• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : কিছু স্বপ্ন কিছু প্রশ্ন

  • প্রকাশিত ০৭ জানুয়ারি ২০২১

আব্দুল হাই রঞ্জু

 

 

 

শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন নিয়ে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। পাকিস্তানি ২২ পরিবারের শোষণের বিরুদ্ধে বাংলার ছাত্র, যুব, জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক থাকার আমারও সৌভাগ্য হয়েছিল। যেদিন বিভিন্ন দাবিতে স্কুল-কলেজের ছাত্ররা মিছিল বের করত, সেদিন স্কুলের ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে হুড়মুড় করে দৌড়ে ওই মিছিলে শামিল হয়ে ছুটতাম অন্য কোনো স্কুলের সামনে। সে কি এক অনুভূতি! তেমন কিছু না বুঝলেও ছাত্র-জনতার মুক্তির স্লোগানে শামিল হয়ে কতদিন যে এভাবে ক্লাস রুমের বাইরে চলে আসছি, তা হয়তো আজ আর হুবহু স্মরণে নেই। তবে পাকিস্তানি ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান, শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার দাবির কথা আজো ভুলিনি। স্বপ্ন ছিল দেশ স্বাধীন হবে, শোষণ বঞ্চনা থাকবে না, দুঃশাসনের বিদায় হবে, দেশের গরিব-দুঃখী, মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত হবে। যে স্বপ্ন নিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গোটা বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতাযুদ্ধে রূপ নেয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালির রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করি আমাদের মহান স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয় আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পূরণের দ্বারপ্রান্তে আমরা দাঁড়িয়ে। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পালিত হবে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্বই আজ বিপর্যস্ত। এই ভাইরাসের কাছে অসহায় হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। যার কবল থেকে আমরাও মুক্ত নই। ইতোমধ্যে করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন বা টিকার ব্যবহার উন্নত দেশগুলোতে শুরু হয়েছে। কিন্তু বাঙালিদের ভাগ্যে সে সুযোগ কখন কীভাবে আসবে, তা এখনো অনেকটাই অনিশ্চিত। তবে অতিসম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি টিকার ডোজ পাওয়া যাবে। দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৭০ লাখ। অর্থাৎ প্রায় ১৭ কোটি। বিশাল জনগোষ্ঠীর সবার ভাগ্যে কখন কোন পদ্ধতিতে টিকার ডোজ দেওয়া হবে, তা এই মুহূর্তে বলাও কঠিন। তবে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের টিকা যেন প্রতিটি মানুষ সমান সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। একমাত্র করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক দিবস যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হয়নি। ফলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কী ধরনের উৎসব পালিত হবে, তাও বলা মুশকিল। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর স্বাদ যেসব বাঙালি উপভোগ করতে পারবে, বলতে হবে এটা তাদের জীবনের পরম সৌভাগ্য। কারণ ইতোমধ্যে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতাকামী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের কত মানুষকে যে বিদায় নিতে হয়েছে, তার হিসাব সঠিকভাবে এখানে উপস্থাপন করাও সম্ভব নয়। তবে দুর্ভাগ্য হচ্ছে, দীর্ঘ ৫০ বছরেও বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন, স্বাধীনতার চেতনার বাস্তবায়ন হয়নি। সে স্বপ্ন আজো পূরণ হয়নি। বরং দুর্নীতি, শোষণ, বঞ্চনা, লুটপাট, দুঃশাসন বেড়েছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন তো হয়নি, উল্টো স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রায়ত্ত করা সব দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতাসীনরা বিরাষ্ট্রীয়করণ করে স্বাধীনতার মূল চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছে। এমনকি স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ যেভাবেই হোক তিন মেয়াদে এখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এই দীর্ঘ সময়ে শোষণ, বঞ্চনা, লুটপাট, দুঃশাসন বেড়েছে। বিএনপি সরকার এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাটকল আমদমজিকে বিদেশি প্রিসক্রিপশনে ধ্বংস করেছে। আর শেখ হাসিনার সরকার একযোগে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলকে বিরাষ্ট্রীয়করণ করে পানির দামে বেসরকারি খাতে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ কথা ছিল, কলকারখানা হবে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থ সুরক্ষা হবে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বেকারত্ব থাকবে না। শিক্ষা হবে সর্বজনীন ও বৈষম্যহীন। চিকিৎসা, বাসস্থান সবার জন্য সমানভাবে নিশ্চিত হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা ৫০ বছর অতিক্রান্ত করেছি সত্য; কিন্তু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। শ্রমিক শ্রেণি হারিয়েছে তাদের সত্তা আর স্বাধীনতা। যারা শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা আইএলও নিয়মে বেতন-ভাতা পান না। প্রতিবাদ করলে চাকরিচ্যুতি এখনো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কৃষক শ্রেণির অবস্থা আরো খারাপ। গত ৫০ বছরে কৃষকের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মধ্যবিত্ত শ্রেণি আজ বিলুপ্তির পথে। কৃষক শোষণে শোষণে জমিজমা হারিয়ে হয়েছে বর্গাচাষি কিংবা ভূমিহীন। আর নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো জমি জিরাত হারিয়ে হয়েছে বস্তিবাসী। যারা বেঁচে থাকার তাগিদে আশ্রয় নিয়েছে নগর-মহানগরের সুরম্য অট্টালিকার নিচে। আর এখন যেসব কৃষক জমিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চাষাবাদ করে তাদের উৎপাদিত ফসলের প্রকৃত মূল্য নিশ্চিত হয় না। পানির দামে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হয়। তাদের জীবনের কালো রাত আর প্রভাত হয় না। অথচ খাদ্য নিরাপত্তা আজ অনেকাংশেই নিশ্চিত হয়েছে। কৃষকের অভাবনীয় সফলতা দেশকে আজ স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। কিন্তু কৃষকের অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং এখন দেশের আখচাষিদের আখ বিক্রির নির্ধারিত স্থান রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলসমূহ চালু করা হবে না মর্মে ক্ষমতাসীনদের ঘোষণা আসে। তখন মনের দুঃখে-কষ্টে আখ ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেয় রংপুর চিনিকলের ক্যাচমেন্ট এলাকার আখচাষি।

পাটচাষিদের অবস্থাও তথৈবচ। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। অথচ খালেদা জিয়ার চারদলীয় জোট সরকার যখন এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজিকে বিদেশি প্রেসক্রিপশনে বন্ধ করেন, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রায়ত পাটকল বন্ধের তীব্র প্রতিবাদ করে ঘোষণা করেছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শিল্পকে আধুনিকায়ন করে সমৃদ্ধ করা হবে। আওয়ামী লীগ ঠিকই ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু শেখ হাসিনার ঘোষণার আর বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার দল রাষ্ট্রায়ত পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন তো করেনি, উল্টো রাষ্ট্রায়ত সকল পাটকলকে একযোগে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিদায় দেওয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাককালে বাঙালি জাতির আজ একটাই প্রশ্ন, এটাই কি স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল? কথা ছিল, সব মিল-কারখানাকে জাতীয়করণ করা হবে। ঠিকই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই দেশীয় ভারী শিল্পকে রাষ্ট্রায়ত করেছেন। আর তারই উত্তরসূরি দল এখন হাঁটছে উল্টো পথে, যা ভাবতে আমাদের কষ্ট হয়!

হয়তো বলবেন, লোকসান গুনতে গুনতে সরকার আজ ক্লান্ত। কিন্তু লোকসান বন্ধে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ না নিয়ে বন্ধ করা অজুহাতের নামান্তর বটে। স্বাধীনতার পর ৪৯ বছরে সে উদ্যোগ কোনো ক্ষমতাসীন দলই নেননি। উল্টো বিএনপিসহ আওয়ামী লীগ সরকার একে একে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলকে বন্ধ করে বেসরকারি খাতে দেওয়ার আয়োজন করেছে। এটাই স্বাভাবিক, কারণ আমগাছে কেউ কাঁঠালের প্রত্যাশা করলে যেমন পূরণ হবে না, তেমনি একটি পুঁজিবাদি রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনরা সরকারি নয় বরং বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করার নীতি আদর্শকেই বাস্তবায়ন করবে, এটাই ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। ফলে বর্তমান সময়ে বেসরকারি খাতকে সমৃদ্ধ করে বাহ্যিক চাকচিক্যের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি দৃশ্যমান করলেও প্রকৃত অর্থে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর জীবন মানের সমৃদ্ধি আসবে না। উল্টো সরকারিভাবে কর্মসংস্থানের দ্বার সংকুচিত হতেই থাকবে, আর বেসরকারি খাতে সীমিত পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও সেখানে আইএলও প্রদত্ত মজুরি-ভাতা শ্রমিক-কর্মচারীদের ভাগ্যে জুটবে না। শুধু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার মতো বেতন-ভাতায় তাদের কাজ করতে হবে। অর্থাৎ শ্রম শোষণ তো বন্ধ হবেই না, উল্টো শ্রমিকের রক্ত ঘামে মেশা শ্রমের মূল্যে দেশের গুটিকতক বেসরকারি খাতের মালিক অল্প সময়ে ফুলে-ফেঁপে আরো মোটা কলাগাছ হবে। বিপরীতে শোষিত, বেকার মানুষের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এটাই পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার চরিত্র।

অথচ একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন নিয়ে বাঙালি জাতি বুকের রক্ত ঢেলে দেশটি স্বাধীন করেছিল। শুধু পাটকল শিল্পই নয়। দেশের চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করা হয়েছে। এখন বাসাবাড়িতে, খামারে গরু-ছাগলের চাষ করে দেশের আমিষের জোগান নিশ্চিত করা হলেও একদিকে গরু-ছাগলের মাংসের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে চামড়ার দাম একেবারেই নেই বললেই চলে। এমনকি কোরবানির ঈদে জবাইকৃত পশুর চামড়ার দাম কয়েক বছর ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। যে চামড়ার পয়সা দেশের গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলি বণ্টন করা হয়। সে টাকা থেকে তারা এখন বঞ্চিত। তাহলে এসব চামড়া কি নদীতে যায়, নাকি ট্যানারিতে যায়? অবশ্যই ট্যানারি শিল্পের মালিকরা অনেক কম দামে সে চামড়া কিনে নিয়ে চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত করে দেশে-বিদেশে বিপণন করছে। খেয়াল করুন, এক জোড়া চামড়ার জুতা কিংবা স্যান্ডেলের দাম কি এক টাকা কমেছে, না বৃদ্ধি পেয়েছে? উত্তর হচ্ছে, এখন এসব চামড়া পণ্যের দাম কল্পনাতীতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাহলে চামড়া শিল্পের মালিকরা একদিকে কম মূল্যে শ্রমিক খাটাচ্ছে, অন্যদিকে কম দামে কাঁচা পণ্য কিনে বেশি দামে পাকা পণ্য বিক্রি করছে। তাহলে এটাকে লাভ বলব না লুট বলব? এটাই পুঁজিবাদী অর্থনীতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

এভাবে দেশে পাটকল, চিনিকল, চাল, কল চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করা হয়েছে। আবার শিক্ষা খাতে সর্বজনীন শিক্ষার বদলে শিক্ষার বাণিজ্যকরণ হয়েছে, শিক্ষা ক্ষেত্রে এমনভাবে বেসরকারীকরণ হয়েছে, যেখানে দেশের এই বিত্তশালীরাই বিভিন্ন নামে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে মাত্রাতিরিক্ত খরচে পড়াশোনা করতে ভুক্তভোগীদের বাধ্য করছেন। ফলে সন্তানদের পড়াশোনার স্বার্থে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে, যা কিছু আছে তাই বিক্রি করে বাবা-মা সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। যেখানে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে হয়তো কর্মসংস্থানের সুযোগ জোটে ভাগ্যের জোরে। আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা দুই-চারটি নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্যগুলোয় পাস করা শিক্ষার্থীদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। ফলে বেকারত্বের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। আর শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের হতাশা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি জীবন উচ্ছন্নে চলে যাচ্ছে। অনেকেই বিপথগামী হচ্ছে। কম-বেশি প্রতিটি পরিবারে অশান্তির কালো ছায়াই শুধু বাড়ছে। স্বল্প পরিসরে এত কিছু লেখার সুযোগ কম। তবে এটুকু বলব, ভুক্তভোগীরাই জানেন বাস্তব অবস্থা কী? অথচ সরকার প্রতিটি জেলা শহরে একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করলে, শিক্ষা ও চিকিৎসার দ্বারা সম্প্রসারিত হতো। কিন্তু সরকার এসব দিকে কোনো দৃষ্টিই দেয়নি।

অথচ স্বপ্ন ছিল দেশ স্বাধীন হবে। মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান নিশ্চিত হবে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি, উল্টো মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর বাণিজ্যকীকরণ এমনভাবে হয়েছে, যেখানে নব্য ধনিক শ্রেণির সংখ্যা বেড়েছে। পাকিস্তানি কোটিপতি ২২ পরিবারের বদলে এখন দেশে ৫৯ হাজার কোটিপতির জন্ম হয়েছে, যা খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। সেখানে আমাদের আর কি বলার থাকতে পারে? তবে এটুকুই বলতে চাই, বাঙালি জাতির অহংকার স্বাধীনতা আর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা।

তাই যখন দেখি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, নাগরিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে শুরু হয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটিলাইট কিংবা গ্রাম হবে শহর ইত্যাকার বিষয় আমাদের স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণের বীজ বপন করে। বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই দাবি, পিতার স্বপ্নগুলো পূরণে আপনি শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। তবেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সার্থক হবে।

 

লেখক : সমাজকর্মী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads