• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
শুভকামনা বাংলাদেশ টিম

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

দ্বাদশ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ

শুভকামনা বাংলাদেশ টিম

  • আরাফাত শাহীন
  • প্রকাশিত ৩০ মে ২০১৯

আমাদের ক্রিকেট দল নিয়ে আমরা যারপরনাই আশাবাদী। এই আশা আমাদের দেখিয়েছেন আমাদের ক্রিকেটাররাই। স্বাধীনতার পর থেকে খেলাধুলায় বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক কোনো খেলায় তেমন সাফল্য ঘরে আসেনি। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করে তুলতে এই ক্রিকেটই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এখন পর্যন্ত খেলাধুলায় বড় বড় যে সাফল্য এসেছে তা কিন্তু এই ক্রিকেটকে ঘিরেই।

 

ক্রিকেটের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত ইংল্যান্ডের মাটিতে পর্দা উঠতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের। দ্বাদশ বিশ্বকাপের এই আসরে অন্য নয়টি দলের সাথে অংশ নিতে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপ মানেই অন্যরকম এক আয়োজন, অন্যরকম এক উত্তেজনা। এই উত্তেজনা যেমন ছুঁয়ে যায় প্রতিটি দলের খেলোয়াড়দের, তেমনি উত্তেজনার জোয়ারে ভাসতে থাকে সারা দুনিয়ার খেলাপাগল মানুষ। বাংলাদেশের দেশের মানুষ আগে থেকেই খেলাপাগল হিসেবে বিবেচিত। সুতরাং বিশ্বকাপ নিয়ে এরই মধ্যে সবার মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন-কেমন করবে এবার লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা? সব খেলাপ্রিয় মানুষ আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন যে তাদের প্রিয় দল এবার অবশ্যই ভালো কিছু করবে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে যে বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজেদের শাণিত করে তুলছে, আমরা আশাবাদী তারা অবশ্যই ভালো কিছুই করে দেখাবে।

বাংলাদেশ দল ইতিমধ্যে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন করেছে। শুধু কি তাই, এই প্রথম কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশ দল। এর আগে ছয়বার ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েনি টাইগার বাহিনী। সপ্তমবারের প্রচেষ্টায় ঠিকই জয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বকাপের আগে এই জয় টাইগার বাহিনীকে অনেক বেশি উজ্জীবিত করবে। এমনিতেই গত তিন-চার বছরে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বেশ ইতিবাচক ক্রিকেট খেলে আসছে বাংলাদেশ দল। এই সময়ের মধ্যেই বিশ্বের শক্তিশালী দলগুলোকে বারবার পরাজিত করে ক্রিকেটবিশ্বে বেশ সমীহ জাগানো দলে পরিণত হয়েছি আমরা। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ সাফল্য। এবারও যে এর চেয়ে ভালো কিছু করা সম্ভব হবে না, আগ বাড়িয়ে অবশ্যই সেটা বলার উপায় নেই।

১৯৯৭ সালে কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশ। তখনকার দিনে এই শিরোপা জয় উজ্জীবিত করেছিল দেশের মানুষকে। এরপর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে প্রথম অংশ নেয় বাংলাদেশ। এডিনবার্গের রেইবার্ন প্লেইসে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে জয়ের সূচনা হয়েছিল। এরপর সেই সময়ের পরাশক্তি পাকিস্তানকে হারিয়ে কী চমকটাই না সৃষ্টি করল বাংলাদেশ! এই জয়ের ফলে ক্রিকেটপাড়ায় বাংলাদেশকে নিয়ে রীতিমতো হইচই শুরু হয়ে গেল। ১৯৯৯ সালের প্রথম বিশ্বকাপে সাফল্য দেখানোর পর ২০০৩ বিশ্বকাপ আমাদের জন্য ছিল রীতিমতো দুঃসহ যাতনার। কারণ এই বিশ্বকাপে একটি জয়ের মুখও দেখা হয়নি। এমনকি বাংলাদেশ কেনিয়ার কাছেও হেরে গিয়েছিল! ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ বাংলাদেশ দলের জন্য সাফল্যের বার্তা বয়ে এনেছিল। বারমুডা, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিয়েছিল লাল-সবুজের পতাকাধারীরা।

এরপর ২০১১ সালে ঘরের মাঠে আয়োজিত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সাফল্য ছিল ভালো আর মন্দের মিশ্রণ। এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের মতো দলকে পরাজিত করলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে রয়েছে ৫৮ এবং ৭৮ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা। বাংলাদেশ দলকে আজীবন এই লজ্জাজনক অবস্থা বয়ে বেড়াতে হবে। এরপর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত একাদশ বিশ্বকাপ বাংলাদেশ দলের জন্য ছিল একেবারে সোনায় সোহাগা। প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার সৌভাগ্য হয় আমাদের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের সূচনা হয় এবং ইংল্যান্ড দলও পরাজিত হয় আমাদের কাছে। এই বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুটি সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের সক্ষমতার প্রমাণ দেন।

 

১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু হয়ে এবার ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। দলে রয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, যিনি ২০০৩ বিশ্বকাপেও দলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। মাশরাফি এখন শুধু বাংলাদেশ দলের দলপতিই নন, তিনি সব খেলোয়াড়ের অঘোষিত অভিভাবকও বটে। খেলার মাঠে তার আচরণ মাঠের বাইরে থেকেও আমাদের মুগ্ধ করে। মাশরাফির জন্য এটাই হতে যাচ্ছে শেষ বিশ্বকাপ।  বারবার অপারেশন থিয়েটারে ছুরির নিচে পা পেতে দিয়েও ক্লান্ত হয়ে পড়েননি বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা এই অধিনায়ক। এখনো সমানে মাঠে দাপিয়ে বেড়ান তিনি। তার বিদায় উপলক্ষে নিশ্চয় সতীর্থরা চাইবেন তাকে ভালো কিছুই উপহার দিতে। আর একজন খেলোয়াড়ের জন্য খেলার মাঠে জয়ের চেয়ে ভালো কী হতে পারে!

 

বাংলাদেশ দল এবারের বিশ্বকাপে ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা দল নিয়েই মাঠে নামবে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল, অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মিডল ওর্ডারে নির্ভরযোগ্য মুশফিকুর রহিম এবং শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যদি তাদের ক্যারিশমা ঠিকমতো দেখিয়ে দিতে পারেন, তাহলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। দলের প্রতিষ্ঠিত এই খেলোয়াড়দের পাশাপাশি তরুণরাও বেশ ভালো ক্রিকেট খেলছেন। বিশেষ করে সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান এবং মেহেদী হাসান মিরাজরা আমাদের আশার আলো দেখিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দলে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের কমতি নেই। খেলার মাঠে প্রয়োজনমতো খেলোয়াড়েরা যদি জ্বলে উঠতে পারেন, তাহলে যেকোনো কিছুই করে দেখানো সম্ভব।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads