• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
ইউটার্ন ঢাবি কর্তৃপক্ষের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

ইউটার্ন ঢাবি কর্তৃপক্ষের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি 
  • প্রকাশিত ১২ জুলাই ২০১৮

কথাগুলো বলার পর তিন রাতও পার হয়নি। এর মধ্যেই পুরো ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাল্টে ফেলেছে আগের কথা। সব দোষ চাপানো হয়েছে গণমাধ্যমের ওপর। তারাই খণ্ডিত খবর প্রকাশ করায় নাকি  এই গোল বেঁধেছে।

গত ৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান কোটা আন্দোলনকারীদের জঙ্গির সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দেন। এর পরই তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। পরিস্থিতি বুঝে উপাচার্য বেমালুম আগের কথা চেপে গিয়ে বলেন শিক্ষার্থীদের তিনি জঙ্গি বলেননি।

গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কমিটি বলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শুধু পড়ুয়াদের জন্য উন্মুক্ত। এখানে বহিরাগতরা ঢুকতে পারবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেওয়া হবে। আর উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে নিরাপত্তা চৌকি বসবে। এসব উদ্ভট বক্তব্যের প্রতিবাদ শুরু হলে আবারো ‘ফাঁপড়ে পড়ে’ কর্তৃপক্ষ এবং যথারীতি অস্বীকার করে বসে।

গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে পুরোপুরি ‘ইউটার্ন’ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয় আগের বিবৃতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খণ্ডিতভাবে এসেছে। নতুন বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে দেশের কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খণ্ডিতভাবে তথ্য প্রচারের ফলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কারো প্রবেশ বা গমনাগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে উৎসাহিত না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’ এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ ক্যাম্পাস পরিচালনার লক্ষ্যে যা করণীয়, তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা চেয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে মঙ্গলবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে পূর্ব অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবস্থান, চলাচল এবং যেকোনো ধরনের কার্যক্রম বন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। শুধু তিনিই নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকও এমন ‘অদ্ভুত ও উদ্ভট’ কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এটি করতে পারে না।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটা বড় সম্পদ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় অবরুদ্ধের খবরটা দেখে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কী করে অবরুদ্ধ থাকে?’ ঢাবির সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সারা দেশবাসী যেভাবে যুক্ত থাকেন সেখানে এ বিশ্ববিদ্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নয়। কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে, সংঘর্ষ হচ্ছে এগুলো পটভূমি হিসেবে কাজ করছে। যারা কোটা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আর যারা এই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটা ট্যাকল দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল রুলস রেগুলেশন আছে। সেই অনুযায়ী সেগুলোর বিচার, তদন্ত, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু সেটিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধে যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে সেটা কি দাঁড়ায়?’

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঢাকা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো পাবলিক রোড গেছে। এখান দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ লোক হেঁটে, গাড়িতে, বাসে, মোটরসাইকেলে পার হচ্ছে। তারা এখন এই পথ পাড়ি দিতে কোথা থেকে পূর্বানুমতি নেবে? এ ছাড়া বহিরাগত বলতে কী বোঝানো হয়েছে সেটাও স্পষ্ট করতে হবে। পূর্ব অনুমোদন কে দেবে, কোন প্রক্রিয়ায় হবে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধ্যাপক সিদ্দিকের এসব প্রশ্নের জবাব না দিয়ে গণমাধ্যমের ওপর দোষ চাপিয়ে পুরো ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গতকাল বুধবারই নতুন বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বহিরাগতের বিষয়টি নেই। তবে প্রাবন্ধিক ও গবেষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন, অস্বাভাবিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে এবং অস্বাভাবিক অবস্থা কী, কী নয়, এগুলো বুঝবার দরকার নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কর্মকাণ্ডে গতকাল দিনভর উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস’ দাবিতে মানববন্ধন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটকদের মুক্তি দাবিতে এদিন অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষণশীল করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। 

নিরাপদ ক্যাম্পাস দাবিতে মানববন্ধন : নিরাপদ ক্যাম্পাস ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দাবিতে দুপুরে মোকারম ভবনের সামনে মানববন্ধনে প্রায় ছয় শ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এতে সংহতি প্রকাশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক বলেন, আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করে আসছি। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করতে প্রশাসন তৎপর নয়। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তামজীমউদ্দিন খান প্রমুখ।

মশিউরের মুক্তি দাবিতে অবস্থান : কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মশিউরের মুক্তি দাবিতে গতকাল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তার সহপাঠীরা। এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা মশিউরের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস করব না। প্রসঙ্গত, মশিউরকে গত ২ জুলাই মারধর করে পুলিশে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবন ভাঙচুরের মামলায় গ্রেফতার দেখায়। গত মঙ্গলবার তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

রক্ষণশীল না করার দাবি : নানা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষণশীল করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। গতকাল মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে জোট নেতারা নিরাপত্তার অজুহাতে আন্দোলন দমনে ‘আরোপিত সব অগণতান্ত্রিক নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহারেরও দাবি জানান। এসব দাবি আদায়ে আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় মশাল মিছিল হবে। এ সময় ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক আলমগীর সুজন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads