• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বদলে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

সমুদ্র সম্পদে গুরুত্বারোপ

বদলে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি

  • প্রকাশিত ২৬ জুন ২০১৯

বর্তমান বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতি। বলাবাহুল্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে তাকিয়ে আছে সমুদ্র সম্পদের দিকে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে সমুদ্র-সম্পর্কিত বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার ঘটছে। ২০০৭ সালে যার পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, ২০২০ সালের মধ্যে তা বেড়ে এক লাখ কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তাই সাগরের অজস্র জলরাশি ও এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণে ও অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে পারে বাংলাদেশ। বিশাল এলাকা নিয়ে সমুদ্র জয়ের পর এবার সে বিপ্লব বাস্তবায়নের রোডম্যাপে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সমুদ্র সম্পদের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরের সম্পদ কাজে লাগাতে পারলে ঘুরে যাবে দেশের অর্থনীতির চাকা। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকেও জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে ১৩টি জায়গায় সোনার চেয়ে অধিক মূল্যবান বালু, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম রয়েছে। যাতে মিশে আছে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট। আবার অগভীর সমুদ্রে জমে আছে সিমেন্ট তৈরির উপাদান ‘ক্লে’। ধারণা করা হচ্ছে, এর পরিমাণ হিমালয়কেও হার মানাতে পারে। এই ক্লে উত্তোলন সম্ভব হলে সিমেন্ট কারখানাগুলো বহুগুণে শক্তিশালী হবে এতে সন্দেহ নেই। এ ছাড়া তেল-গ্যাসের সন্ধানও মিলেছে সমুদ্রের তলদেশে। সবমিলিয়ে অমিত সম্ভাবনার হাতছানি দিয়ে ডাকছে সমুদ্র সম্পদ।

গবেষকরা বলছেন, ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে প্রায় ৯০০ কোটি। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর খাবার জোগান দিতে তখন সমুদ্রের মুখাপেক্ষী হতে হবে। আর এ কারণেই ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার তাগাদা দিচ্ছেন তারা। বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ সমুদ্রপথে সম্পন্ন হয়। অপরদিকে বাংলাদেশের মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ হয় সমুদ্রপথে। তাছাড়া বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ২ হাজার ৬০০ জাহাজের মাধ্যমে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। এসব জাহাজ থেকে ভাড়া বাবদ আয় হয় ৬ বিলিয়ন ডলার। ভবিষ্যতে এসব সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে ব্যাপক কর্মসংস্থান। বিশেষজ্ঞ অভিমত, বঙ্গোপসাগরের নিচে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি তেল ও গ্যাস মজুত রয়েছে যা আগামী দিনের জ্বালানি-রাজনীতি ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ কারণে এ অঞ্চলটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়ার অন্যতম জ্বালানি শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ অবস্থান করছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, বিশ্বের ৪৩০ কোটি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি  তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে। জানা যায়, প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ন্যূনতম ১.৭৪ মিলিয়ন টন খনিজ বালুর মজুত রয়েছে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে। যার মধ্যে ১৭ ধরনের খনিজ বালুর সন্ধান পাওয়া গেছে। আবার বিশ্বে ব্যবহূত শতকরা ৫০ ভাগের বেশি ম্যাগনেশিয়াম সামুদ্রিক পানি থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই প্রাকৃতিক উৎস থেকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি সম্ভব। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কম্পাউন্ড সমুদ্র থেকে পাওয়া গেছে। পরবর্তী প্রজন্মের ওষুধ এই সমুদ্র থেকেই পাওয়া যাবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন। 

বাংলাদেশের সমুদ্র-তীরবর্তী ৩ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা আসে মৎস্য আহরণের মাধ্যমে। মৎস্য আহরণের পাশাপাশি সমুদ্রের তীরবর্তী পর্যটন কেন্দ্রের মাধ্যমেও অর্থনৈতিক বিপ্লবের কথা বাংলাদেশ ভাবছে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সমুদ্র সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে বদলে যাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads