্ষমতাটি হচ্ছে তথ্য অধিকার আইন। এ আইনের দ্বারা জনগণ রাষ্ট্রকে জবাবদিহিতার আওতায় ফেলতে পারে, রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়। আমাদের সামাজিক কাঠামো এবং জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে তথ্য হচ্ছে এখন সবচেয়ে বড় শক্তি। যার কাছে তথ্য যত বেশি থাকে সে তত বেশি অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে পারে নিজের এমনকি দেশের তরে। তথ্য গোপন রেখে করা যায় অনেক অনিয়ম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কতটুকু সচেতন আছি এই তথ্য অধিকার আইন নিয়ে। তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ, আপিল, তথ্য কমিশনে অভিযোগ এসব কার্যক্রম কতটুকুই বা চলছে। জনগণের অধিকার নিয়ে যে আইন সে আইনে জনগণ কতটুকু সাড়া ফেলছে তা ভেবে দেখার বিষয় কিংবা জনগণ এই আইনকে নিজেদের জন্য কতটুকু সুবিধাজনক মনে করছে তা হয়তো আমরা ভেবে দেখি না।

জনগণকে তথ্য প্রদান করতে বাধ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো,  নির্বাচন কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা কার্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত কোনো অধিদপ্তর, জেলা কার্যালয় বা উপজেলা কার্যালয়, সরকারি বা বিদেশি সহায়তা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান, আইন অনুযায়ী গঠিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে জরিপ করলে দেখা যাবে শুধু জেলা-উপজেলা ভূমি অফিস ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রাপ্তির অনুরোধ ও আপিল খুবই নগণ্য। কেননা জনগণ জানেই না তারা কী ধরনের তথ্য পেতে পারে এবং কোন জায়গায় রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করা যায়।  এই দিকগুলো অনেকটা উন্মোচিত নয়, যার কারণে প্রান্তিক জনগণই শুধু নয়, শিক্ষিত জনগণ ও তথ্যপ্রাপ্তিতে তেমন কোনো আগ্রহ দেখান না। এ ছাড়া অনেক সময় তথ্যপ্রাপ্তিতে হয়রানির স্বীকার হতে হয়, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেও নির্দিষ্ট তথ্য হাতে পায় না অনেকেই।

এবার আসা যাক তথ্যপ্রাপ্তির নিয়মাবলিতে। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য পেতে হলে অনেকটা বাগাড়ম্বরপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সরকারের নির্ধারিত তথ্য প্রাপ্তির আবেদন ফরমের কাঠামো জনগণের কাছে বোধগম্য নয় অনেকটা। ফরমটি পূরণ করতে রীতিমতো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। আবার নির্ধারিত স্থান ছাড়া ফরমটি সংগ্রহ করাও দুরূহ হয়ে ওঠে, যা তথ্যপ্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতাই বলা যায়। অনেক সময় সবকিছু ঠিক থাকার পরে ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তথ্য দিতে চায় না, এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো অজুহাত দেখায় দেশের নিরাপত্তা, কপিরাইট, আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত, বাণিজ্যিক অন্তনির্হিত গোপনীয়তা ইত্যাদি আইনের ফাঁক দেখানো হয়। সেক্ষেত্রে আর কিছুই করার থাকে না জনগণের। যার ফলে জনগণ তথ্যপ্রাপ্তির আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, আর প্রান্তিক জনতা এর প্রক্রিয়াই জানেন না।

তথ্য অধিকার আইনে বলা আছে, ২০ বা সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্য তথ্য প্রদান, এক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা ব্যক্তির ভোগান্তি কিংবা তথ্যপ্রাপ্তির অনীহার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তথ্যপ্রাপ্তির জন্য অনেক সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত অর্থের চেয়েও বেশি অর্থ দিতে হয়। তথ্য না পেয়ে তথ্য কমিশনে অভিযোগ করলেও তাতে আইনে উল্লেখ আছে ৪৫ বা সর্বোচ্চ ৭৫ দিনের মধ্য নিষ্পত্তির!  এই নিষ্পত্তি আরো দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। তথ্য কমিশনের আরো সক্রিয় হয়ে ওঠা জরুরি, যাতে জনগণ অভিযোগ করলেই তাতে সময় উপযোগী ফলাবর্তন তারা পায়। তথ্য অধিকার আইন মূলত হয়েছে জনগণের অধিকার রক্ষার্থে। সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের নীতিনির্ধারণী পৌঁছে দিতে। কিন্তু অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও হয়তো তা বাস্তবায়ন হয়ে উঠছে না। তথ্য সেবা এখনো অনেকের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। দেশের প্রতি প্রান্তে এর সহজলভ্যতা চোখে পড়ে না; বরং ভোগান্তিই সামনে আসে বার বার।

তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে আরো কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানকে তথ্য প্রদানের প্রক্রিয়াকে আরো সহজ এবং কম সময়সাপেক্ষ করে তোলাই এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ রাষ্ট্রকে করে তুলবে আরো বেশি উন্নয়নে বেগবান। তথ্য গোপন নয় বরং এর সহজলভ্যতাই উপহার দিতে পারে স্বপ্নের বাংলাদেশ। তথ্যের সহজলভ্যতাকে নিশ্চিত করে, প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া রাষ্ট্রের উচিত।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads