• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

শিক্ষা

ফের দেশ অচলের পরিকল্পনা

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ০৪ মে ২০১৮

regular_2032_news_1525364334_1

‘ভাই আমাদের স্বপ্ন এমনি মরেনি। আমাদের ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর আশানুরূপ ফলাফল এমনি এমনি মাটি হয়নি। আমাদের ১২ বছরের অব্যর্থ চেষ্টা ধ্বংস করা হয়েছে। তাই আমি যাচ্ছি। আপনি যাচ্ছেন তো?’ চলমান উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার কাঙ্ক্ষিত ফল করতে না পারার আশঙ্কা থেকে এভাবেই সারা দেশে আন্দোলনে নামার ডাক দিয়েছিল একদল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

ঢালাওভাবে পাস এবং গ্রেস নম্বরের দাবিতে তারা গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে এবং আজ শুক্রবার ঢাকা থেকে আন্দোলনের নামে দেশ অচলের পরিকল্পনা করেছিল। এ উদ্দেশে ফেসবুকে একটি গ্রুপ চালু করে সাত দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানানো হয়েছিল। এই পেজে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী নানা রকম মন্তব্য করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গীকার করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত নির্দেশনা এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টি আপাতত স্তিমিত হলেও গ্রুপটিকে কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া কোটা আন্দোলনের মতো সারা দেশে অস্থিরতা তৈরিই ছিল এদের মূল লক্ষ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২০ এপ্রিলের পর থেকে শিক্ষার্থীরা দল পাকাতে শুরু করে। ফেসবুকে মেসেজ আদান-প্রদানের মাধ্যমে অন্য শিক্ষার্থীদের ক্ষিপ্ত করে তোলে এরা। এজন্য ফেসবুকে ‘অধিকার আদায় আন্দোলন (HSC 2K18)’ নামে একটি গ্রুপ চালু করে আন্দোলনের দিনক্ষণ ও দাবি জানানো হয়েছিল। এর মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

কিন্তু বিষয়টি আগেভাগে আঁচ করতে পেরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে। সেখান থেকে সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপারদের (এসপি) কড়া নির্দেশনা পাঠিয়ে বলা হয়, ছাত্ররা যেন রাস্তায় নামতে না পারে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশও। শনাক্ত করা হয় ‘অধিকার আদায় আন্দোলন’-এর ৪ অ্যাডমিনকে। পুলিশ ওই চারজনকে আটক না করলেও তাদের বাবা-মাকে সাফ বলে দেয়, এ বিষয়ে যদি আন্দোলন হয় তাহলে এর খেসরাত আপনাদের দিতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ফেসবুকে ‘অধিকার আদায় আন্দোলন’ নামে একটি গ্রুপ তাদের পছন্দ মতো ফলাফলের জন্য সারা দেশে রাস্তায় নামার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আপাতত বিষয়টির সুরাহা হলেও তাদের প্রতি কড়া নজর রাখা হচ্ছে। গ্রুপটিতে প্রায় ৩ হাজার সদস্য রয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান জানান, বুধবার রাত থেকে সারা দেশের প্রশাসনকে ‘অ্যালার্ট’ করা হয়েছে। ফেসবুকের ‘অধিকার আদায় আন্দোলন’ নামের গ্রুপের ৪ অ্যাডমিনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের পেছনের ব্যক্তিদের এখন খোঁজা হচ্ছে। তার মতে, নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন অনেক কিছুই সামনে ঘটবে, তবে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে তিনি জানান।

‘অধিকার আদায় আন্দোলন’ ফেসবুকে বলছে,  ‘৩মে ২০১৮ ইং আমরা নামছি সারা দেশ থেকে, পরীক্ষার পর কলেজ ড্রেসে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে। সারা দেশকে শুধু এটা জানাতে যে, আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। ডিসিশন ফাইনাল।’ বার্তায় কোথায় কোথায় আন্দোলন হবে তার স্থানও ঘোষণা করেছিল গ্রুপটি। এগুলো হচ্ছে ‘খুলনায় শিববাড়ি চত্বর, সিলেটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বরিশালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রংপুর প্রেস ক্লাব, রাজশাহীর জিরো পয়েন্ট, ময়মনসিংহ টাউনহল, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, যশোরে দড়াটানা চত্বর, দিনাজপুর প্রেস ক্লাব, গাজীপুরের টঙ্গী কলেজ গেটের সামনে। আর আজ শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন হওয়ার কথা ছিল। তারা ফেসবুকে জানায়, ঢাকাতে ৩ তারিখে পরীক্ষার পর সব এলাকা থেকে একত্রে এক বিকালে সমবেত হওয়া সম্ভব নয়। তাই শুধু ঢাকায় একদিন পরে আন্দোলন শুরু হবে।

ফেসবুকে এই গ্রুপটি তাদের দাবির ফিরিস্তি দিয়ে বলেছে, ভুল প্রশ্নের জন্য নিঃশর্ত নম্বর দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তিতে এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএ থেকে নম্বর যোগ শিথিল করতে হবে। এমসিকিউ ও সিকিউ-তে গ্রেস নম্বর দিতে হবে। যারা ১ বিষয়ে অনুপস্থিত অর্থাৎ সামান্য দেরিতে আসার কারণে যাদের পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, তাদের অন্তত পাস মার্ক (৩৩%) দিতে হবে। আগামী বছর থেকে মানসম্মত রুটিন দিতে হবে। নির্ভুল প্রশ্ন নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের অমানবিক আচরণ ও অকথ্য গালি পরিহার করতে হবে। ফেসবুকে তারা আরো বলেছে, মেসেজটি পোস্ট, গ্রুপ, কমেন্ট, শেয়ার, যে যেভাবে পারেন ছড়িয়ে দেবেন । সঙ্গে না থাকেন জোর করব না, কিন্তু বাধা দেবেন না।

চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছ্বাস দেবনাথ নামের এক পরীক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, ‘দেখা হবে রাজপথে অধিকার আদায় করেই ছাড়ব।’ খুলনা থেকে কাজী আয়েশা আক্তার লেখেন, পরীক্ষা দেওয়ার পরিবেশ না পাওয়ায় এই প্রতিবাদ হচ্ছে। তিনি লেখেন, আমরা অত্যাচারিত হয়েছি তাদের জন্য যারা প্রশ্ন ফাঁস করে। কিন্তু তারা কোনো শাস্তি পায়নি। আমরা যারা ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছি আমাদের প্রস্তুতির সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ দিন। এটা ঠিক হয়নি।  আপনারা যারা বিপক্ষে আছেন থাকেন। আমরা থাকতেছি না চুড়ি পরে ঘরে বসে। ফারিয়া হোসাইন নামের একজন শিক্ষামন্ত্রীর ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। এই ব্যক্তির গায়ে কারো বদ দোয়া লাগে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads