• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মুক্তমত

সিরিয়াযুদ্ধে শান্তির পতাকা উড়বে কবে

  • প্রকাশিত ২৯ আগস্ট ২০১৯

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ইতিহাস বিশ্বের নতুন কোনো ঘটনা নয়। একসময় ইসলামী সাম্রাজ্য বিস্তারে অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি ছিল দেশটি। কিন্তু অতীতের সেই সোনালি দিন বর্তমানে শুধু স্মৃতির অংশ। ভৌগোলিকভাবেও সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যেখানে আছে উর্বর সমতল ভূমি, পাহাড়-পর্বত, সবুজ প্রকৃতি ও তেল-গ্যাসের মতো মহামূল্যবান সম্পদ। ১৯৪৬ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করা দেশটির আয়তন প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। এখানে শিয়া, সুন্নি, খ্রিস্টান, কুর্দি জনগোষ্ঠীর লোকজন বসবাস করে। তবে মুসলমানদের ভেতরে সুন্নিরাই এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। নানান ইতিহাস, ঐতিহ্যগত ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশটি আজ যুদ্ধের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে।

মূলত সিরিয়াযুদ্ধের সূত্রপাত ২৬ জানুয়ারি ২০১১ সালে। সেদিন তিউনিসিয়ায় হাসান খালি আকলেহ নামক এক যুবক নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দেন। যার ফলে আরববসন্তের ঢেউ কিছুটা আঁচড় কাটে সিরিয়াতেও। তখন সরকারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। এই আন্দোলন দমাতে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রের বাইরে গেলে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল দীর্ঘ ৯ বছরের অধিক সময় অতিক্রম হলেও আজো সিরিয়াযুদ্ধের ইতি ঘটেনি। ফিরে আসেনি শান্তি। বরং এ সময় উত্থান ঘটেছে আইএসসহ বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি সংগঠনের। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বেড়েছে বহির্বিশ্বের। ইসরাইল সিরিয়ার গোলান মরুভূমি দখল করে বসতি স্থাপন করা শুরু করেছে ইতোমধ্যে। তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত আফরিন এলাকা দখল করে নিয়েছে। বিশ্ব পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী দলের কাছে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে আরেক পরাশক্তি রাশিয়া আসাদ সরকারকে সব ধরনের সাহায্য দেওয়ার মাধ্যমে বড় ভাইয়ের মতো আগলে রাখছে, যা বিশ্বে তাদের নতুন শক্তির আগমন বার্তা বহন করে। এদিকে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে এবং শিয়াপন্থির বিজয় নিশ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। যার চরম মূল্য দিতে হচ্ছে সিরিয়ার বেসরকারি নাগরিকদের।

সিরিয়াযুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ, আরব লিগ, ইরান, রাশিয়া বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিলেও তা আজো আলোর মুখ দেখেনি। যার ফলে সিরিয়াযুদ্ধ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সিরিয়া গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। এর বেশিরভাগ বেসরকারি নাগরিক। ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে ১ কোটির অধিক মানুষকে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ সিরীয় নাগরিক। একসময় সিরিয়া ছিল খাদ্য ও উৎপাদিত পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। সে দেশ আজ যুদ্ধের বেড়াজালে খাদ্য আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বেকার সমস্যা আকাশছোঁয়া। এখন বেকারের সংখ্যা শতকরা পঞ্চাশ জন। শুধু তাই নয়, দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে শতকরা ৮২ ভাগ মানুষ। ২০১৮ সালে সিরিয়ার অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, জিডিপি ৫০.২৮ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১৩ সালে ছিল ৬১.৯ বিলিয়ন ডলার।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আজ ঋণাত্মক পর্যায় অর্থাৎ মাইনাস ৩৬.৫ ভাগ। যুদ্ধের আগে দৈনিক ৩ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন হতো, সেখানে এখন হয় মাত্র ২০ হাজার ব্যারেল। শুধু তেল উৎপাদনে বার্ষিক ক্ষতিকর পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন ডলার। সিরিয়ার মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপক বেড়েছে। বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির হার ২৫%-এর অধিক। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ওই সমীক্ষা থেকে এটা প্রতীয়মান যে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার অর্থনীতি আজ চরম বিপর্যয়ের মুখে। অন্যদিকে সিরিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। দেশে ৭৫টি হাসপাতালের মধ্যে এখন রয়েছে ৩০টির কম। সেগুলো আবার নিরাপদ নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, দালানকোঠা, গোলাবারুদের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন।

সিরিয়াযুদ্ধ দীর্ঘদিন চলার পেছনে কোনো পক্ষ ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা অনত্যম কারণ। বলা হয়, ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর একবিংশ শতাব্দীতে সিরিয়াযুদ্ধ সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, যা আজ অবধি চলমান। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ কোথায় গিয়ে পৌঁছায়? তবে যত তাড়াতাড়ি সিরিয়াযুদ্ধের অবসান ঘটবে এবং শান্তির পতাকা উড়বে, তত দ্রুত সিরিয়াবাসী তাদের সুখস্মৃতি ফিরে পাবে।  

 

মো. রাশেদ আহমেদ

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads