• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
 প্রাণহানি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে বজ্রপাতের আধিক্য

প্রাণহানি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন

  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশে বর্তমানে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বজ্রবৃষ্টির মেঘগুলো এমন এলাকায় তৈরি হয়, যেখানে সূর্যের তাপ বেশি পড়ে, উত্তপ্ত থাকে, গরম হয় এবং বাতাসে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী যে তাপমাত্রাটা বাড়ছে, বাংলাদেশ তার শিকার। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর হওয়ায় এখানে দক্ষিণা বাতাসের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প চলে আসে। যে কারণে গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বাংলাদেশের ওপর প্রচুর বজ্রবৃষ্টির মেঘ তৈরি হয়। আর তা থেকে বজ্রঝড় হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে দিনে প্রায় ৮০ লাখ বার বজ্রপাত হয়। এতে মৃত্যুর হার অনেক। আর প্রতিবছর বজ্রপাতে বাংলাদেশে গড়ে প্রায় ২০০ মানুষ মারা যাচ্ছে।

তার প্রমাণ আবারো মিলল গত শনিবার একই দিনে সারা দেশে ১৫ জনের মৃত্যু। এদের মধ্যে রাজশাহী ও নেত্রকোনায় একজন, সুনামগঞ্জে দুই, চুয়াডাঙ্গা ও ময়মনসিংহে দুই এবং পাবনার বেড়া উপজেলায় সর্বোচ্চ চারজন মারা গেছেন। বস্তুত বিশ্বজুড়েই মেঘের ঘর্ষণে হঠাৎ আকাশ থেকে ধেয়ে আসা প্রাকৃতিক ঘাতক প্রাণ কেড়ে নেয়। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশে এর হার বেড়ে যাওয়ার মনুষ্যসৃষ্ট কারণকে উপেক্ষা করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, একদিকে বড় বড় গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া; অন্যদিকে মোবাইল ফোনসহ যান্ত্রিক ব্যবহার বৃদ্ধি মানুষকে বজ্রপাতের নিশানা করে তুলছে। কৃষিকাজে ধাতব ও যান্ত্রিক উপকরণের ব্যবহারও এ জন্য দায়ী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একদিকে নগরায়ণের নামে বড় বড় গাছগাছালি কেটে ফেলা, খাল-বিল-জলাশয় ভরাট করে অট্টালিকা তৈরি; অন্যদিকে আগে কৃষকের কাছে বড়জোর কাস্তে থাকত, কিন্তু এখন ট্রাক্টরসহ নানা কৃষি যন্ত্রাংশ বা মুঠোফোনের মতো ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে গেছে। এসব ধাতব বস্তুর ব্যবহার বজ্রপাতে ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করছে। কারণ এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, বায়ুমণ্ডলে ধাতব উপাদান বেড়ে গেলে তা বজ্রপাতের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। উপরন্তু বজ্রনিরোধক হিসেবে মাটির নিচে পুঁতে রাখা ধাতব পিলারও আমাদের অসাধু চোরাকারবারিদের নিশানা হওয়ায় তাও আজ বিলুপ্তির পথে। সুতরাং দেশে বজ্রপাতের আধিক্য ঘটা অস্বাভাবিক নয়। বজ্রপাতের সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তনের যোগও খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ সম্প্রতি কালো মেঘ সৃষ্টির হার বেড়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা কোনো কোনো আবহাওয়াবিদ করেছেন, তা আমলযোগ্য। সুতরাং বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় গবেষণা-সমীক্ষার বিকল্প নেই যা আমাদের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হয়নি বললেই চলে।

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রাকৃতিক চক্রের কারণেই বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু বাংলাদেশে বিরল নয়। আর এখন চলছে আষাঢ়-শ্রাবণ তথা বর্ষা মৌসুম। সুতরাং ঝড়ঝঞ্ঝা প্রতিদিনের বিষয়। তাই বলে বজ্রপাতে মৃত্যু কাম্য হতে পারে না। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে প্রথমত জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ সময়ে খোলা জায়গা, টিনের চালা অথবা ছাউনির নিচে না থেকে কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে হবে। ঘরের বাইরে থাকলে সম্ভব হলে বড়গাছ পরিহার করে ছোট গাছের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বজ্রপাত ৮ থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে গিয়েও আঘাত হানতে পারে এবং মাটিতে আঘাত হানার পরও মাটি থেকে ১০০ ফুট দূরত্বে গিয়েও পুনরায় আরেকজনকে আঘাত হানতে পারে। সুতরাং বজ্রপাত শেষ হওয়ার পরেও কমপক্ষে আধা ঘণ্টা পর বাইরে বের হওয়া উচিত। এ ধরনের জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক কারণে বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিতে। এক্ষেত্রে অধিক হারে গাছ লাগাতে হবে, নগরায়ণের নামে জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে এবং মাটির নিচের ধাতব পিলার সংরক্ষণে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা আশা করি বিষয়গুলো সরকার ভেবে দেখবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads