• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
নগরে আসুক সজীবতার আমেজ

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

ভার্টিক্যাল গার্ডেন

নগরে আসুক সজীবতার আমেজ

  • প্রকাশিত ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯

বাগান সৃজনের একটি বিশেষ পদ্ধতির নাম ‘ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং’। এ পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় অধিক গাছ রোপণ করে সবুজে সাজিয়ে তোলা যায় বাড়ির সীমানা দেয়াল। ভার্টিক্যাল গার্ডেন বা উল্লম্ব্ব বাগান ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে এই সবুজ দেয়াল ব্যাপক জনপ্রিয়। সিঙ্গাপুর, মেক্সিকো এমনকি ভারতের দিল্লি, হায়দরাবাদ শহরে ভার্টিক্যাল গার্ডেন তৈরি হয়েছে। ভবনের নির্মাণকাজ আড়াল করতে ইট-সিমেন্টে বা ইস্পাতের নির্মিত দেয়ালের পরিবর্তে এটি তৈরি হয় গাছ দিয়ে। এই প্রচেষ্টা পরবর্তী সময়ে ল্যান্ডস্কেপিং ও ভবনের বিভিন্ন স্থানে বাগান তৈরির মাধ্যমে ভবন ও আশপাশেও প্রতিফলিত হয়। শহরের সৌন্দর্যায়নের স্বার্থে ইতোমধ্যে নানা পরিকল্পনা করেছে নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ (এনকেডিএ)। এই পদ্ধতির ফলে গাছের শরীরে বা পাতার খসখসে অংশে কিংবা পত্ররন্ধে ধূলিকণা আটকে পড়ে প্রতিনিয়ত। গাড়ির কালো ধোঁয়াও শুষে নেয় সবুজ প্রকৃতি, তার দেহজুড়ে জায়গা মেলে কার্বন পার্টিকেলের। নগরীর ফ্লাইওভার, মেট্রোর পিলারের মধ্যে তৈরি এই গার্ডেনের মাধ্যমে শহরকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। এরই পাশাপাশি দূষণ ঠেকাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে এই গার্ডেনিং।

পরিবেশবিদরা বলছেন, ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং বা উল্লম্ব বাগান কয়েকটি ধাপ বা তলায় একটি গাছের ওপর আরেকটি গাছ লাগিয়ে বাগান করা হয়। তাই অল্প জায়গায় অধিক গাছ রোপণ করে দেয়ালটিকে সবুজ বা বর্ণিল রঙে সাজিয়ে তোলা যায়। ঘরে-বাইরের দেয়াল, বাসার সম্মুখভাগে খোলা পরিসর, বারান্দা— এসব ছোট্ট জায়গায় ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং পদ্ধতিতে বাগান সৃজন করতে পারলে শহরের ধূলিদশা আর বিষাক্ত বাতাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। তাদের মতে, সবুজ দেয়ালের প্রয়োগ তাপমাত্রার প্রখরতা কমিয়ে জীববৈচিত্র্য বাড়াতে সহায়তা করে এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে আনে। এর সবুজ দেয়ালের পুরুত্ব শব্দ, তাপ, কম্পন শোষণ করে যা মানুষ ও পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর এই তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে এনার্জি কম খরচ হয়, তাই বাসার বিদ্যুৎ বিলও কমে আসে। বিভিন্ন গবেষণা তথ্য থেকে আরো জানা যায়, পরিবেশের স্নিগ্ধতায় স্কুলে ছেলেমেয়েরা মনোযোগী হয়ে ওঠে, কমার্শিয়াল ভবনের কর্মীরা চাপ অনুভব করেন না, হাসপাতালে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, ঘর-গৃহস্থালির মানুষজনের স্নায়ু শীতল থাকে।

যদিও ভার্টিক্যাল গার্ডেন বাড়ির ছাদে কিংবা যে কোনো পরিসরেই করা সম্ভব, তবুও শহরের সবুজপ্রিয় মানুষ বিকল্প জায়গা না পেয়ে বারান্দা ও ঘরের দেয়ালকেই বেছে নিচ্ছে। যাদের ছাদে বা আঙিনায় বাগান করার সুযোগ নেই, তাদের জন্য ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং পদ্ধতিটি অনুসরণীয় হতে পারে। মহানগরে ছাদ-বাগান বা আঙিনায় বাগান করার সুযোগ কম, তাই অফিস বা আবাসনে সবুজের আবহ আনতে ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং করার পরামর্শ পরিবেশবিদদের। ঘরের ভেতরে, লিভিংরুম বা অফিসেও চাইলে ছায়াবান্ধব পাতাবাহারি গাছ দিয়ে ভার্টিক্যাল গার্ডেন তৈরি করা যায়। মানিপ্ল্যান্ট, এলোকেশিয়া, ফার্ন, স্পাইডার, লিলি, এনথোরিয়াম, বোট লিলি, ড্রাসেনা, মেরেন্টা, মনস্টেরা ইত্যাদি গাছ দিয়ে ভার্টিক্যাল গার্ডেন করে অফিস বা বাসাবাড়ির ভেতরের দেয়ালগুলো নান্দনিকভাবে সাজিয়ে তোলা যায়।

আমরা জানি ঢাকার বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বিশ্বের অধিকাংশ শহরের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আমরা মনে করি, ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরের শব্দদূষণ, ধূলি আর ধোঁয়ার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং। এ বিষয়ে সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিবেশবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সমন্বিত উদ্যোগ প্রতিটি শহরে নিয়ে আসতে পারে স্নিগ্ধ সবুজের আবাহন। আর এর ফলে স্বস্তির নিঃশাস নিতে পারবে শহরের মানুষ। প্রকৃতির মনোরম আলিঙ্গনে নাগরিক জীবনে আসুক সবুজ, সতেজ, সজীবতার আলিঙ্গন, এই প্রত্যাশা আমাদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads