• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
স্বপ্ন ছিল বড়মাপের মানুষ হবে

ছবি : সংগৃহীত

মুক্তমত

স্বপ্ন ছিল বড়মাপের মানুষ হবে

  • মাহমুদুল হক আনসারী
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০১৯

বাংলার একটি হাসি-খুশি মুখের নাম নুসরাত জাহান। রাফি তার ডাকনাম। রাফি ছিল পরিবারের একমাত্র কন্যাসন্তান। পরিবার এবং তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সে একজন বড়মাপের মানুষ হবে। রাফি পরিবারের কাছে যেমন প্রিয় ছিল, একইভাবে সহপাঠী আশপাশের সমাজের অন্যদের কাছেও প্রিয় ও আদরের ছিল। জানা যায়, রাফি পড়ালেখায় খুবই মনোযোগী ছিল। মাদরাসার ক্লাস পরীক্ষায় সে সবসময় ভালো রেজাল্ট করত। রাফিদের পরিবারে রাফি ছিল অহঙ্কারের একটি নাম। কিন্তু রাফি তার আশা পূরণ করতে পারল না। রাফির ওপর কু-নজর পড়ল সেই মাদরাসার কুখ্যাত নরঘাতক অধ্যক্ষের। জানা যায়, এ কুখ্যাত অধ্যক্ষ আরো অনেক ছাত্রীর সঙ্গে কু-সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাফিদের মতো অনেক প্রতিভা এসব নরপশুর লালসার শিকার হয়ে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করতে পারছে না। হায় শিক্ষক নামের কলঙ্ক?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদের স্পিকার সবাই নারী। গৌরবের সঙ্গে তারা শাসন উন্নয়নে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য নারী গৌরব ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে নিষ্ঠা, পরিশ্রম, সততার সঙ্গে জাতিকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নারীর ক্ষমতায়ন পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যন্ত অনেক সম্প্রসারিত। মহান সংসদে নারী সদস্যরা অত্যন্ত বুদ্ধিবৃত্তিক তীক্ষ্নতার সঙ্গে রাষ্ট্রের মহান দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষা, সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নয়নে নারীজাতির অবদান ক্রমেই এগিয়ে চলেছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ নারীশিক্ষায় ও অগ্রগতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। নারী যখন সবদিকে এগিয়ে চলছে, তখন এ জাতিকে পিছিয়ে রাখতে একটি কুখ্যাত ষড়যন্ত্রকারী নরপশুর দল এ ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে ওঁৎ পেতে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেশের আপামর জনগণের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে রাফির হত্যাচেষ্টার সংবাদে প্রধানমন্ত্রী তাকে বাঁচাতে তাৎক্ষণিক সব রকম চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশে যত ধরনের উন্নত চিকিৎসা ছিল, সব চিকিৎসার সুযোগ তাকে দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, নুসরাত জাহান রাফিকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না।

সমাজ-রাষ্ট্র আজ গভীরভাবে মর্মাহত। রাফির জন্য শোকের ভাষা আমার জানা নেই। কাঁদছে পরিবার, কাঁদছে সমাজ, কাঁদছে  রাষ্ট্র। আমরা এখন বিচার দেখতে চাই। অতীতে আরো বহু নারীকে এভাবে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু সমাজ তাদের সঠিক বিচার দেখতে পায়নি। সেজন্য সুশীল সমাজ, আপামর জনগণ উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। যথাসময়ে যদি আইনের আওতায় এনে এসব নরপশুর বিচার করা হতো, তাহলে হয়তো নতুন নতুন রাফিদের এভাবে নির্মম হত্যার শিকার হতে হতো না। যত দ্রুত সম্ভব সর্বোচ্চ ও প্রকাশ্য শাস্তি দিয়ে কুখ্যাত এসব মানুষ নামক নরপশুর বিচার দেখতে চায় সমাজ। অবিলম্বে স্বল্প সময়ে কুখ্যাত অধ্যক্ষের নামে কলঙ্ক নরপশু ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের কঠোর বিচার দেখতে চায় জাতি।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads