• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
উচ্চশিক্ষার প্রসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা

ফাইল ছবি

শিক্ষা

উচ্চশিক্ষার প্রসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে চালু হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যে ৩০ বছর ছুঁই ছুঁই করছে। জানা যায়, জনসংখ্যার অনুপাতে দেশে উচ্চশিক্ষার চাহিদার তুলনায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অপ্রতুল, পর্যাপ্ত আসন সংখ্যা না থাকা এবং জাতীয় শিক্ষা বাজেটে উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ ঘাটতি থাকার কারণে একসময় দেশে উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণে স্থবিরতা দেখা দেয়। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ আর উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সরকারকে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেয়। ইউজিসি সেক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান এবং জাপানের আদলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে বলে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯২ সালে দেশে প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার গুরুত্বকে অনুধাবন করেছিলেন। সে লক্ষ্যে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১০-এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার  সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিধিবদ্ধ হয়।

বলতে দ্বিধা নেই দেশের উচ্চশিক্ষা বিস্তারের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, এখানে সেশনজট নেই। যদি ভালো অবকাঠামো ও যোগ্য শিক্ষক নিশ্চিত করা যেত, তাহলে শিক্ষার্থীরা কলেজে স্নাতক না করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতো। দেশে বর্তমানে ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। দেশে নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গজিয়ে উঠছে। পুরনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাড়াচ্ছে প্রোগ্রাম। কিন্তু ওসব প্রতিষ্ঠান আশানুরূপ শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। শিক্ষার্থী পেতে শিক্ষাবর্ষে কয়েক দফা ভর্তি কার্যক্রম চালালেও ওসব প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশি আসনই ফাঁকা থাকছে। ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৫৭ শতাংশ আসনই ফাঁকা ছিল। পূর্ববর্তী বছরগুলোয়ও একই অবস্থা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এক বিবৃতিতে বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। ভিন্ন চিত্র দেখা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই কোনো ধরনের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় না। তার পরও শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এক্ষেত্রে মৌলিক সুবিধাদি গড়ে না ওঠা, যোগ্য শিক্ষকের অভাব শিক্ষার্থী না পাওয়ার অন্যতম কারণ। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, দেশের ১০-১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলো খুবই ভালো করছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও ভালো। তবে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগই চলছে উল্টো পথে। মূলত গুণগত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারায় আসন অনুপাতে শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন ও নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের উদ্যোগে ‘ঢাকা ট্রিবিউন-বাংলা ট্রিবিউন বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং ২০১৯’ প্রকাশিত হয়েছে। এবারের র্যাঙ্কিংয়ে সর্বোচ্চ স্কোর পেয়ে প্রথম হয়েছে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ)। দ্বিতীয় হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি (ব্র্যাকইউ)। তৃতীয় অবস্থানে আছে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি (ইডব্লিউইউ)। র্যাঙ্কিংয়ে, নর্থসাউথ, ব্র্যাক ও ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির পরে স্বল্প ব্যবধানে যথাক্রমে আছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ও আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউন যৌথভাবে ২০১৭ সাল থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে আসছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০১টি হলেও ৩৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই র্যাঙ্কিংয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের কিছুর রয়েছে ইউজিসি অনুমোদনসংক্রান্ত জটিলতা। তবে বেশিরভাগই অন্তর্ভুক্ত না করার কারণ হচ্ছে, এগুলো খুবই নতুন এবং মাত্র এক অথবা দুটি বিভাগে তাদের মানদণ্ড সঠিক জায়গায় রয়েছে। তাই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু বিভাগ রয়েছে এবং এত বছরে প্রচুর স্নাতক তৈরি হয়েছে তাদেরই মূলত এই তালিকায় আনা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এক খবরে জানা গেছে, অবকাঠামো, নিজস্ব ক্যাম্পাস, শিক্ষার মান, অভিজ্ঞ শিক্ষকসহ নানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ছে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা। এ ছাড়া এমফিল ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যাও বাড়ছে। ইউজিসির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বোচ্চসংখ্যক পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক রয়েছে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়া তালিকার চতুর্থ স্থানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, পঞ্চম স্থানে আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন মনে করে পূর্ণকালীন শিক্ষকের চেয়ে খণ্ডকালীন পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। পূর্ণকালীন শিক্ষকের সংখ্যা বেশি হলে শিক্ষার্থীরা বেশি উপকৃত হতো। তবে প্রতিবছর যে হারে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে তা একাডেমিক শিক্ষার জন্য বেশ মঙ্গলজনক। শিক্ষাবিদদের মতে, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান মূল্যায়নের সময় এসেছে। তাই এসব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কঠোর কোনো উদ্যোগ বা মূল্যায়ন এমনকি গলদগুলো চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও মনোযোগ দেওয়ার এখনোই মোক্ষম সময়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads