• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক ক্ষতিকর  

  • সাধন সরকার
  • প্রকাশিত ২৫ অক্টোবর ২০২০

ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার অস্বাভাবিক গতিতে বেড়েই চলেছে। যেসব প্লাস্টিক পণ্য একবার ব্যবহার শেষে আর কোনো কাজে লাগে না বা ফেলে দেওয়া হয় সেগুলোই ওয়ান টাইম প্লাস্টিক হিসেবে পরিচিত। বহু ধরনের ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য এখন হাতের নাগালে। এসবের মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিকের কাপ, চামচ, স্ট্র, প্লেট, গ্লাসসহ  আরো অনেক ধরনের ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য। রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল, এয়ারলাইনস, সুপারশপ, চায়ের দোকান ও বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজনের মতো জায়গা থেকে এসব ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য বেশি আসছে। বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, তরুণ এবং যুবকরাই পরিবেশে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। প্লাস্টিক অপচনশীল, তাই ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক পণ্য যুগের পর যুগ পরিবেশে থেকে যায়। চায়ের দোকানগুলোতে এখন ওয়ান টাইম প্লাস্টিক কাপের ছড়াছড়ি। ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব না জেনেই হরহামেশাই সাধারণ লোকজন প্লাস্টিকের কাপে চা পান করছে। ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় তা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। গবেষণার তথ্য মতে, প্লাস্টিকের কাপে থাকা টক্সিক পদার্থ মুখ ও লিভারের ক্যানসারের অন্যতম কারণ। এই ক্ষতিকর পদার্থ গরম পানির সঙ্গে সহজেই মিশে যায়। নারী-পুরুষের হরমোন কার্যকারিতায় বাধা প্রধান করে এই ক্ষতিকর পদার্থ। এছাড়া হার্ট, স্তন ক্যানসার, মস্তিষ্ক ও ত্বকের ক্ষতি বয়ে আনে। মানবদেহে ক্যানসার হওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো প্লাস্টিক দূষণ।   

ইএসডিও-এর এক জরিপ প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে বছরে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ৮৬ হাজার ৭০৭ টন। শহর এলাকায় ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। পলি ইথায়লিন ও পলি প্রপাইলিন বা এর কোনো যৌগ মিশ্রণে তৈরি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা মূলত নিষেধ। কেননা এটা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (৬)-এর ‘ক’ ধারার লঙ্ঘন। এসব পণ্য বিক্রির জন্য বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীর বিভিন্ন দণ্ডও নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু বাস্তবে এসব আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। ওয়ান টাইম প্লাস্টিক রিসাইকেল করা খুবই জটিল বা করা যায় না বললেই চলে। ব্যবহার করা ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের বড় একটা অংশ রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। পড়ে থাকা এসব প্লাস্টিক পণ্যের স্থান হয় নদী-খাল-বিলে-ড্রেনে। শহরের ড্রেনগুলোতে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যের ছড়াছড়ি। ফলে বছরের পর বছর পরিবেশে টিকে থেকে এসব ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করে চলেছে।

বর্তমান সময়ের আলোচিত দূষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্লাস্টিক দূষণ। প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে। সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্লাস্টিক দূষণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর। দূষণ বন্ধে রিসাইকেল প্রক্রিয়ার ওপর ব্যাপক জোর দেওয়া হচ্ছে। আর এই ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক দূষণের মধ্যে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক দূষণ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জ্ঞাত-অজ্ঞাতভাবে বর্তমান প্রজন্মের বড় একটা অংশ ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের প্রতি ঝুঁকছেন। যে প্রজন্মের তরুণ-যুবকদের দূষণরোধে শামিল হওয়ার কথা, তারাই কিনা দূষণ বিস্তারে ভূমিকা রাখছে! মাদকের থেকে ভয়াবহ এই প্লাস্টিক দূষণ। প্লাস্টিকের ক্ষতিকর কণা ধীরে ধীরে নীরবে মানবদেহে বিভিন্ন রোগের বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করে। সময় এসেছে প্লাস্টিক দূষণ তো বটেই বর্তমান সময়ের আলোচিত ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধে সচেতন হওয়ার। ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশও আছে। কিন্তু কে মানে কার কথা! দেশে-বিদেশে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে জোর দাবি ওঠেছে। ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের দূষণ বন্ধে দুইটি উপায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে—এক, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং দুই, পরিবেশ আইনের যথাযথ প্রয়োগ।

জনসাধারণের মধ্যে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বোঝাতে হবে। যাতে ব্যবহারকারী ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে। অপরদিকে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। মানবস্বাস্থ্য রক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা ও সবার টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকল্পে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহারকে এখনই ‘না’ বলতে হবে।

 

লেখক : সদস্য

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads