• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
প্রয়োজন দেশপ্রেমের জাগরণ

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

দুর্নীতির কবলে দেশ

প্রয়োজন দেশপ্রেমের জাগরণ

  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০১৯

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও অন্যসব সুবিধা কয়েকগুণ বাড়লেও দুর্নীতি থামছে না। তার মানে দুর্নীতি একটি প্রবণতা। দুর্নীতির স্বাদ যিনি একবার পেয়েছেন, তার পক্ষে সুযোগ-সুবিধা সত্ত্বেও বাড়তি আয়ের অভ্যাস ত্যাগ করা অসম্ভব ব্যাপার। পুলিশের জনৈক কর্মকর্তা এক আলোচনায় বলেছেন— সরকার যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, তাতে আর দুর্নীতি করার কোনোই প্রয়োজন নেই। এই কর্মকর্তার সরল স্বীকারোক্তি দুটি বিষয় স্পষ্ট করেছে— এক. সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতিপ্রবণ; দুই. বর্তমান সুবিধায় দুর্নীতি ত্যাগ করা উচিত।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু এক জনসমাবেশে বলেছিলেন, ‘শিক্ষিত সমাজের কাছে আমার একটা কথা— আমরা শতকরা কতজন শিক্ষিত লোক? আপনাদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন— দুর্নীতি কারা করে? আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? —না। আমার শ্রমিক দুর্নীতিবাজ? —না। তাহলে ঘুষ খায় কারা? ব্ল্যাক মার্কেটিং কারা করে? বিদেশে টাকা চালান দেয় কারা? এই আমাদের মধ্যেই রয়েছে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ। আমাদের চরিত্রের সংশোধন করতে হবে। আত্মশুদ্ধি করতে হবে। গরিব কৃষক শ্রমিক আপনাদের মাইনে দেয়। আমরা গাড়ি চড়ি এই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন। ইজ্জত করে কথা বলুন; ওরাই মালিক। ওদের দ্বারাই আপনার সংসার চলে।’  ভেবে দেখার সময় এসেছে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিপ্রবণতা আজকের নতুন কিছু নয়। এই দুর্নীতির প্রবণতা বেতন বাড়িয়ে থামানো সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন দেশপ্রেমের জাগরণ। সবার আগে গুরুত্ব পাবে দেশের স্বার্থ। সরকারি চাকরিতে যারা আসবেন, তাদের সেবার মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এই প্রবণতা থামবে না।

বলতে দ্বিধা নেই, স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শিক্ষিত মানুষ, বাড়ছে দুর্নীতির প্রবণতাও। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতি নামক ভয়ানক ক্যানসার। এদেশের রাজনীতিবিদদের আদর্শ নেই, ব্যবসায়ীর নেই নৈতিকতা, শিক্ষকতায় আদর্শের চর্চা নেই, চিকিৎসকের নেই সেবার মনোভাব, অন্যসব পেশাও বিচ্যুত হয়ে পড়েছে আদর্শ আর সততার ছায়াতল থেকে। এজন্য শুধু পুলিশকে দোষ দিলে লাভ হবে না। নৈতিকতা ও দেশপ্রেম সব পেশা এবং নাগরিক সমাজে না থাকলে শুধু পুলিশের পক্ষে ভালো হয়েও পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সুতরাং অভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হলে উদ্যোগটিও আসতে হবে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকেই। উন্নত দেশগুলোতে ছোট ছোট অপরাধের তাৎক্ষণিক বড় শাস্তি কার্যকর হয়। অভ্যাস পরিবর্তনে এটি টনিক ট্রিটমেন্ট। রোড সিগন্যাল মেনে চলা, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলা, প্রচলিত আইন মেনে চলা, রাষ্ট্রকে আয়কর দেওয়া, সঠিক নিয়মে ভ্যাট প্রদান, ঘুষ-দুর্নীতি, চুরি-ছিনতাই, ধর্ষণ-অপহরণ, শিশু ও নারী নির্যাতন, খাদ্যে ভেজাল, চিকিৎসায় বিড়ম্বনা, খাদ্যে ভেজাল, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জাল-জালিয়াতি, পেশাগত দায়িত্বে অবহেলা প্রভৃতি অপরাধের তালিকা প্রণয়ন করে বিশেষ আদালতে তাৎক্ষণিক  জেল-জরিমানা করতে হবে। ছোট অপরাধে দ্রুত শাস্তি প্রয়োগ হলে বড় অপরাধের প্রবণতাও কমে আসবে। আইনের শাসন মেনে চলবে। শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে সরকারকে ছোট অপরাধ দমনে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি দেশের শিল্প সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তাদের বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মসংস্থানমুখী করতে হবে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ অবারিত করতে হবে। তরুণ সমাজকে শিক্ষা শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজে লাগাতে হবে। তাহলে শিগগিরই কিছু পরিবর্তন ঘটবে।

রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, অনাদর্শিক দ্বন্দ্ব-কোন্দলের কারণে অফুরন্ত সম্ভাবনাময় দেশটিকে আমরা জাগিয়ে তুলতে পারছি না। আর এ কারণেই জাতি, বিশেষত তরুণ প্রজন্ম আজ হতাশ। তবে হতাশার মধ্যেও আশার আলো খুঁজতে হবে। রাজনীতিতে ত্যাগী, ইতিবাচক, দূরদর্শী মানুষও আছে। তেমনি সরকারের কর্মকর্তাদের মধ্যেও সৎ ও যোগ্য লোক আছে। তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা জরুরি। সততার সম্মাননাই কোণঠাসা করবে দুর্নীতির প্রবণতাকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads